For Daily Alerts
মুম্বই হামলা : দ্বিতীয় দিনে যে বিস্ফোরক সাক্ষ্য দিল ডেভিড হেডলি
মুম্বই, ৯ ফেব্রুয়ারি : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জেলে বন্দি অবস্থায় সাক্ষ্য দিয়ে প্রথমদিনই ডেভিড হেডলি পাকিস্তানের মিথ্যাচারের পর্দাফাঁস করে দিয়েছে। কীভাবে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সরাসরি মদতে ভারতের বিরুদ্ধে জঙ্গি নাশকতাকে ইন্ধন জোগানো হয় তা ডেভিড হেডলির বয়ানে স্পষ্ট। [মুম্বই হামলা : ভিডিও কনফারেন্সে ডেভিড হেডলির প্রথম দিনের বিস্তারিত বয়ান]
২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বইয়ে হামলার ছক যে পাকিস্তান থেকে কষা হয়েছে ও সেদেশের নাগরিকরাই যে এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে এবং হেডলি বক্তব্যেও ফের একবার তা সামনে এসেছে। সাক্ষ্যের দ্বিতীয় দিন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতে আর কী কী বিস্ফোরক তথ্য সামনে আনল হেডলি তা দেখে একনজরে।
- ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নিজের দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্য শুরু করল মুম্বই হামলার অন্যতম ষড়যন্ত্রী ডেভিড হেডলি।
- আমাকে ভারতীয় সেনা সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য তুলে আনতে বলা হয়েছিল। ভারতীয় সেনায় চর ঢোকানোর ব্যাপারেও আমাকে চেষ্টা করতে বলা হয়েছিল।
- পাকিস্তানি অবসরপ্রাপ্ত মেজর পাশা আমাদের অর্থাৎ লস্কর-ই-তৈবা জঙ্গিদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। পরে সে আল কায়েদায় যোগ দেয়।
- সাজিদ মীর ও মেজর ইকবালের সঙ্গে বেশ কয়েকবার ইমেলে কথা হয় আমার। এছাড়া লস্করকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানাতে আমি হাফিজ সঈদকে পরামর্শ দিই।
- আমাকে আইএসআই-এর মেজর ইকবাল ভারতীয় সেনায় লোক ঢোকানোর কথা বলেছিল।
- কীভাবে ভারতীয় সেনা সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করতে হবে সে ব্যাপারে আমায় মেজর ইকবাল বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। এই প্রশিক্ষণের ধরণ বেশ বিজ্ঞানসম্মত ছিল।
- মেজর পাশা এই চক্রান্তের অন্।তম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিল। সেই আমাকে ভারতের নানা জায়গার টার্গেটের ছবি তুলতে বলেছিল।
- এই মেজর পাশা ভারতের বিরুদ্ধে সবরকম কার্যকলাপে রাজি ছিল। ফিঁদায়ে হামলার জন্য বিশেষ বাহিনীও রয়েছে তার কাছে।মুম্বইয়ের তাজ হোটেলের কনভেনশন হলে হামলা চালানোই সেখানকার মূল লক্ষ্য ছিল। কারণ সেখানে সম্মেলন ছিল ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীদের। তবে তা বাতিল হয়ে যায়।
- ২০০৩ সালে আমার দেখা হয় মৌলানা মাসুদ আজহারের সঙ্গে। লস্করের একটি অনুষ্ঠানে অতিথি বক্তা ছিল সে। অনুষ্ঠানটি হয়েছিল মুজফফরাবাদে।
- আমার স্ত্রী ফৈজা ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসে অভিযোগ জানায় আমার নামে। আমি সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত এমনটাই জানায় ফৈজা।
- আমি ভারতীয় সেনায় গুপ্তচরবৃত্তির জন্য লোক খুঁজে বের করতে বহু চেষ্টা চালিয়েছি।
- ইউনাইটেড জেহাজ কাউন্সিল নামে যে গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে তাতে লস্কর-ই-তৈবা, জঈশ-ই-মহম্মদ, হিজবুল মুজাহিদিন, হরকত উল মুজাহিদিন একসঙ্গে কাজ করে পাক অধীকৃত কাশ্মীরে।পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের কাছে সবকিছু রিপোর্ট করে লস্কর নেতা জাকিউর রহমান লখভি ও জামাত-উদ-দাওয়া প্রধান হাফিজ সঈদ।
- পাকিস্তানের সব জঙ্গি সংগঠনেরই মূল অ্যাজেন্ডা হল ভারত বিরোধিতা। সাক্ষ্যে এদিন জানিয়েছে হেডলি। জাকিউর রহমান লখভির ছবি দেখাল সে এই জঙ্গিকে চিনতেও পারে।
