করোনা সম্পর্কিত ১০টি শব্দ, যা বছরের সেরা শব্দ হিসাবে স্থান পেয়েছে বিভিন্ন অভিধানে
করোনা সম্পর্কিত ১০টি শব্দ, যা বছরের সেরা শব্দ হিসাবে স্থান পেয়েছে বিভিন্ন অভিধানে
২০২০ সাল আমাদের কাছে খুবই কঠিন বছর হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। একে তো কোভিড–১৯, গোটা বিশ্ব জুড়ে মানুষ সামাজিক আর্থিক মধ্য দিয়ে গিয়েছে এবং মানসিক বদল ঘটেছে। এর সঙ্গে বেশ কিছু নতুন শব্দের সঙ্গেও পরিচিতি ঘটেছে, তবে সেগুলি মোটেল ভালো শব্দ নয়। তবে নতুন শব্দ শেখাতে সফল হয়েছে এই ২০২০ সাল।
কোভিড–১৯ যুগ খুব সফলভাবে আমাদের জীবনযাত্রাকে নতুনভাবে আকার দিয়েছে, তেমনি আমাদের শব্দভাণ্ডারেও যোগ হয়েছে নতুন শব্দ। এই মহামারিটর সঙ্গে লড়াই করার সময়, বিশ্ববাসী কিছু শব্দের ব্যবহারের তাৎপর্যপূর্ণ বৃদ্ধি লক্ষ্য করেছে, যা বিশেষভাবে নোভেল করোনা ভাইরাস রোগের সঙ্গে সম্পর্ককিত এবং এই রোগের বিস্তার যেমন আমাদের জীবনে এখনও প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে, তেমনি আমরা এখন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি এটি সাধারণ জনগণের কাছে একটি নতুন শব্দভাণ্ডার সাফল্যের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
লকডাউন
কলিনস ডিকশনারি ইতিমধ্যে ‘লকডাউন'কে ২০২০ সালে সর্বাধিক ব্যবহৃত শব্দ হিসাবে ঘোষণা করেছে। এই অভিধানটি লকডাউনকে, ‘ভ্রমণ, সামাজিক যোগাযোগ এবং জনবহুল জায়গাতে যাওয়ার ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ' হিসাবে সজ্ঞায়িত করেছে। এটি এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার জন্য এবং নিজের এবং অন্যদের সুরক্ষার জন্য বিশ্বজুড়ে দেশগুলিতে আরোপিত বিধিনিষেধ বর্ণনা করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। এই লকডাউনের সময়, মানুষের বাইরে বেড়োনো নিষেধ ছিল, একমাত্র জরুরি পণ্য কেনার জন্যই বাইরে বেরোড়োর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, তবে শুধুমাত্র পরিবারের একজনই বাইরে যেতে পারবেন।
মহামারি
জনপ্রিয় আমেরিকান অভিধান মেরিয়াম ওয়েবস্টার ‘মহামারি'-কে ২০২০ সালের বছর সেরা শব্দ হিসাবে ঘোষণা করেছে। ‘প্যানডেমিক' শব্দটি এসেছে ল্যাটিন ও গ্রিক শব্দ ‘প্যানডেমোস' থেকে, যার অর্থ, ‘সাধারণ জনগণ'। এটাকে পরে ভেঙে ‘প্যান' শব্দের অর্থ ‘অল' এবং ‘ডেমোস' শব্দের অর্থ ‘মানুষ' করা হয়। এই শব্দটি একটি অসুস্থতা, যার প্রভাব বিরাটভাবে জনসংখ্যার ওপর পড়ে, যা ছড়িয়ে পড়ে সম্প্রদায় থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে, বর্ণনা করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু করোনা ভাইরাসকে প্যানডেমিক বা মহামারি হিসাবে ঘোষণা করার পর এই শব্দটি জরুরী সুনির্দিষ্টতা গ্রহণ করেছে এই বছর। যখন আমেরিকায় এই ভাইরাসে প্রথম মৃত্যু এবং ক্রুজ জাহাজে এই প্রকোপ দেখা দেয় তখন এই শব্দের ব্যবহারের প্রবণতা শুরু হয়।
কোয়ারেন্টাইন
