আবদুল্লা বংশ 'কাশ্মীরের পাপী', প্রত্যুত্তর নরেন্দ্র মোদীর
গতকাল শ্রীনগরে একটি জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা বলেছিলেন, "ভারত ধর্মবিদ্বেষী হবে, ভাবতেই পারছি না। তেমন যদি হয়, তা হলে কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে থাকবে না। কিছুতেই থাকবে না। একজন বিজেপি নেতা বলেছেন, নরেন্দ্র মোদীকে যারা ভোট দেবে না, তাদের পাকিস্তানে চলে যাওয়া উচিত। আমি বলছি, যারা ওঁকে ভোট দেবেন, তাঁদের সমুদ্রে ঝাঁপ দেওয়া উচিত। আমরা পাকিস্তানে কেন যেতে যাব? এটা আমাদের ঘর। আমরা এর মালিক।"
এই মন্তব্যের জেরে সোমবার কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বিজেপি। আসরে নামেন খোদ নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, "আমাদের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটা রয়েছে বলেই ভারত ধর্মনিরপেক্ষ এমন নয়। হাজার হাজার বছর ধরে ভারত 'সর্বপথ সম্ভব' দর্শনে বিশ্বাস করে। নানা মত সঙ্গে নিয়ে চলাই ভারতের ঐতিহ্য। ভারতই হল একমাত্র দেশ যারা বলে, সত্যি একটাই। নানা মতকে ব্যক্ত করতে পারা। ভারত বলেছে, 'সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ সর্বে সন্তু নিরাময়ঃ সর্বে ভদ্রাণি পশ্যন্তু মা কশ্চিদদুঃখভাগভবেত', অর্থাৎ সবাই সুখী হোক, সবাই হোক নীরোগ, সবার মঙ্গল হোক, কেউ যেন দুঃখ না পায়। ভারত কখনও বলেনি শুধু হিন্দুরা সুখে থাক, ভারত চেয়েছে সবাইকে সুখী রাখতে।"
এখানেই না থেমে তিনি বলেন, "ভারত কখনও কোনও মতকে আক্রমণ করেনি, পৃথিবীর কোনও সমাজকে তলোয়ার নিয়ে আঘাত করেনি। সম্প্রসারণবাদ ভারতের রক্তে নেই। এমন দেশকে কেউ ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে জ্ঞান দিচ্ছে, এটা হাস্যকর। আমি ফারুক আবদুল্লা সাহেবকে বলতে চাই, ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ খুবই শক্তিশালী এবং এটা আমাদের রক্তে রয়েছে। এ দেশের সমাজ 'বসুধৈব কুটুম্বকম' আদর্শ নিয়ে বাঁচে। আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, কী করেছেন আপনারা কাশ্মীরে? ভারতের হাজার হাজার বছরের ধর্মনিরপেক্ষতাকে কাশ্মীরের বুকে আঘাত করা হয়েছে। আপনার বাবা শেখ আবদুল্লা, আপনি আর আপনার ছেলে ওমর আবদুল্লার রাজনীতি এ জন্য দায়ী। শুধু ধর্মের ভিত্তিতে পণ্ডিতদের আপনারা তাড়িয়ে দিয়েছেন কাশ্মীর থেকে। আপনি, আপনার ছেলে ব্যক্তিগত স্বার্থে কাশ্মীরের সুফি ঐতিহ্যকে সাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যে পরিণত করেছেন।"
"ভারতের সমাজ 'বসুধৈব কুটুম্বকম' আদর্শ নিয়ে বাঁচে"
তিনি আরও বলেন, "এত কিছুর পর আপনি বলছেন, নরেন্দ্র মোদীকে যারা ভোট দেয়, তাদের সমুদ্রে ঝাঁপ দেওয়া উচিত! আপনার বাবা, আপনি, আপনার ছেলে কাশ্মীরের রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতার রং লাগিয়ে পাপ করেছেন। আপনারা কাশ্মীরের পাপী। কাশ্মীরের মুক্ত ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত করেছেন। কাউকে সমুদ্রে ডোবানোর আগে আয়নার নিজের মুখ দেখুন। আপনার বাবার মুখটা আয়নার সামনে রেখে একবার দেখুন। ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি নয়, উন্নয়নের রাজনীতিই ভারতের পক্ষে আদর্শ। তাই আমাদের মন্ত্র হল সবাইকে নিয়ে উন্নয়নের রাস্তায় চলা।"
এদিকে, নরেন্দ্র মোদীর পাশাপাশি অরুণ জেটলিও এক হাত নেন ফারুক আবদুল্লাকে। রসিকতা করে বলেন, "উনি তো কাশ্মীরে থাকেন। সেখানে তো সমুদ্র নেই। ওঁর বরং ডাল লেকে ঝাঁপ দেওয়া উচিত।"
নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। তিনি বলেন, "ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে কাশ্মীরকে উনি জ্ঞান দিচ্ছেন দেখে খারাপ লাগছে। ১৯৪৭ সালে যখন সারা দেশে আগুন জ্বলছিল, তখনও কাশ্মীরে হিন্দু-মুসলমান শান্তিতে ছিল। ফারুক আবদুল্লা কাশ্মীরি পণ্ডিতদের তাড়াননি। এর পিছনে অনেক কারণ আছে। এখন আমি চেষ্টা করছি ওঁদের আবার ফিরিয়ে আনতে।"