অশনি সঙ্কেত এড়িয়ে সমুদ্রে জেলের দল, জলোচ্ছ্বাসে নৌকাডুবিতেও বাঁচল ৬০টি প্রাণ
আবহাওয়া দফতর আগেই বলেছিল যে যারা গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাবেন তারা যেন দ্রুত ফিরে আসেন। ৯ মে তাঁদের ফিরে আসতে বলা হয়েছিল। কারণ সমুদ্রে পাক খাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় অশনি। তাই জলোচ্ছ্বাস থাকবে। তাই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল। কে কার কথা শোনে ! ৫০এর বেশি জেলে গিয়েছিল গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে। ঘটল বিপত্তি। কোনও মতে বেঁচেছে একসঙ্গে ৬০ জনের প্রাণ।
গঞ্জামে জলোচ্ছ্বাসের কারণে ওড়িশা উপকূলে নৌকা ডুবে যায়। পরে ৬০ জনের মতো জেলে কোনও ভাবে রক্ষা পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় অশনির কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে উচ্চ জোয়ার এবং ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা ছিল। সানার্যপল্লী, বড় আর্যপল্লী এবং গোলাবান্ধা এলাকার জেলেরা তাদের ছয়টি মাছ ধরার জাহাজে করে একটি বড় মাছ নিয়ে উপকূলে ফিরছিলেন। হঠাৎ সাগর উত্তাল হয়ে ওঠে।
মঙ্গলবার গঞ্জামের ছত্রপুরের কাছে আর্যপল্লীতে রুক্ষ সাগরে ছয়টি নৌকা ডুবে যাওয়ার পর ৬০ জন জেলে অক্ষত অবস্থায় রক্ষা পান। তবে কিছু নৌকা তীরের কাছাকাছি ডুবে যাওয়ায় সমস্ত জেলেরা সাঁতরে উপকূলে চলে আসতে সক্ষম হয়। তারা তাদের জাল হারিয়েছে এবং একটি নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েকজন জেলে সামান্য আহত হয়েছেন। বলা যেতে পারে রাখে হরি মারে কে অবস্থা।
এদিন সকালে আবহাওয়া দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় অশনি পশ্চিম মধ্য এবং সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর থেকে পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। তবে এর বেগ কমেছে। রাত আড়াইটে নাগাদ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আগের ছয় ঘন্টার হিসেবে প্রতিঘন্টায় এর বেগ ছিল ৭ কিমি। সেই সময় এর অবস্থান ছিল অন্ধ্রপ্রদেশে কাঁকিনাড়া থেকে ৩৩০ কিমি দক্ষিণ-পূর্বে, বিশাখাপত্তনম থেকে ৩৫০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে এবং ওড়িশার গোপালপুর থেকে ৫১০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে ও পুরী থেকে ৫৯০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে।
আবহাওয়া দফতরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ১০ মে অর্থাৎ এদিন রাত পর্যন্ত এই ঘূর্ণিঝড় উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে এবং উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ওড়িশা উপকূলের কাছে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরের কাছে পৌঁছে যাবে।
আবহাওয়া দফতর মনে করছে, এদিনই এই ঘূর্ণিঝড় উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে বাঁক নেবে এবং তা উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ওড়িশার উপকূল বরাবার উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের দিকে যাবে। এর পরবর্তী ২৪ ঘন্টায় ক্রমেই শক্তি হারিয়ে ফের ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে।
ঘূর্ণিঝড়ের বেগ কমলেও পশ্চিমবঙ্গের জন্য আবহাওয়া দফতরের সতর্কতা জারি রয়েছে। জানানো হয়েছে, ১০-১৩ মের মধ্যে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিতে হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং নদিয়ায় ১০ থেকে ১২ মের মধ্যে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। মৎস্যজীবীদের বলা হয়েছে এদিন থেকে আপাতত সমুদ্রে না যেতে। পাশাপাশি ১০-১৩ মে-র মধ্যে সমুদ্র উপকূলে কোনও রকমের কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।