'হাসপাতালে যেতে রাজি হয়নি মুক্তামণি', প্রাণ গেল বিরল রোগে
সাতক্ষীরায় বিরল রোগে আক্রান্ত ১২ বছরের শিশু মুক্তামণি মারা গেছে। বুধবার সকাল ৮টার দিকে নিজ বাড়ি সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামে তার মৃত্যু হয় ।
সাতক্ষীরায় বিরল রোগে আক্রান্ত ১২ বছরের শিশু মুক্তামণি মারা গেছে। বুধবার সকাল ৮টার দিকে নিজ বাড়ি সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামে তার মৃত্যু হয় ।
গণমাধ্যমে মুক্তামণির শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর দেখে কয়েকদিন আগে বাবা ইব্রাহিম হোসেনকে ফোন করে খোঁজ নেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক অধ্যাপক সামন্ত লাল সেন।
বিবিসির সাথে আলাপকালে মি: সেন বলছিলেন, মুক্তামণির হাতের ছবি পাঠানোর পাশাপাশি তিনি প্রয়োজনে মেয়েটিকে ঢাকায় নিয়ে আসার কথাও বলেন তার পরিবারকে।
তবে মুক্তামণি কোন অবস্থায় ঢাকায় আসতে রাজী হচ্ছে না বলে জানিয়েছিলেন বাবা ইব্রাহিম হোসেন।
"এছাড়া মেয়ের সুস্থতার কোন লক্ষণ না দেখে তার মধ্যেও কোন আগ্রহ দেখা যায়নি" বলেন ডা: সেন।
পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে থাকলে সাতক্ষীরা সদরে তার চিকিৎসা চালিয়ে নিয়ে যেতে ড. সামন্ত লাল গতকাল একটি অ্যাম্বুলেন্সে দুজন সিভিল সার্জনকে পাঠান। কিন্তু কোন অবস্থাতেই চিকিৎসার জন্য রাজী হয়নি মুক্তামণির পরিবার।
আরো পড়তে পারেন:
দিনে দিনে বুড়িয়ে যাচ্ছে ১১ বছরের নীতু
মুক্তামণির শতভাগ আরোগ্য সম্ভব নয় বলে আগেই জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। তার হাতে ওই বিরল রোগের পাশাপাশি ফুসফুস ও লিভারেও সমস্যা ছিলো বলে জানা গেছে।
"এছাড়া অতিরিক্ত রক্তশূণ্যতা ও হিমোগ্লোবিনের ঘাটতির কারণে তার হার্ট ফেইলিওর হতে পারে" বলে ধারণা করছেন ড. সামন্ত লাল।
তিনি বলেন, "গত কয়েকদিন থেকেই মুক্তামণির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। শুনেছি তার হাত অনেক ফুলে গিয়েছিলো, ক্ষতস্থান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিলো, পোকা বের হচ্ছিলো। আর হাতের ওই পচন শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ছিলো। এই কয়দিন মেয়েটিকে অসহনীয় যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে।"
দেড় বছর বয়স থেকে রক্তনালীতে টিউমার বা হেমানজিওমা নামে এই বিরল রোগে আক্রান্ত হয় শিশু মুক্তামণি। ছয়মাস ধরে ঢাকায় চিকিৎসা শেষে গত ডিসেম্বরে তারা গ্রামের বাড়ি ফিরে যান।
ড. সামন্ত লালের তত্ত্বাবধানেই গত বছর মুক্তামণির অস্ত্রপচার সম্পন্ন হয়েছিলো। বাড়িতে কিছুদিন মুক্তামণি ভালো থাকলেও, পরবর্তীতে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে।
কয়েক দিন আগে মুক্তামণির স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে গেলে তারা বাবা ইব্রাহিম হোসেন বিবিসি বাংলাকে জানান, একদিন দেরী করে ড্রেসিং করতে গিয়ে দেখেন মুক্তামণির হাতের ক্ষতস্থান থেকে পোকা বের হচ্ছে। এছাড়া হাতের কয়েকটি স্থানে গর্তের মতো হয়ে সেখান থেকে রক্ত বের হচ্ছিল বলেও জানান তিনি।
অস্ত্রোপচার করে হাতে যে চামড়া লাগানো হয়েছিলো সেগুলো পচে গিয়ে এমন অবস্থা হয়েছে বলে ধারণা করছিলেন মুক্তামণির বাবা ইব্রাহিম হোসেন।