একসঙ্গে ১৪ টি উপনির্বাচন, কোথায় কী অবস্থায় বিজেপি ও বিরোধী দলেরা
সোমবার সারা দেশে লোকসভা ও বিধানসভা আসন মিলিয়ে একসঙ্গে ১৪ টি উপনির্বাচন হচ্ছে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে এই উপনির্বাচনগুলি বিজেপি ও তার বিরোধী দুপক্ষের কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সোমবার উত্তরপ্রদেশের কৈরাণ, মহারাষ্ট্রের ভাণ্ডারা-গন্ডিয়া ও পালগর এবং নাগাল্যান্ডের একমাত্র লোকসভা আসনে উপনির্বাচন হচ্ছে। এছাড়া বিধানসভা একটি করে আসনে উপনির্বাচন হচ্ছে কেরালা, উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক, মেঘালয়, ঝাড়খন্ড, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, পঞ্জাব ও উত্তরাখণ্ডে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে এই উপনির্বাচনগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মাত্র ক'দিন আগে কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচন, বিজেপি বিরোধী জোটের পালে হাওয়া দিয়েছে। বিজেপিকে রুখে দেওয়ার পথ পাওয়া গেছে মনে করছেন বিরোধীরা। তারপর মানুষ এখনও বিজেপিতে আস্থা রাখছে, নাকি সত্যিই হাওয়া ঘুরতে শুরু করেছে, তার দিশা মিলতে পারে এই উপনির্বাচনগুলিতে। পাশাপাশি লোকসভার চারটি আসন জিততে মরিয়া বিজেপি। ২০১৪-য় বিপুল সাফল্য লাভের পর গত চার বছরে তারা বেশিরভাগ উপনির্বাচন হেরেছে। ২৮২ থেকে নামতে নামতে এখন তাদের আসন সংখ্যা ২৭২।
কৈরাণ লোকসভা আসন উত্তর প্রদেশের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কাছে প্রেস্টিজ ইস্যু। মাত্র কয়েকমাস আগে বিরোধী জোট গোরক্ষপুর ও ফুলপুর লোকসভা উপনির্বাচনে জয়লাভ করেছে। মপখ পুড়েছে আদিত্যনাথের। বিজেপি সাংসদ হকুম সিংয়ের মৃত্যুর কারণে এখানে উপনির্বাচন হচ্ছে। প্রার্থী হয়েছেন তাঁর মেয়ে মৃঙ্গাংকা সিং। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রীয় লোক দল (আরএলডি)-এর তাবাসুম হাসান। তাবাসুমকে সমর্থন করছে কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি (এসপি) এবং বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি)।
মহারাষ্ট্রে, ভান্ডারা-গন্ডিয়া ও পালগর দুটি আসনেই লড়াইটা মূলত প্রাক্তন এনডিএ সঙ্গী শিবসেনা-র সঙ্গে বিজেপির। পালগড়ে বিজেপির এমপি চিন্তমান ওয়ানাগার মৃত্যুর কারণে উপনির্বাচন হচ্ছে। চিন্তামানের পুত্র শ্রীনিবাস ওয়ানাগা এখানে প্রার্থী হয়েছেন। তবে শিবসেনার হয়ে। বিজেপি প্রার্থী করেছে কংগ্রেস ছেড়ে আসা রাজেন্দ্র গভিতকে। আবার কংগ্রেসের প্রার্থী প্রাক্তন সাংসদ দামু শিংদা।
এ বছরের শুরুতে ভাণ্ডারা-গণ্ডিয়া আসনের বিজেপির সাংসদের নানা পাটোল পদ এবং দল ছেড়ে আবার কংগ্রেসে ফিরে এসেছেন। এবর তিনি নিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও এনসিপি-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী মধুকর কুকড়ের হয়ে জোর প্রচার চালিয়েছেন। এ আসনে বিজেপি প্রার্থী করেছে হেমন্ত পাটলেকে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে নাগাল্যান্ডে নেফিউ রিও সাংসদ পদ থেকে পদত্যাগ করে বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। পরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন। ফলে সাংসদ আসনটি ফাঁকা হয়ে যায়। নির্বাচনে লড়ার জন্য তাঁদের জোট পিপলস ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তোখেহো ইয়েপথোমিকে প্রার্থা করেছে। তাঁর সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইতে আছেন নাগা পিপলস ফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী সি অ্যাপোক জামির।
বিধানসভা নির্বাচন হবে কেরলের চেঙ্গানুর, উত্তরপ্রদেশের নুরপুর, কর্ণাটকের রাজরাজেশ্বরী নগর, মেঘালয়ের আম্পাতি, ঝাড়খণ্ডের সিলিয়া এবং গোমিয়া, বিহারের জকিহাট, পশ্চিমবঙ্গের মহেশতলা,পাঞ্জাব সাহকোট এবং উত্তরাখণ্ডের থারালিতে।
