ভারত-চিন দ্বন্দ্ব: লাদাখের গালওয়ান উপত্যকা কেন স্বাধীনতার পর থেকেই উত্তপ্ত থেকেছে
ভারত-চিন দ্বন্দ্ব: লাদাখের গালওয়ান উপত্যকা কেন স্বাধীনতার পর থেকেই উত্তপ্ত থেকেছে
১৯৪৭ সালে ভারত যখন স্বাধীন হল, সেইসময় দেশের সেনা একেবারেই শক্তিশালী ছিল না। কারণ ঔপনিবেশিকতার বেড়াজাল কাটিয়ে তখনও সার্বিকভাবে দেশ গঠনের কাজ আরম্ভ হয়নি। ফলে দেশের আন্তর্জাতিক সীমান্ত প্রহরার কাজ সেই সময় কার্যত সম্ভব ছিল না। তবে দেশভাগের পরপর পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের পর এই বিষয়ে নির্দিষ্ট নীতি তৈরি হয়।
চিনের তিব্বত দখল
অন্যদিকে চিন সেইসময় সেনাবাহিনীর দিক থেকে অনেকটা এগিয়ে ছিল। গেরিলা যুদ্ধে তাদের মজবুত অবস্থান ছিল। ভারত এদিকে নিজেদের সীমান্ত বিষয়ক নানা সমস্যায় নজর দেওয়ার আগে সংবিধান রচনা থেকে শুরু করে নানা বিষয়গুলি গুছিয়ে নিতে চেয়েছিল। আর সেই সুযোগেই ১৯৫০ সালে তিব্বত দখল করে চিন।
লাদাখের ওপর নজর
সেইসময় থেকেই লাদাখের উপর নজর ছিল চিনের। তবে পুরোটা দখল করতে না পারলেও আকসাই চিন এলাকাটি নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় চিনারা। কারণ ওই এলাকায় সেইসময় ভারতীয় সেনার প্রহরা ছিল না। যে সুযোগ নিয়ে চিন এলাকাটি দখল করে নেয়।
ভারতকে উত্যক্ত করার চেষ্টা
তবে ১৯৫৯ সালে তিব্বতে চিনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়। সেই প্রতিবাদকে ধামাচাপা দিয়ে দেয় চিন। এবং গোটা অঞ্চল জুড়ে নিজেদের সেনার দাপাদাপি আরও বাড়িয়ে দেয়। তবে লাদাখ অঞ্চলে বারবার ভারতকে উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা করে গিয়েছে চিন।
ভারতের নীতি
লাদাখে চিনা সেনার দাপাদাপি দেখে ভারত ওই এলাকায় সেনা মোতায়েন করে। যাতে চিনের আগ্রাসনকে দমিয়ে রাখা যায়। ১৯৬১ সালে ভারত 'ফরওয়ার্ড পলিসি' নেয়। অর্থাৎ সীমান্ত ধরে এগোনোর চেষ্টা করে। তবে সেই সময় সেই অভিযান সফল হয়নি। ১৯৬২ সালে ফের একবার চিনা আগ্রাসনকে থামানোর চেষ্টা হয়।
বারবার দুই দেশের সংঘর্ষ
এভাবেই গত কয়েকদশকে বিভিন্ন ছোট-বড় দ্বন্দ্ব সীমান্তে ভারত এবং চিনের সেনার মধ্যে লেগে থেকেছে। বারবার সীমান্তের কাছাকাছি চলে আসা অথবা সীমান্তে উত্তেজনা তৈরি করা চিনের পুরনো নীতি। এবারও সেই ধরনের পথই অনুসরণ করেছে চিন।
গালওয়ানের গুরুত্ব
জওহরলাল নেহেরু যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সেইসময় তিনিও গালওয়ান উপত্যকার গুরুত্ব বুঝে ওই এলাকাতে ভারতের শক্তি বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছিলেন। ১৯৬২ সালের ৫ জুলাই গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় সেনার পোস্ট বসানো হয়। যার ফলে ওই এলাকায় চিনের সঙ্গে ভারতের দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে যায়। কারণ ভারতীয় সেনার উপস্থিতি চিনকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছিল।
ভারত-চিন যুদ্ধ
গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় সেনার পোস্ট এমন জায়গায় অবস্থিত যেখানে চিনের সেনা এগিয়ে এলেই ভারত তাদের আটকাতে সক্ষম হবে। ১৯৬২ সালের জুলাই মাসে ভারত চিনকে প্রস্তাব দেয় লাদাখের এলাকা থেকে সরে যেতে। বদলে আকসাই চিন এলাকার রাস্তা অসামরিক কাজে ব্যবহার করতে পারবে বলে ভারত রাজি হয়েছিল। তখন সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি চিন। যার পরে ১৯৬২ সালের অক্টোবরে লাদাখে ভারতীয় সেনাকে আক্রমণ করে এবং দুই দেশের যুদ্ধ শুরু হয়।
চিনের জায়গা দখল
১৯৬২ সালে যুদ্ধের সময় চিন নিজে থেকেই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল। এবং ওই এলাকায় অনেকটা অংশ নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছিল। ১৯৬২ সালের যুদ্ধ ভারতকে কিছুটা অবাক করে দিয়েছিল। চিন লাদাখের অনেকটা এলাকা দখল করে নেয়। এবং এই মুহূর্তে ফের একবার চিন নিজেদের অবস্থান বদল করে ফেলেছে।
বারবার দুই দেশের দ্বন্দ্ব
১৯৬২ সালে ভারতের নিজের জায়গাকে চিন অস্বীকার করেছিল। এবং বর্তমানে ভারত সীমান্ত এলাকার মধ্যে এলএসি-তে নিজের এলাকাতেই পরিকাঠামো উন্নয়ন চেষ্টা করলে চিন তাতে বাধা দিচ্ছে। এই অবস্থায় সম্পর্কের শৈত্য কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে তা সময়ই বলবে।
যুদ্ধের দামামা বাজল বলে , বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে লাদাখ নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক প্রধানমন্ত্রী মোদীর