২০২০ সালের সেরা শব্দ হিসাবে কেমব্রিজ অভিধান বেছে নিয়েছে ‘কোয়ারেন্টাইন'কে। এই শব্দটি তাঁদের অভিধানে সবচেয়ে বেশি খোঁজা হয়েছে। এই শব্দের অর্থের সঙ্গে মিল রয়েছে আইসোলেশনের এবং এ বছর এই শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়েছে। তবে আইসোলেশনের বিপরীত, কোয়ারেন্টাইনের অর্থ হল বিচ্ছিন্ন ও সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে অন্য কেউ এসে যাতে অসুস্থ হয়ে না পড়ে তার জন্য সেই ব্যক্তির চলাচলের ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা। কোয়ারেন্টাইন জারি করা হয় এমন ব্যক্তির ওপর, যিনি কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত, তাঁর থেকে এই রোগ যাতে অন্যদের ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য তাঁকে আলাদা করে রাখা। ভারত সহ বিশ্বের বহু দেশ কোয়ারেন্টাইন সুবিধার বন্দোবস্ত করেছিল যাতে ওই অঞ্চলের মধ্যে কারা প্রবেশ করছে তা পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
অ্যাসিম্পটোমেটিক
এই অ্যাসিম্পটোমেটিক বা উপসর্গহীন শব্দটি ব্যবহার করা হয় কোভিড-১৯ রোগের নীরব বাহকদের ক্ষেত্রে, অর্থাৎ কোনও ব্যক্তির উপসর্গ ছাড়াই করোনা ভাইরাস রোগটি হয়েছে। কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে , উপসর্গহীন ব্যক্তি জ্বর, শুকনো কাশি, গলা ব্যাথা, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা বা শরীরে কোনও ব্যাথার মতো উপসর্গ দেখা যায় না করোনা টেস্ট পজিটিভ আসার পরও। কিন্তু কোনও কোনও ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র ব্যক্তির ‘প্রিসিম্পটোমেটিক' হতে পারে এবং কিছুদিনের মধ্যেই করোনা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। মানুষ এই উপসর্গবিহীনদের জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন, কারণ তারা যদি পাশ দিয়েও যান অথবা কাছে এসে কথা বলেন, তবে তিনি যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত তা বোঝা যাবে না, যে কারণে অ্যাসিম্পটোমেটিক শব্দটিল ব্যাপক ব্যবহার হয়।
কমোরবিডিটি
এই শব্দটি মূলত একটি চিকিৎসা পরিস্থিতি যা কোনও ব্যক্তির কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হলে খুব অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। কোনও ব্যক্তির কমোরবিডিটি রয়েছে অর্থাৎ সেই পুরুষ বা মহিলা একাধিক রোগে আক্রান্ত বা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা যেমন ক্রনিক কিডনি রোগ, সিওপিডি, স্থুলতা, গুরুতর হৃদযন্ত্রের পরিস্থিতি এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস রয়েছে। অন্যান্য পরিস্থিতিগুলি যে কারোর গুরুতর কোভিড-১৯ রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে তার মধ্যে হাঁপানি, উচ্চ রক্তচাপ, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, ধূমপান এবং টাইপ ১ ডায়াবেটিস অন্তর্ভুক্ত। গোটা বিশ্বের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে কোভিড-১৯-এর চিকিৎসা চলাকালীন যে ৪৮ শতাংশের ওপর রোগী মারা গিয়েছে তাঁদের কমোরবিডিটিস ছিল।
কনটেইনমেন্ট জোন