দীর্ঘ নাটকের পর কর্ণাটকে সমাপ্ত হয়েছে বিধানসভা নির্বাচন পর্ব। কিন্তু এখনও একটি আসনের নির্বাচন বাকি। গত ৯ মে, নির্বাচনের তিন দিন আগে, জালাহাল্লির একটি ফ্ল্যাট থেকে ৯ হাজার ৫৬৭ টি ভোটার আইকার্ড বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। তাই ভোট স্থগিত ছিল। এখানে, বিজেপি, কংগ্রেস এবং জেডি (এস) তিনদলই প্রতিদ্বন্দিতা করছে। ফলা ঘোষণার পর জোট সরকার হলেও এই আসনে কংগ্রেস ও জেডিএস-এর পৃথক প্রার্থীই রয়েছে। মনে করা হচ্ছে এই আসনের ফলই বলবে জেডি (এস) -কংগ্রেস জোট সরকারকে কিভাবে দেখছে কর্ণাটক।
দুর্ঘটনায় বিজেপি'র এসএলএ লোকেন্দ্র সিং মারা যাওয়ায় উত্তর প্রদেশের নূরপুরে উফনির্বাচন হচ্ছে। বিজেপি তাঁর মেয়ে অবনি সিংকে প্রার্থী করেছে। সপা ও আরএলডি'র মধ্যে জোট হয়েছে। সপা প্রার্থী নাইমুল হাসানকে সমর্থন করছে আরএলডি। বিএসপি কোনও প্রার্থী না দিলেও বিএসপি প্রধান মায়াবতী তাদের সমর্থনের কথাও জানাননি। কৈরাণের ক্ষেত্রেও তিনি নীরব রয়েছেন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গোরক্ষপুর ও ফুলপুর উপনির্বাচনের সময় তাঁর যে সক্রিয় জোট ভূমিকা ছিল তা এবার দেখা যাচ্ছে না।
বিহারে, জকিহাটে জেডি (ইউ) এবং আরজেডির মধ্যে মুখোমুখি লড়াই হচ্ছে। সর্বাত্মক প্রতিযোগিতা দেখতে পাবে। মার্চ মাসে রাজ্যে দুটি বিধানসভা উপনির্বাচনে, বিজেপি ও আরজেডি একটি করে আসন জিতেছিল। আরজেডি এই নির্বাচনে জিতলে শুধু তারাই নয় লাভবান হবে বিজেপি বিরোধী জোটও।
পশ্চিমবঙ্গে মহেশতলা বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপি এবং সিপিআই (এম) নির্বাচনে লড়ছে। কংগ্রেসের কোনও প্রার্থী নেই। তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন দুলাল দাস, প্রয়াত এসএলএ কস্তুরি দাসের স্বামী। কস্তুরি দেবী মারা যাওয়াতেই এই কেন্দ্রে উপনির্বাচন হচ্ছে। এই উপনির্বাচনে জিততে পারলে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে প্রধান বিরোধী হিসেবে নিজেদের আসনটা পাকা করতে পারবে।
সিপিএম বিধায়ক কে কে রামচন্দ্রন নায়ারের মৃত্যুর কারণে কেরলের চেঙ্গানুর আসনের উপনির্বাচন হচ্ছে। কেরলে লড়াইটা ত্রিমুখি - লেফ্ট ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (এলডিএফ), ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউডিএফ) এবং এনডিএ। নির্বাচনের ফলকে মনে করা হচ্ছে একইসঙ্গে পিনারাই বিজয়নের নেতৃত্বে এলডিএফ সরকার এবং নরেন্দ্র মোদি চার বছেরর কেন্দ্রীয় সরকারের পরীক্ষা। পাশাপাশই এই আসনটি কংগ্রেসের বরাবরের জেতা আসন ছিল। তাই সেটা পুনর্দখল তাদের লক্ষ্য।
এই বছর ফেব্রুয়ারিতে অকালি দলের বিধায়ক অজিত সিং কোহারের মৃত্যুতে এই পাঞ্জাবের সাহকোট আসনটি ফাঁকা হয়। এই আসনে লড়ছে কংগ্রেস, শিরোমনি অকালি দল (এসএডি) এবং আম আদমি পার্টি (এএপি)। কংগ্রেসের প্রার্থী হরদেব সিং লাডলি। কংগ্রেসের প্রার্থী কোহার পুত্র নাইব সিং কোহার। আপ প্রার্থী হয়েছেন রতন সিং কাক্কার কালান। এই ভোটে রাজ্যে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস তার জয়ের ধারা বজায় রাখতে চাইছে। অন্যদিকে অজিত সিং কোহার গত পাঁচবার এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ হয়েছিলেন। তাই অকালি দল তাদের আসন ধরে রাখতে চাইছে।
ঝাড়খণ্ডে, রাঁচি জেলার সিলিয়া আসনে মুশোমুখি লড়াই এজেএসইউ পার্টির প্রধান সুদেশ মাহাতো এবং ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)-র প্রার্থী সীমা মাহাতো মধ্যে। বোকোরোর গোমিয়া আসনের বিধায়ক ছিলেন যোগেন্দ্র মাহাতো। তিনি গত ফেব্রুয়ারি মাসে অযোগ্য ঘোষিত হয়েছেন। তার জেরে এই উপনির্বাচন। এখানে ত্রিমুখী লড়াই ভারতীয় জনতা পার্টি, এজেএসইউ পার্টি এবং জেএমএমের মধ্যে।
দক্ষিণ গারো পাহাড়ে মেঘালয় এর আম্পাতি আসনের উপনির্বাচনে লড়াই ক্ষমতাসীন এনপিপি এবং বিরোধী কংগ্রেস মধ্যে। উত্তরাখণ্ডের থারালি বিধানসভা আসনে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে।