প্রতি হাজার জনে কতজন মুসলিম? কারা আসলে সংখ্যালঘু ভারতে?
সর্বধর্ম, বর্ণ জাতির সমন্বয়ের দেশ ভারতবর্ষ। কিন্তু মাঝে মাঝে সংখ্যালঘু বনাম সংখ্যাগুরু অধিকার পাওয়া নিয়ে আলোচনায় সরগরম হয় বাংলার রাজনীতি! এখন কারা এই সংখ্যাগুরু! কারাই বা সংখ্যালঘু ভারতে? এ প্রশ্ন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সংবাদমাধ্যমে ঘুরপাক খায়৷ কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের মতে ভারতে মাত্র ছ'টি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রয়েছে৷ আবার সংখ্যালঘু ক্যাটাগরিতে আসার যে প্যারামিটার রয়েছে তাতে ভারতে প্রায় প্রতি পঞ্চম ব্যক্তি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তর্গত, ১০০০ জন ভারতীয়ের এর মধ্যে প্রায় ১৯৩ জন সংখ্যালঘু।
তথ্য বলছে মুসলিমরা ভারতের বৃহত্তম সংখ্যালঘু গোষ্ঠী। শেষ আদমশুমারী অনুযায়ী প্রতি ১০০০ জনে ১৪২ জন মুসলিম রয়েছে দেশে। আবার ভারতীয়দের মধ্যে পার্সি সংখ্যায় খুবই কম, কারণ ১০০০ মাত্র ছ'জন পার্সি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ রয়েছেন ভারতে। ভারতে 'সংখ্যালঘু' শব্দটি রাজনৈতিক বিতর্কে প্রাধান্য পায়। বিশেষ করে কোনও কারণে মুসলিম সম্প্রদায়ের কোন ইস্যু সামনে এলেই 'সংখ্যালঘু তোষণ' কিংবা 'সংখ্যালঘু পীড়ন'এর মতো বিষয়গুলি সামনে নিয়ে আসনে অনেকে৷ কিন্তু মজার বিষয় ভারতের মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশেরও বেশি মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ৷ এমনকি সপ্তম-সবচেয়ে জনবহুল দেশ নাইজেরিয়াতেও ভারতের তুলনায় মুসলমানরা সংখ্যায় কিছুটা কম। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলির মধ্যে, শুধুমাত্র ইন্দোনেশিয়া এবং পাকিস্তানে ভারতের থেকে বেশি সংখ্যায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করেন৷
অন্যদিকে, ভারতের ক্ষুদ্রতম শহর কাপুরথালার মতো জায়গাতে দেশের সমস্ত পার্সিদের থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে৷ তাহলে কে এবং কিভাবে সিদ্ধান্ত নেবে ভারতে কাকে সংখ্যালঘু নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হবে? কোন সম্প্রদায় ভারতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মর্যাদা পাবে তা কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নেয়। এটি ন্যাশনাল কমিশন ফর মাইনরিটিস অ্যাক্ট ১৯৯২ এর অধীনে করা হয়ে থাকে৷ ভারতে শুধুমাত্র ১৯৯২ সালের আইনের ২ এর সি ধারার অধীনে বর্ণিত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের সংখ্যালঘু নাগরিক হিসাবে গণ্য করা হয়। চলতি সপ্তাহের শুরুতে কেন্দ্র সরকার সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছে যে রাজ্যগুলি তাদের আঞ্চলিক এখতিয়ারের কোন জাতিগোষ্ঠী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত হবেন তা নির্ধারণ করতে পারে।
ভারতীয় জনতা পার্টির নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায়ের দায়ের করা একটি জনস্বার্থ মামলার প্রতিক্রিয়া হিসাবে এই উত্তর দিয়েছে কেন্দ্র। আবেদনকারী বিজেপি নেতার দাবি ছিল যে কিছু রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল যেমন জম্মু ও কাশ্মীর, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর, মিজোরাম, লাক্ষাদ্বীপ এবং পাঞ্জাবে যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের মানুষ তারাই সংখ্যালঘু নাগরিক হিসাবে বিবেচিত হয় আসছেন এবং তারা অযথা সুবিধা ভোগ করে থাকেন। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদি এবং বাহাইধর্মের অনুসারীরা এই রাজ্যগুলিতে একটি জনসংখ্যাগত সংখ্যালঘু কিন্তু সুবিধাগুলি থেকে বঞ্চিত। প্রসঙ্গত কেন্দ্র সারা দেশে মাত্র ছ'টি সম্প্রদায়কে জাতীয় স্তরে সংখ্যালঘুর মর্যাদা দিয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচটি মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ এবং পার্সিরা৷ ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে কেন্দ্র সরকার জৈনদেরও এই সংখ্যালঘু তালিকায় যুক্ত করেছিল৷