২০ বছর আগে সংসদে জঙ্গি হামলা, দেশ কীভাবে রক্ষা করল গণতন্ত্রের স্তম্ভকে জেনে নিন
২০ বছর আগে সংসদে জঙ্গি হামলা, দেশ কীভাবে রক্ষা করল গণতন্ত্রের স্তম্ভকে জেনে নিন
সেই স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত সব ধরনের সন্ত্রাসের সঙ্গে লড়াই করে চলেছে কিন্তু এমন কিছু ঘটনা রয়েছে যা আজও দেশবাসীর স্মৃতিতে এমনভাবে গেঁথে আছে, যা মনে করলে হতচকিত ও একরাশ যন্ত্রণা ছাড়া আর কিছুই দিয়ে যায় না। সেরকমই একটি দিন হল ১৩ ডিসেম্বর, ২০০১ সাল। পাকিস্তান মদতপুষ্ট জঙ্গিরা দেশের গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ সংসদ ভবনে হামলা চালায়, এ বছর সেই হামলার ২০ বছর পূর্ণ হল। দেশের রাজধানী দিল্লিতে নিরাপত্তায় মোড়া এই ভবনে ঢুকে কিভাবে জঙ্গিরা হামলা চালাতে সফল হল তা আজও দেশের কাছে চিন্তা–ভাবনার বাইরে।
সেই সময় কারা কারা ছিলেন সংসদে
১৩ ডিসেম্বর, ২০০১ সাল, সেই সময় লোকসভায় অধিবেশন চলাকালীন এই অনুপ্রবেশ ঘটে। জঙ্গি হামলার পরই অধিবেশন স্থগিত করে দেওয়া হয়। সেই সময় সংসদে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী হরিন পাঠক সহ একাধিক সাংসদ ও সরকারি কর্মকর্তারা।
সংসদ ভবনে ঢুকে পড়ল পাঁচ জঙ্গি
২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর পাঁচ জঙ্গি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও সংসদের ভুয়ো স্টিকার লাগিয়ে সাদা অ্যাম্বাসাডার নিয়ে সংসদ ভবনে ঢুকে পড়ে। জঙ্গিদের সঙ্গে ছিল একে৪৭ রাইফেল, পিস্তল, গ্রেনেড লঞ্চার, গ্রেনেড নিয়েই সংসদ চত্ত্বরের কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে ঢুকে পড়তে সফল হয়। তবে কনস্টেবল কমলেশ কুমারি যাদব, পুলিশ কর্মীদের মধ্যে অন্যতম সদস্য, জঙ্গিদের গাড়ির গতিবিধি দেখে ও সংসদের আরও ভিতরে নিয়ে যাওয়াতে তাঁর সন্দেহ প্রবল হয়ে ওঠে। ওই মহিলা কনস্টেবল নিজের জীবনের পরোয়া না করে যেখানে তাঁর পোস্ট ছিল সেদিকে দৌড়াতে থাকেন। জঙ্গিরা তাঁর ওপর গুলি চালাতে থাকে, ১১ বার কমলেশ কুমারির ওপর গুলি চলে। ঘটনাস্থলেই নিহত হন যাদব। জঙ্গিরা প্রত্যেকেই তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী নিজেদের শরীরে আত্মঘাতী বিস্ফোরক বহন করছিল। কমলেশ কুমারি যাদবকে মারার পর জঙ্গিরা সংসদের ভেতর নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে। এরপর নিরাপত্তা বাহিনী ও জঙ্গিদের মধ্যে গুলির সংঘর্ষ চলার পর সংসদ ভবনকে সুরক্ষিত করে তোলা হয়।
সংসদ হামলার পর কি হল
সংসদ ভবনের ভেতর শ্বাসরোধ করা এই হামলা চলে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে পাঁচ জঙ্গিকে সংসদের বাইরে মেরে ফেলা হয়। সংসদের ভেতর হওয়া জঙ্গি হামলা রুখতে দেশের জন্য শহিদ হন পাঁচজন দিল্লি পুলিশের অফিসার, সংসদের ওয়াচ ও ওয়ার্ড বিভাগের ২ জন নিরাপত্তা সহযোগী ও একজন সিআরপিফ কনস্টেবল। নিরাপত্তা বাহিনী ছাড়াও জঙ্গিদের এলোপাথাড়ি গুলিতে নিহত হন এক চিত্র সাংবাদিক ও সংসদের বাগানের দায়িত্বে থাকা এক মালীর।
কারা শাস্তি পেল
এই ভয়াবহ হামলার পর বিজেপির শীর্ষ নেতা এল কে আদবাণী জানান যে সংসদ ভবনের এই হামলার পেছনে পাকিস্তান মদতপুষ্ট জশ-ই-মহম্মদ ও লস্কর-ই-তৈবা জঙ্গি গোষ্ঠী দায়ী। এই হামলার পেছনে থাকা প্রধান চার ষড়যন্ত্রকারী মহম্মদ আফজল গুরু, সৌকত হুসেন, আফসান গুরু ও সার গিলানির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় এবং হামলার কিছুদিনের মধ্যেই এই চারজনকে গ্রেফতার করে তদন্তকারী এজেন্সি। ২০১৩ সালে ফ্রেব্রুয়ারিতে দিল্লির তিহার জেলে সংসদ হামলার জন্য মৃত্যুদণ্ডের সাজা হয় আফজল গুরুর।
জোরালো হয়েছে সংসদ ভবনের নিরাপত্তা
২০০১ সালের সংসদ হামলার পর থেকেই সংসদ ভবনে আরও কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়। সংসদ ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে বর্তমানে দিল্লি পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ, ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড, বিশেষ সুরক্ষা বাহিনী, সিআরপিএফ রয়েছে। এরা সকলে সংসদ ভবনের সুরক্ষা বাহিনীকে সহায়তা করে।
সোমবার শ্রদ্ধা জানান রামনাথ কোবিন্দ–নরেন্দ্র মোদী
সোমবার সংসদ হামলায় শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান এম ভেঙ্কাইয়া নাইডু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ অন্য়ান্য রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা। টুইট করে শহিদ জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিজের টুইটারে মোদী লেখেন,' সংসদ ভবনকে রক্ষা করতে গিয়ে ভারতের নিরাপত্তাবাহিনীর যে সব জওয়ান আত্মবলিদান দিয়েছেন, তাঁদের প্রতি রইল আমার বিনম্র শ্রদ্ধা। তাঁদের এই আত্মত্যাগের কথা দেশবাসী চিরকাল স্মরণে রাখবে।'