ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাতেই বাদ গিয়েছে আনুমানিক ৩৬ লক্ষ মানুষের নাম, আর কোথায় কত
অসমের মধ্যে রয়েছে মূলত দু'টি এলাকা। একটি বরাক এবং অন্যটি লোয়ার অসম বা নাম্নি অসম।
অসমের মধ্যে রয়েছে মূলত দু'টি এলাকা। একটি বরাক এবং অন্যটি লোয়ার অসম বা নাম্নি অসম। বরাক মূলত পুরনো বঙ্গের অঙ্গ ছিল। ফলে এখানে বাঙালিদের সংখ্যার আধিক্য। অন্যদিকে লোয়ার অসম বা নাম্নি অসম মূলত পশ্চিম ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা। এখানে অসমিয়াভাষীদের সংখ্যাধিক্য।
৩০ জুলাই এনআরসি-র যে চূড়ান্ত খসড়া সামনে এসেছে তাতে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। দেখা গিয়েছে যে ৪০,০৭,৭৫৯ জনের নাম বাদ গিয়েছে তার মধ্যে বরাক উপত্যকায় প্রায় ৪ লক্ষ মানুষের নাম নেই। করিমগঞ্জে ৫৫ হাজার, হাইলাকান্দি তে ১,৭৫,০০০, কাছাড়ে প্রায় ২ লক্ষ মানুষের নাম এনআরসি-র তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। বরাক উপত্যকার এই তিন জেলার নাম বাদ যাওয়ার সংখ্যাটাকে একত্রিত করলে চার লক্ষ্যের সামান্য কিছু বেশি হচ্ছে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে বাকি যে ৩৬ লক্ষ মানুষ রয়েছেন তারা সকলেই নাম্নি অসমের। এদের মধ্যে কিছু নেপালি, কার্বি-রা থাকলেও বাঙালিদের নামটাই সবচেয়ে বেশি করে বাদ দেওয়া হয়েছে। আর এই বাঙালিদের মধ্যে নাম বাদ যাওয়ায় মুসলিমদের সংখ্যাটা সবচেয়ে বেশি।
ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলার সঙ্গে এই নাম বাদ যাওয়া নিয়ে কথা হয় ডক্টর সব্যসাচী রায়ের। তিনি অসম নাগরিক রক্ষা সমন্বয় সমিতির পক্ষে এনআরসি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলার দিকটা সামলাচ্ছেন। এনআরসি-র চূড়ান্ত খসড়া তালিকা প্রকাশ পাওয়ার পর তিনিও তথ্য বিশ্লেষণ করে যা পেয়েছে তাতে অবাক হয়েছেন। কারণ, এমন বহু ঘটনা সামনে আসছে যেখানে বাবা-র নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অথচ ছেলের নাম তালিকায় রাখা হয়েছে।
আবার এমন পরিবারও রয়েছে যেখানে একজন ডাউটফুল ভোটার বা ডি ভোটার ঘোষিত হওয়ায় পরিবারের বাকিরাও ডি-ভোটার বলে গণ্য হয়েছেন। ডি-ভোটারের সংজ্ঞা নিয়েও গণ্ডগোল দেখা দিচ্ছে।
শুরু থেকেই এনআরসি নিয়ে সমস্যা চলছে। ২০১৫ সালে এনআরসি-তে নতুন করে নাম তোলার আবেদনপত্র গ্রহণে যে কাগজপত্র চাওয়া হয়েছিল পরে তার সঙ্গে আরও কিছু নথিকে বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়। বারবার নোটিফিকেশন দিয়ে নথি জমা করা নিয়ে আবেদনকারীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়েছে।
বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সব্যসাচী রায়ের মতে, এভাবে বারবার জমা করা নথি নিয়ে নানা নির্দেশ দেওয়ায় সবচেয়ে বেশি অন্ধকারে গরিব অশিক্ষিত মানুষরা। কারণ, নথি জমা করার ব্যাপারে এদের যে জ্ঞান-গম্যি কিছুটা হলেও কম হবে এতে নতুন করে কিছু বলার নেই। ফলত বারবার নোটিফিকেশন দিয়ে নথি সম্পর্কে নানা নির্দেশ আসায় এই মানুষগুলো পুরোপুরি হতবুদ্ধি অবস্থা হয়েছে। অথচ, খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে এই মানুষগুলি পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে পুরুষানুক্রমে নাম্নি অসমে বসবাস করছেন। এনআরসি নথি জমাতে এদেরকে সাহায্য করার মতোও কেউ ছিল না।
বরাক উপত্যকায় এই সমস্যা কম হয়েছে। কারণ এখানে গরিব অশিক্ষিতদের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের সদস্যরা। নাম্নি অসমে সব স্থানে এই ধরনের সাহায্য পৌঁছে দেওয়া যায়নি।
সব্যসাচী রায় জানিয়েছেন এনআরসি-র বক্তব্য ও রিপোর্ট খুটিয়ে দেখা হচ্ছে। খুব শিগগিরি এই নিয়ে আইনের দ্বারস্থও হচ্ছে অসম নাগরিক রক্ষা সমন্বয় সমিতি। তবে, নাম্নি অসম এলাকায় তালিকার বাইরে থাকা ৩৬ লক্ষ মানুষকে কীভাবে এনআরসি-তে ফের আনা সম্ভব তা নিয়েই এখন আলোচনা চলছে।
[আরও পড়ুন: এনআরসির প্রভাব! প্রায় ৫০ হাজার সংসার ভাঙার পথে]