ফিরে দেখা 'আন্দোলনের বছর', সিএএ বিরোধিতা দিয়ে শুরু, কৃষক বিক্ষোভ দিয়ে শেষ
ভারতের সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ হয় ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯ তে। তার পরই জনগণের একটা একটা অংশ এই আইনের প্রতিবাদে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। দেশের নানা প্রান্তের মানুষ এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া সেই বিক্ষোভের মধ্যেই শুরু হয়েছিল ২০২০।

উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের রাজ্যগুলিতে তুমুল বিক্ষোভ
এই আইনের প্রতিবাদে ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের রাজ্যগুলিতে তুমুল বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। কারণ ওই রাজ্যগুলির ভূমিপুত্রদের আশঙ্কা, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, ২০১৯-এর জেরে প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে আগত বহু সংখ্যক অনুপ্রবেশকারী বৈধ নাগরিকত্ব পেয়ে যাবে আর তার ফলে ওই রাজ্যগুলিতে জাতিগত ও ভাষাগত সমস্যা তৈরি হবে।

মুসলিমদের একটা বড় অংশ সরব হয়েছে
এই আইনের প্রতিবাদে মুসলিমদের একটা বড় অংশ সরব হয়েছে। তাদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার মুসলিম বিদ্বেষী ও বিভেদকামী। কারণ এই আইন ভারতে শরণার্থী হিসেবে আগত মুসলিমদের নাগরিকত্ব প্রদান থেকে বঞ্চিত করবে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে সত্যাগ্রহের পথে হেঁটে প্রতিবাদ জানান সাধারণ মানুষ। নতুন নাগরিকত্ব আইন, প্রস্তাবিত জাতীয় নাগরিক পঞ্জি এবং জাতীয় জনগণনা পঞ্জির বিরুদ্ধে রাস্তায় নাগাড়ে বসে আন্দোলন চলে প্রায় ৪০ দিন।

অনড় ছিলেন শাহিনবাগের মহিলারা
প্রবল ঠান্ডা, পুলিশের আর্জি (অভিযোগ, হুমকিও) আর রাস্তা খালি করার চাপের মুখেও প্রতিবাদ প্রত্যাহারের প্রশ্ন ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেন শাহিনবাগের মহিলারা। শাহিনবাগের এই প্রতিবাদ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এই সত্যাগ্রহ আন্দোলন এতটাই জনপ্রিয় হয়ো ওঠে যে কংগ্রেস নেতা শশী থারুর, আম আদমি পার্টির বেশ কয়েকজন নেতা, সমাজকর্মী মেধা পাটকর-সহ অন্যান্যরা আন্দোলনে যোগ দেন এবং আন্দোলনকারীদের সমর্থন জানান।

গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ
গেরুয়া শিবির থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে, দৈনিক মজুরির বিনিময়ে আন্দোলনে বসেছেন শাহিনবাগের কিছু মহিলা। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এই আন্দোলেন থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আলোচনায় অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। হাজারো চেষ্টা-নির্দেশ-হুমকি দিয়েও আন্দোলনকারীদের তুলতে ব্যর্থ হয় পুলিশ।

নভেম্বরে শুরু হয় কৃষি আইন
সেই আন্দোলনের জেরে দিল্লিতে ফেব্রুয়ারি মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফর চলাকালীন দাঙ্গাও হয়। তবে পরবর্তীতে করোনা আবহে সেই আন্দোলনের রেশ কেটে যায়। এই আবহেই দুর্বল বিরোধীদের সুযোগ নিয়ে সংসদে তিনটি কৃষি আইন পাশ করায় বিজেপি। এই কৃষি আইনের বিরোধিতাতেই এরপর নভেম্বরের শেষ লগ্নে শুরু হয় কৃষক আন্দোলন।

কৃষি আইনের বিরুদ্ধে 'দিল্লি চলো'-র ডাক
কয়েকদিন আগে নতুন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে 'দিল্লি চলো'-র ডাক দিয়েছিল একাধিক কৃষক সংগঠন। কিন্তু দিল্লিতে ঢোকার আগেই তাদের আটকানোর চেষ্টা করা হয় । ফলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্ত। এরই মাঝে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাদের শর্ত দেন, সরকার নির্ধারিত বুরারিতে যদি তারা বিক্ষোভ দেখায় তাহলে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন তিনি। তাদের সমস্যা ও দাবির কথা শোনা হবে বলেও আশ্বাস দেন। তবে অমিত শাহের সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় কৃষকরা।

কৃষকদের রুখতে জলকামান ব্যবহার
উত্তর ভারতের কনকনে ঠান্ডায় প্রতিবাদরত কৃষকদের রুখতে জলকামান ব্যবহার করেছিল পুলিশ। টিয়ার গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। লাঠিচার্জও করা হয়। সেই সময় কৃষকরা জানায়, তাঁদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণে প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুত রয়েছে। আগামী ছয়মাস পর্যন্ত প্রতিবাদ চালাতে পারবেন তাঁরা। প্রতিবাদ আন্দোলনের জেরে দিল্লি অভিমুখী তিনটি হাইওয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়। এরপর ধীরে ধীরে দিল্লির আরও সীমানায় কৃষকরা আন্দোলনে বসে এবং রাস্তা অবরোধ করেন।

চাপে বিজেপি সরকার
দীর্ঘ সময়ের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য দিল্লির উদ্দেশে উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, পাঞ্জাবের কৃষকরা রওনা দিয়েছেন। কৃষকরা জানিয়েছেন, দিল্লির রামলীলা ময়দানে ৫০০টি সংস্থা এই আন্দোলনের অংশ নেয়। কৃষকদের এই প্রতিবাদ আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এদিকে কৃংগ্রেস এবং বামপন্থী দলগুলি ক্রমেই এই আন্দোলনের অলিন্দে থেকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে চাপে ফেলছে।

আন্দোলন চালিয়ে গেলেও কেন্দ্রের ডাকে সাড়া
এদিকে আন্দোলন চালিয়ে গেলেও কেন্দ্রের ডাকে সাড়া দিয়ে নতুন কৃষি আইন নিয়ে সরকার পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিঙ্ঘু সীমান্ত আন্দোলনরত কৃষকরা৷ মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছে তারা৷ তবে, নতুন কৃষি আইন বাতিল ও এমএসপি-র দাবি থেকে যে তারা সরছে না, তাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে ৷

ফিরে দেখা ২০২০: দেশের কোন কোন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন জেনে নিন বিশদে