কোভিড মহামারি চলাকালীন আর একটি সাধারণ ব্যবহৃত শব্দটি হল 'কনটেইনমেন্ট জোন' যা কোনও ভৌগলিক অঞ্চলকে সীমিত চলাচল সহ বা প্রাদুর্ভাবের সীমিত প্রবেশাধিকার সহ বর্ণনা করে। কনটেইনমেন্ট শব্টি ব্যবহৃত হয়েছিল, যে শব্দের অর্থ একটি সংক্রমক রোগ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিস্তার বা প্রসারণকে সীমাবদ্ধ করার একটি আইন বা নীতি।
পিপিই
পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই), একটি বিশেষ ধরনের পোশাক যেটি স্বাস্থ্য কর্মী ও চিকিৎসকদের মারণ ভাইরাসের সংস্পর্শ ও এয়ার বোন কণা থেকে রক্ষা করবে। পিপিই এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যেটি সাধারণ পোশাকে শরীরের যে সব অংশ, যেমন নাক, মুখ, চোখ, হাত ও পা বেরিয়ে থাকে, তা এই পিপিই পোশাকে সম্পূর্ণভাবে ঢাকা পড়ে যাবে। কোভিড-১৯ মহামারির সময় হু গ্লাভস, মেডিক্যাল মাস্ক, গগলস, ফেস শিল্ড, গাউন, রেস্পিরেটর এবং অ্যাপ্রন সহ পিপিই কিটের তালিকা করে দেয়। এটি বিশেষ করে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত মানুষদের জন্যই তৈরি করা, যাঁরা কোরনা ভাইরাস রোগীর কাছে এসে চিকিৎসার কাজে সহায়তা করছেন।
ডব্লিউএফএইচ
এই সংক্ষিপ্ত শব্দটি হল ‘ওয়ার্কং ফ্রম হোম' বা ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম'। অফিস বাদে দূর থেকে কাজ করাকে বর্ণনা করা হয়েছে ওয়ার্ক ফ্রম হোম হিসাবে। এই ধারণাটি করোনা ভাইরাস রোগের প্রকোপের পর পরই জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং বিভিন্ন সংগঠন তাঁদের কর্মীদের সুরক্ষিত রাখতে বাড়িতে বসেই কাজ করতে বলেছে। এই ব্যাপারটি এখন এতটাই ফলদায়ক হয়ে গিয়েছে যে অনেক সংস্থাই হয়ত করোনা পরবর্তী কালেও বাড়ি বসে কাজ বা ওয়ার্ক ফ্রম হোমকে বেশি অগ্রাধিকার দেবে।
সোশ্যাল ডিসটেন্সিং বা সামাজিক দুরত্ব
এটি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ যা সাধারণত কোভিড-১৯ যুগে সুরক্ষা ব্যবস্থা হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই শব্দটি প্রথম ব্যবহার হয়েছিসল ১৯৫৭ সালে এবং তখন এটাকে বর্ণনা করে বলা হয়েছিল যে কোনও ভাইরাসের সংস্পর্শে না আসার জন্য সামাজিক দুরত্ব প্রয়োজন, বর্তমানে তা কোভিড-১৯। করোনা সংক্রমিত ব্যক্তির থেকে দূরে বা এই সময় মানুষের সঙ্গে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে সব কাজ করতে হবে। কারণ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রুখতে সামাজিক দুরত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
স্যানিটাইজার/হ্যান্ড স্যানিটাইজার
এটি এমন একটি পদার্থ বা পণ্য যা জীবাণু হ্রাস করতে বা নির্মূল করতে ব্যবহৃত হয়। এই শব্দটি করোনা ভাইরাস সম্পর্কে হু-এর নির্দেশিকায় উল্লেখ করার পরে হাত ধোওয়া এবং নিয়মিত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা কোভিড-১৯ প্রতিরোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে ট্রেন্ড হয়ে গিয়েছিল। জনসাধারণকে প্রায় ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে তাদের হাত ধোওয়া বা অ্যালকোহল ভিত্তিক হ্যান্ড রাব বা স্যানিটাইজার ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
২০২০ সালে ভারতীয়দের কৌতূহল কতটা মেটাতে পারল গুগল, সর্বাধিক সার্চের তালিকায় কোন কোন প্রশ্ন?