ট্রানসিট পাসের আবেদনে সাড়া দেয়নি মধ্যপ্রদেশ সরকার, হাঁটা পথে বাড়ি ফিরতে গিয়েই মৃত্যু শ্রমিকদের
ট্রানসিট পাসের আবেদনে সাড়া দেয়নি মধ্যপ্রদেশ সরকার, হাঁটা পথে বাড়ি ফিরতে গিয়েই মৃত্যু শ্রমিকদের
বাড়ি ফেরা আর হল না। রেললাইন ধরে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে শুক্রবার মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদে মালবাহী ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হল ১৬ জন অভিবাসী শ্রমিকের। ঘটনায় বেঁচে যান তিনজন। সূত্রের খবর, গণপরিবহনের মধ্যমে বাড়ি ফেরার জন্য ওই শ্রমিকেরা ইতিমধ্যেই ই-পাসের আবেদনও করেন মধ্যপ্রদেশ সরকারের ওয়েবসাইটে। কিন্তু সাড়া না মেলায় একপ্রকার বাধ্য হয়েই পা হাঁটা পথ ধরেন তারা। আর তাতেই ঘটে বিপত্তি।
বরাত জোরে প্রাণে বাঁচেন তিন জন
অভিবাসী শ্রমিকের এই দলটি মহারাষ্ট্রের জালনা থেকে মধ্যপ্রদেশের ভুসাভাল যেতে ১৫৭ কি.মি. পথ পায়ে হেঁটেই পাড়ি দেয়। এর জেরেই প্রাণ হারাতে হয় গোচা দলটির বেশির ভাগ সদস্যকেই। ঘটনায় বেঁচে যান ধীরেন্দ্র সিং। উমেরিয়ার ধীরেন্দ্র জানান, "আমরা আর অপেক্ষা করতে পারছিলাম না। আমরা ই-পাসের জন্য অনলাইনে দরখাস্ত করেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর পাইনি। তাই মধ্যপ্রদেশে ফেরার রাস্তা ধরেছিলাম।"
কি ঘটেছিল এদিন ?
ধীরেন্দ্র সিং জানান, তিনি তাঁর দলের থেকে একটু দূরত্ব বজায় রেখে হাঁটছিলেন, ফলত তিনি বেঁচে যান। সূত্রের খবর, ভোর ৫টা ১৫-এর একটি মালবাহী গাড়িতে চাপা পড়েন শ্রমিকরা। পিছিয়ে পড়ার দরুণ ওই তিন শ্রমিক ট্রেনটিকে দেখতে পেয়ে তার সঙ্গীদের অবগত করার চেষ্টাও করেন। কিন্তু ক্লান্ত ও অবসন্ন শ্রমিকরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন, ফলত তাঁদের চেঁচামেচি বৃথা যায়।
কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণা পৌঁছাচ্ছে না শ্রমিকদের কাছে
মৃত শ্রমিকদের মধ্যে ১২ জন মধ্যপ্রদেশের আদিবাসী অধ্যুষিত শাহদুল জেলার ও বাকিরা উমেরিয়ার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তারা প্রত্যেকেই মহারাষ্ট্রের জলনায় লোহার কারখানায় কাজ করতেন বলে খবর। ৪০ দিনের লকডাউনে আটকে পড়া শ্রমিকদের বাড়ি ফেরাতে 'শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন' চালু করলেও অনেক শ্রমিকের কাছেই সেই খবর পৌঁছায়নি বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। নিকটবর্তী স্টেশন না থাকায় বিভিন্ন জায়গায় অনেকে অভিবাসী শ্রমিকই বর্তমানে পায়ে হেঁটে রওনা দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেন।
ই-পাস পেতে গেলেও দুর্ভোগের শিকার শ্রমিকেরা
অন্যদিকে অনলাইনে মধ্যপ্রদেশ সরকারের 'ম্যাপ-আইটি'-র মাধ্যমে ই-পাস পেতে গিয়ে দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন অসংখ্য শ্রমিকেরা। শুক্রবার সরকারি এই ওয়েবসাইটটি পুরোপুরি বন্ধই করে দেওয়া হয় বলে জানা যায়। সূত্রের খবর, একসাথে অনেক দরখাস্ত জমে যাওয়ার ফলেই সার্ভারে সমস্যার কারণেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এদিকে আধিকারিকরা সমস্যা দ্রুত সারিয়ে তোলার আশ্বাস দিলেও যে স্বস্তিতে নেই শ্রমিকরা, তা এই ঘটনাতেই স্পষ্ট।
মৃত্যু ঘিরে শুরু রাজনৈতিক তরজা
ম্যাপ-আইটির পক্ষে জানান হয়েছে, এখনও পর্যন্ত প্রায় ২.২১ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকের আবেদন জমা পড়েছে, ৯৯০০০ জন ই-পাস পেয়েছেন ও ৩৪০০ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সমাজকর্মী অজয় দুবে জানিয়েছেন, "পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে নিযুক্ত আধিকারিকরা অধিকাংশ সময় ফোনই তোলেননা। ফলত এই মর্মান্তিক ঘটনার জন্য ওই সরকারি কর্মীরাই দায়ী।" মধ্যপ্রদেশের বিজেপি মুখপাত্র রাহুল কোঠারি বলেছেন, "এখনও পর্যন্ত মধ্যপ্রদেশ সরকার প্রায় ১ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিককে ঘরে ফিরিয়েছে। বাদ পড়া শ্রমিকের সংখ্যা খুবই কম।"
বিনিয়োগ টানতে নয়া উদ্যোগ, ডলারেও শেয়ার কেনাবেচার নতুন সুযোগ তৈরি করলেন নির্মলা সীতারমন