সিএএ বিরোধী হিংসায় জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি! দশ দিন পর মুক্তি পেলেন মুজফ্ফরনগরের ৪

কোনও প্রমাণ মেলেনি, তাই ১০ দিন পুলিশি হেফাজতে থাকার পর মুক্তি দেওয়া হল ৪ জনকে। এমনই ঘটল উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরে। এই চারজনকেই সিএএ বিরোধী বিক্ষোভে হিংসা ছড়ানোর দায়ে গ্রেফতার করেছিল উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। কিন্তু আতিক আহমেদ (৩০), মহম্মদ খালিদ (৫৩), শোয়েব খালিদ (২৬) ও এক সরকারি দফতরের ক্লার্ককে গ্রেফতার করেও ছেড়ে দিতে বাধ্য হল যোগী সরকারের পুলিশ।

পুলিশের দাবি
এই বিষয়ে মুজফ্ফরনগরের এসপি সতপাল আন্তিল বলেন, 'আমরা খুব নিরপেক্ষতদন্ত চালাচ্ছি। ভারতীয় দণ্ডবিধইর ১৬৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী এদেরকে ছাড়া হয়েছে। আমরা এদের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ পাইনি। তাই এদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা আটক ও ধৃত ব্যক্তিদের বিষয়ে খতিয়ে দেখছি। তাদের মধ্যে কেউ যদি হিংসার সঙ্গে জড়িত না থাকে তবে তাদেরকে আমরা মুক্তি দিচ্ছি।' পাশাপাশি তিনি আরও জানান, বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশ কেবল লাঠি ব্যবহার করেছিল। মানবাধিকারের বিষয়টি মাথায় রেখএই দাঙ্গা দমন করা হয় বলে তাঁর দাবি।

'জল চাইলে মুত্রপান করতে বলে পুলিশ'
এদিকে এসপি যাই বলুক ধৃতদের বয়ানে উঠে আসছে অন্য ছবি। মুক্তি পেয়ে মহম্মদ খালিদ বলেন, 'তখন রাত সাড়ে দশটা। আমি ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি পুলিশ আমার বাড়িতে ঢুকে আমাকে আর আমাকে ছেলেকে উঠিয়ে নিয়ে গেল থানাতে। সেখানে আমাদের ছাড়াও আরও ১০০ জনের মতো ছিল। পুলিশ আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করেছে। আমি জল চাইলে আমাকে নিজের মুত্র পর্যন্ত পান করতে বলা হয়।'

উত্তরপ্রদেশে হিংসার ছবি
উত্তরপ্রদেশে গত কয়েকদিনে একের পর এক জায়গায় দেখা গিয়েছে ব্যাপক হিংসার ছবি। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ইস্যুতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে রীতিমতো তোলপাড় হয় যোগীরাজ্য। এমন এক পরিস্থিতিতে যোগী আদিত্যনাথ নির্দেশ দেন যে, যারা হিংসায় জড়িত তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে সেই সম্পত্তি থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে সরকারি সম্পত্তি নষ্টের ক্ষতিপূরণ তোলা হবে।

ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা
যোগী সরকার জানিয়ে দেয় মতেই রাজ্যে হিংসা বরদাস্ত করবে না। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে খতিয়ে দেখা হবে কারা হিংসায় যুক্ত। তাদের সনাক্ত করেই চলবে সম্পত্তি ক্রোক করার প্রক্রিয়া। মূলত যে সমস্ত ৬০ টি দোকানের সামনে জমায়েত বেশি হয়েছে এবং তা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, সেই দোকান গুলিকেই সন্দেহের তালিকায় রেখেছে সরকার।

মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের
এর আগে সিএএ বিরোধী হিংসার আগুন জ্বলে কানপুর, লখনউ, মুজাফফরনগর, আলিগড়। এই জায়গিগুলি থেকে একের পর হিংসার ছবি উঠে আসে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বাস ও সরকারী সম্পত্তি। সরকারী মতে, উত্তরপ্রদেশে একের পর এক হিংসায় ২০ টি মটরসাইকেল, ১০ টি গাড়ি, ৩ টি বাস, ৪ টি মিডিয়া ওবি ভ্যান জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে সিএএ-র প্রতিবাদে উত্তরপ্রদেশে গতমাসে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ১৬ জনের মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে গুলিতে।

কত জনকে গ্রেফতার করা হয়?
উত্তরপ্রদেশে সিএএ বিরোধী বিক্ষোভে জড়িত থাকায় করা হয়েছে সাড়ে চার হাজার জনকে। নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে উত্তর প্রদেশের একাধিক শহরে আগুন জ্বলেছে হিংসার। আর তার জেরেই গ্রেফতার করা হয়েছে ৭০৫ জনকে। এদিকে হিংসায় জড়িত থাকায় এফআইআর-এ নাম রয়েছে ৯৩ বছর বয়সী বৃদ্ধে থেকে ৬ বছর আগে মৃত ব্যক্তিরও।