সুপ্রিমকোর্টের নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য, পঞ্জাবে গ্রেফতার ৮৪ জন কৃষক
পঞ্জাবে খড় পোড়ানোর দায়ে অন্তত ৮৪ জন কৃষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ভয়াবহ বায়ুদূষণে নাকাল উত্তর ভারতে গত সপ্তাহে খড় পোড়ানোর উপর সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা জারি করার পরও পঞ্জাব ও হরিয়ানায় খড় পোড়ানো অব্যাহত থাকায় কৃষকদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

২০ মিলিয়ন টন খড় পোড়ানো হয় প্রতি বছর
উত্তর ভারতে, বিশেষত দিল্লিতে প্রতিবছর শীতকালে বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হল কৃষকদের এই খড় পোড়ানোর। পঞ্জাব এবং হরিয়ানায় অন্তত ১৮ মিলিয়ন টন ধান উৎপন্ন হয়। ফলে খড় হয় অন্তত ২০ মিলিয়ন টন। এত পরিমাণ খড় নিয়ে বিপাকে পড়া কৃষকরা তা আগুনে পুড়িয়ে ফেলেন। যার প্রভাবে উৎপন্ন ধোঁয়া দিল্লিসহ আশেপাশের অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

খড় পোড়ানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে শীর্ষ আদালত
দিল্লিতে বায়ুদূষণের ফলে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা বিপজ্জনক অবস্থার প্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে খড় পোড়ানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে শীর্ষ আদালত। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই পঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যে খড় পোড়ানো অব্যাহত থাকে। এই অবস্থায় পাঞ্জাবের ১৭৪ জন কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার এদের মধ্যে অন্তত ৮৪ জন কৃষককে গ্রেফতার করা হয়।

সেপ্টেম্বর থেকে খড় পোড়ানোর ৪৮ হাজারটি অভিযোগ
পঞ্জাব পুলিশের এক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা জানান, গত তিনদিন অন্তত খড় পোড়ানোর ১৭ হাজার ঘটনার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এবং সেপ্টেম্বর থেকে হরিয়ানা ও পঞ্জাব মিলিয়ে খড় পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৪৮ হাজারটি। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৩০ হাজার।

খড় পোড়ানো একটি 'সংগঠিত অপরাধ'
এর আগে বুধবার বায়ুদূষণ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলে, খড় পোড়ানো একটি "সংগঠিত অপরাধ" যা প্রতিবছর ঘটছে এবং সাধারণ মানুষের জন্য বিপদ বার্তা বয়ে নিয়ে আসছে। পঞ্জাব এবং হরিয়ানায় খড় পুড়িয়ে ফেলা বন্ধ করতে এবং দিল্লিতে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন্দ্র ও রাজ্য প্রশাসনের চরম অক্ষমতার কথাও এদিন তুলে ধরতে দেখা যায় দেশের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়কে। দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় সরকারি পদক্ষেপের অভাব নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্টকে এদিন বলতে শোনা যায় দূষণের সঙ্গে কোটি কোটি মানুষের জীবন ও মৃত্যুর প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে।

দিল্লিতে থাকা মানে দিনে ২১টি সিগারেট খাওয়া
চলতি সপ্তাহে দিল্লির দূষণমাত্রা ৫০০ স্পর্শ করে। দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলে বায়ুর এই গুণমান ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছে সমস্ত পরীক্ষাই। ঘন ধোঁয়াশায় ছেয়ে যায় রাজধানীর আকাশ বাতাস। শহরজুড়ে ধোঁয়াশা, কম দৃশ্যমানতার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় স্কুল-কলেজ। সম্পূর্ণরূপে ব্যাহত হয় কাজকর্ম। পরিবেশবিদরা এই দূষণমাত্রাকে সিগারেটের ধোঁয়ায় ২৪ ঘণ্টা আচ্ছন্ন থাকার সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাঁদের যুক্তি, এক ব্যক্তি যদি দিনে ২১টি সিগারেট খান, তবে এই রকম দূষণের কবলে পড়বেন। এই অবস্থায় দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকাতে বন্ধ রাখা হয় স্কুলগুলিকে। চালু করা হয় গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে জোড়-বিজোড় নীতি।