কৃষক আত্মহত্যার পর মোদীকে লেখা চিঠি উদ্ধার, উঠে এল এক করুণ কাহিনি
মধ্যপ্রদেশের বুন্দেলখণ্ড অঞ্চলের ছত্রপুর জেলার একটি গ্রামে এক কৃষকের আত্মহত্যা ঘটনার পর উদ্ধার হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশ্যে লেখা পাঁচ পৃষ্ঠার একটি সুইসাইড নোট। সেই সুইসাইড নোট উদ্ধারের পরই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, তাতে লেখা ব্যক্তির মৃতদেহ সরকারের কাছে হস্তান্তর করা উচিত।

প্রায় ৮৮,০০০ টাকার বিদ্যুতের বিল তাঁর অঙ্গগুলি বিক্রি করে মেটানোর বার্তা দেওয়া হয়েছে ওই নোটে। বুধবার ওই কৃষক আত্মহত্যা করে। তিনি একটি ছোট্ট আটা মিলের মালিক ছিলেন। তাঁর তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। তাঁর পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, বিদ্যুৎ সংস্থা তাঁর আটা কল এবং মোটরবাইকটিও দখল করেছে।
বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থায় কর্মরত আত্মঘাতী কৃষকের ভাই বলেছিলেন, "বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা কর্তৃক হয়রানির কারণে আমার ভাইয়ের জীবন শেষ হয়ে গিয়েছে। যেহেতু আটা কল এবং মোটর বাইকটি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা দখল করে নিয়েছিল, তাই আমার ভাই অত্যন্ত বিচলিত ছিলেন এবং চাপের মধ্যে ছিলেন।
তিনি বলেন, এ বছর ভাল ফসল না হওয়ায় বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে পারছিলেন না আমার ভাই। আগে প্রতিমাসে গড়ে প্রায় তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকার বিল ছিল। হঠাৎ করেই এবার প্রায় ৮৮,০০০ টাকার বিল আসে। বিল পরিশোধের জন্য কোনও সময় না দিয়েই ছত্রপুর জেলার বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার আধিকারিকরা আমার ভাইকে আইনি নোটিশ পাঠায়।
এরপর কালক্ষেপ না করে তাঁর আটা কল এবং মোটরবাইকটি বাজেয়াপ্ত করা হয়। একটি দল আমার ভাইকে হয়রানি করতে শুরু করে। এবং নিত্য চাপ সৃষ্টি করে বাইকটি কেড়ে নেয়। তিনি বিলটি দেওয়ার জন্য কিছু সময় চেয়েছিলেন কিন্তু কর্মকর্তারা তাঁর আবেদন কর্ণপাত করেননি। এই আত্মহত্যার জন্য যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান মৃতের ভাই।
নোটটিতে লেখা আছে, "যখন বড় রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীদের দ্বারা কেলেঙ্কারি হয় তখন সরকারি কর্মচারীরা কোনও পদক্ষেপ নেয় না। যদি তাঁরা ঋণ নেয় তবে তাঁরা এটি পরিশোধ করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পায় বা ঋণ মকুবও হয়। তবে, যদি কোনও দরিদ্র ব্যক্তি স্বল্প পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করে, তবে সরকার কখনই জানতে চায় না কেন ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। পরিবর্তে, জনসমক্ষে তাঁকে অপমান করা হয়।
মাতগুভা থানার ইনচার্জ কমলজিৎ সিং বলেন, "আমরা একটি নোট পেয়েছি। মৃতের বাবা এবং ভাইরা তাকে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে মানসিক চাপ না নেওয়ার কথা বুঝিয়েছিলেন। এরপর তাঁর স্ত্রী বাপের বাড়ি থেকে ফিরে আসেন। তখন বিদ্যুৎ বিলটি নিয়ে তাঁর এবং ভুক্তভোগীর মধ্যে তর্ক হয়। পরে, তিনি কঠোর পদক্ষেপ নেন।
কংগ্রেসের বিধায়ক এবং প্রাক্তন মন্ত্রী হর্ষ যাদব বলেন, "কৃষক এবং অন্যরা বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলির কর্মকর্তাদের কাছে হয়রান হয়ে চলেছে। বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার দল বিদ্যুৎ বিল পুনরুদ্ধারের নামে কৃষকদের বাড়ি থেকে ট্রাক্টর, ট্রলি, বাইক ইত্যাদি আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। এ বছর খারাপ আবহাওয়ার কারণে খরিফের ফসল ভালো না হওয়া সত্ত্বেও এইসব হচ্ছে।