১৮ বছর ধরে খোঁজার পর ‘মিলল’ ১৪ বছরের কিশোর! সব আশা নিভল এক লহমায়
আশা ছিল একদিন ফিরে আসবেই সে। ১৮ বছর ধরে সেই আশা বুকে নিয়েই দিন কাটছিল সওকত ও তাঁর স্ত্রীর। মনের মধ্যে জমে থাকা সেই আশাটুকুরও অবসান হল শেষে।
আশা ছিল একদিন ফিরে আসবেই সে। ১৮ বছর ধরে সেই আশা বুকে নিয়েই দিন কাটছিল সওকত ও তাঁর স্ত্রীর। মনের মধ্যে জমে থাকা সেই আশাটুকুরও অবসান হল শেষে। ১৮ বছর আগে নিখোঁজ শিশুর কঙ্কাল উদ্ধার হল বাড়ি থেকে মাত্রে কয়েক মিটার দূরে। পরিত্যক্ত কুয়ো থেকে উদ্ধার হল শিশুর জামা-প্যান্টও। দেড় যুগ পর ফের শোক গ্রাস করল দিল্লির আলিপুরে মুখমেলপুর গ্রামের আলি পরিবারে।
মুখমেলপুরের ১৪ বছরের কিশোর জাভেদ আলি ২০০০ সালে ২২ জুন সন্ধ্যায় নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। মুদির দোকানে পাঠিয়েছিল মা, আর ফিরে আসেনি সে। তারপর জাভেদকে খোঁজার জন্য কি না করেছেন সওকত আলি ও তাঁর পরিবার। দেশের বিভিন্ন থানায় থানায় ঘুরেছেন সওকত। ঘুরেছেন হোমগুলিতে। কিন্তু কোথাও খোঁজ মেলেনি জাভেদের। শুধু মাঝে একবার একটা ফোন এসেছিল মুক্তিপণ চেয়ে। ব্যস, ওইটুকুই যা ক্লু। বাকি সবই হতাশা।
সওকত ও তাঁর স্ত্রী সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আশায় মসজিদে মসজিদে ঘুরেছেন, মন্দিরে মন্দিরে মানত করেছেন। ধরনা দিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দিক্ষিতের কাছে, প্রশাসনকে করেছিলেন ঘরঘাট। তবু ফিরে আসেনি জাভেদ। তারপর হাল ছেড়ে ভোলার চেষ্টা করছিলেন ছেলেকে। কিন্তু ভোলা কি যায়! ভুলতেও পারেননি, মনের কোণে স্থান দিয়েছিলেন শুধু একটু আশাকে- ছেলে একদিন ফিরে আসবেই।
কিন্তু সব আশা শেষ হয়ে গেল জাভেদের মা যখন শনাক্ত করলেন জাভেদের পরণে থাকা নীল জামা আর খাকি প্যান্ট। সেদিন ওই পোশাক পরেই বেরিয়েছিলে সে। আর ফিরে আসবে না জাভেদ। সব শেষ হয়ে গেল! এতদিন তবু একটু স্বান্ত্বনা ছিল, যেখানেই থাকুক ছেলেটা অন্তত বেঁচে আছে। সেটুকুও স্বান্ত্বনাও আর রইল না! ১৮ বছর ধরে কেঁদে চলেছেন মা-বাবা-বোন। আজও কাঁদছেন। জাভেদের জন্য এ কান্নার শেষ হবে না আর কোনওদিনই।
উদ্ধার হওয়া কঙ্কালের ডিএনএ টেস্ট করবেন পুলিশ কর্তারা। তারপরই নিশ্চিত হবেন তাঁরা যে, ওই কঙ্কাল জাভেদেরই। কিন্তু মা-বাবা নিশ্চিত হয়েই গিয়েছেন ওই কঙ্কালই তাঁদের জাভেদের। আর কোনও আশা নেই। জাভেদকে হারিয়ে কাঁদছেন বন্ধুরাও। জাভদ যে তাঁদের টিমের সুপার ব্যাটসম্যান ছিল। ১৮ বছর আগের কিশোর এখন তাঁদের মতোই তরতাজা যুবক হত। জাভেদের বাবা-মায়ের মতো পঙ্কজ-ধীরাজদেরও পরিতাপের শেষ নেই।
পরিত্যক্ত কুয়োর কাছে নির্মাণ কাজ চলাকালীন এই কঙ্কাল দেখকে পাওয়া যায়। তারপর পঙ্কজই খবর দেয় পুলিশকে। পুলিশ আসার পর উদ্ধার হয় কঙ্কাল, উদ্ধার হয় নীল রঙের টি সার্ট, খাকি প্যান্ট। তা দেখে জাভেদের মা শনাক্ত করেন ওই পোশাক পরেই বেরিয়েছিল জাভেদ, আর ফিরে আসেনি। এদিন যে ঘটনা ঘটল, এরপর আর কোনওদিনও ফিরে আসবে না সে। শুধু মনের মণিকোঠায় তোলা থাকবে জাভেদের স্মৃতি। সে স্মৃতি বড়ই বেদনার।