দু'রাতেই জঙ্গি-জীবন ফুরলো এই কাশ্মিরি অধ্যাপকের!
কাশ্মির বিশ্ববিদ্যালয় এক অধ্যাপক, যিনি শুক্রবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন, জঙ্গি গোষ্ঠীতে নাম লিখিয়ে সেনা সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন।
সোপিয়ানে শেষ হয়েছে গুলির লড়াই। বড় সাফল্য পেয়েছে সেনা। মৃত্যু হয়েছে হিজবুল কমান্ডার সাদ্দাম পোদ্দার-সহ পাঁচ জঙ্গির। তার মধ্যে একজনকে অবশ্য রবিবার ভোরের আগে কেউ চিনত না জঙ্গি হিসেবে। তিনি কাশ্মির বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মহম্মদ রফি ভাট।
[আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে ৬ জন ভারতীয় অপহৃত, সন্দেহে তালিবান]
গত শুক্রবার থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। জানা যাচ্ছে এই বিকেল থেকেই অধ্যাপক থেকে পুরোপুরি সন্ত্রাসবাদীর জীবন শুরু করেছিলেন তিনি। সেই জীবন অবশ্য খুব একটা দীর্ঘায়িত হল না। গতকাল রাতে সোপিয়ানের বাদিগাঁওতে এক জঙ্গি ঘাঁটি ঘিরে ফেলে নিরাপত্তা বাহিনী। আজ ভোরে তাদের গুলিতেই শেষ হয়ে যায় তার জঙ্গি-জীবন। সেনাকর্তারা বলছেন কাশ্মীর রাজ্যে সম্ভবত ভাটই সন্ত্রাসবাদী হিসেবে সংক্ষিপ্ততম সময় সক্রিয় ছিল। ২০১৬-য় হিজবুল মুজাহিদিনের কমান্ডার বুরহান ওয়ানির হত্যার পর দলে দলে কাশ্মিরী যুবক সন্ত্রাসবাদীদের দলে নাম লিখিয়েছিল। তাদেরও জঙ্গি-জীবনের আয়ুও কমই ছিল, কেউ এক সপ্তাহ. কেউ বা দুই সপ্তাহ টিকেছিল। কিন্তু এত সংক্ষিপ্ত কারোর ছিল না।
ভাটের বাড়ি মধ্য কাশ্মিরের গন্দেরবাল জেলার চুন্দিনা এলাকায়। কাশ্মির বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চুক্তিভিত্তিক সহকারী অধ্যাপক ছিল সে। গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটে থেকে তার কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তার মা জানিয়েছেন, ওইদিনই শেষবার তার সঙ্গে কথা হয়েছিল। কিন্তু মাকেও তার ভবিষ্যতের পরিকল্পনার ব্যাপারে কোনও ইঙ্গিত দেয়নি সে। গতকাল সকালে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে জানায় তার পরিবার। সেকথা জানাজানি হতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। রফি ভাট অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। ছাত্রছাত্রীরা বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু করে।
উপাচার্য প্রতিবাদীদের সঙ্গে দেখা করে তাদের শান্ত করেন। আশ্বাস দেন, নিখোঁজ অধ্যাপককে খুঁজে বের করার জন্য সব রকম চেষ্টা করা হবে। পুলিশের ডিজিকেও এ ব্যাপারে চিঠি দিয়েছিলেন উপাচার্য।
এরমধ্যেই আজ সকালে দক্ষিণ কাশ্মিরের সোপিয়ান জেলার জাইনপোরা এলাকার বাদিগাঁও গ্রামে একটি সন্ত্রাসবাদীদের উপস্থিতির খবর পেয়ে অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। গতকাল রাতেই এলাকাটি ঘিরে ফেলে সেনা। আজ ভোরে শুরু হয় সংঘর্ষ। সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে অধ্যাপক ভাট আছে জেনে পুলিশ গন্দেরবাল থেকে তার পরিবারকেও ঘটনাস্থলে নিয়ে আসে।
মাইকের মাধ্যমে পরিজনদের দিয়ে ভাটকে আত্মসমর্পণ করানোর চেষ্টা করা হয়। কাশ্মিরের আইজিপি এস পি পানি বলেন, 'আটকে পড়া সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে ভাটও ছিল। সেই তথ্য পাওয়ার পর, আমরা গন্দেরবাল থেকে তার পরিবারকে নিয়ে আসি। তারা ভাটকে আত্মসমর্পণ করতে বলে। কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও লাভ হয়নি।' বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সঙ্গে শোক ও অবিশ্বাসের ছায়া নেমে এসেছে।