- মেজর পাশা যে আমাকে ভারতীয় সেনায় চর ঢোকাতে বলেছিল সে পাকিস্তানের ৬ নম্বর বালোচ রেজিমেন্টের বাসিন্দা। সে প্রথমে লস্করে যোগ দেয় ও পরে আল কায়েদার সদস্য হয়।
- মেজর ইকবালের সঙ্গে আমার লাহোরে প্রথম দেখা হয়েছিল। সেখানে পাক সেনার কর্নেল হামজাও হাজির ছিল। আবদুল রেহমান পাশার সঙ্গে ২০০৩ সালে আমার লাহোরের একটি মসজিদে আলাপ হয়।
- একে একে ছবি দেখানো হলে আবু আল কামা, সাজিদ মীর, আবদুল রেহমান পাশাকে চিহ্নিত করে হেডলি।
- লস্কর-ই-তৈবার উপরে আইএসআইয়ের প্রভাব সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছে ডেভিড হেডলি।ভারতে তথা মুম্বইয়ে প্রতিবার এসে ফিরে যাওয়ার পরে আইএসআইয়ের কাছে গিয়ে আলাদা করে পুরোটা রিপোর্ট করতে হত।
- মুম্বই ছাড়াও দিল্লি ও বেঙ্গালুরুতে হামলার ছক ছিল আমাদের।
- কেন হামলার জন্য মুম্বইকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল তা আমি জানি না। এমনকী ভিডিও ও ছবি তোলার সময় আমি জানতাম না তাজ হোটেলে হামলা হবে।
- ২০০৬ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর করাচি থেকে প্রথমবার ভারতে আসি আমি। তাহাউর রানা আমায় মুম্বইয়ে অফিস খোলার অনুমতি জোগাড় করে দেয়। রানার বন্ধু রশির শেখ আমায় মুম্বই বিমানবন্দরে নিতে এসেছিল।
- বশিরের সঙ্গে আমার সেদিনই প্রথম আলাপ। সেই মুম্বইয়ে আমার যাবতীয় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।
- মুম্বইতে ১৪ সেপ্টেম্বর ২০০৬ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমি তাজ হোটেলে ছিলাম। লস্কর কেন মুম্বইকেই টার্গেট করছে তা জানার কোনও আগ্রহ আমার ছিল না।
- তাজ হোটেলের তৃতীয় তলায় স্ত্রী ফৈজাকে নিয়ে ছিলাম আমি। সাজিদ মীরের কথায় সেখানকার চালচিত্রের খবর মেজর ইকবালের সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম।
- তাজের ছবি ও ভিডিও আমি মেজর ইকবাল ও সাজিদ মীরকে দিয়েছিলাম। তার জন্য ওরা আমার প্রশংসাও করে।
- এছাড়া কোলাবা পুলিশ স্টেশন, লেওপোল্ড কাফে ও নানা দোকান, হোটেলের ভিডিও আমি পাঠিয়েছি। একটি জিপিএস ডিভাইস দিয়ে আমি লোকেশন স্টোর করে দিই। ক্যামেরা ও অন্যান্য জিনিস আমায় সাজিদ মীর দিয়েছিল।
- আমাকে সিদ্ধি বিনায়ক মন্দির সার্ভে করতে বলা হয়েছিল। এছাড়া কোন কোন জায়গা দিয়ে ভারতে অর্থাৎ মুম্বইয়ে ঢোকা যেতে পারে তা পর্যবেক্ষণ করি। এছাড়া সিএসটি, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ওবেরয় হোটেল, জল ও বায়ুসেনা ঘাঁটিও আমার পর্যবক্ষণের মধ্যে ছিল।
- ২০০৬ সালে ফের এসে আমি ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালের কাছে বেশ কিছুদিন পেয়িং গেস্ট হিসাবে ছিলাম।
- প্রতিবারই আমার সঙ্গে মোবাইল ফোন ও জিপিএস ডিভাইস সঙ্গে ছিল। একটি সোনি এরিকসন ফোন আমায় দিয়েছিল মেজর ইকবাল ও জিপিএস ডিভাইসটি দিয়েছিল সাজিদ মীর। দুটিকেই ছবি তোলা ও ভিডিও-র কাজে ব্যবহার করতাম আমি।জঙ্গি জাকিউর রহমান লখভির হ্যান্ডলার ব্রিগেডিয়ার রিয়াজ পাকিস্তান সেনার অংশ।
- লস্কর-ই-তৈবাকে পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই ভারত বিরোধী নাশকতা চালানোর জন্য অর্থ সাহায্য করে।
- আইএসআইয়ের হয়ে কাজ করার সময়ে তাদের সদস্য মেজর সমীর আলির সঙ্গে তার দেখা হয়েছে বলে জানাল ডেভিড হেডলি।
- তাজ হোটেলে কীভাবে হামলা চালানো হবে তার ছক আগেই করা হয়েছিল। হোটেলের কোথায় ঢোকার জায়গা ও কোথায় বেরনোর দরজা রয়েছে তা আগে থেকে দেখে নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়।
ডেভিড হেডলির এদিনের সাক্ষ্য এখানেই শেষ হয়েছ বলে জানা গিয়েছে।
Comments
david headley mumbai attack terror attack pakistan mumbai united states of america ডেভিড হেডলি মুম্বই হামলা জঙ্গি হামলা পাকিস্তান মুম্বই ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
English summary
2nd day : What David Headley tells court about Mumbai attack