স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর দুই চোখ, এঁদের জীবনই আমাদের অনুপ্রেরণা
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ১০ নায়ক, যাঁদের জীবন আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়।
একদিন পরেই ৭২তম স্বাধীনতা দিবস। অনেক মানুষের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে এসেছিল ভারতের স্বাধীনতা। তাঁদের জীবনদর্শন, তাঁদের যাপন আমাদের উদ্বুদ্ধ করে আজও। ব্রিটিশ শাসনের হাতে পরাধীন ভারতের চেহারাটা পাল্টে দিয়েছিলেন এঁরাই। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে আসুন স্মরণ করা যাক এরকমই দশ অসামান্য ব্যক্তিত্বকে।
মহাত্মা গান্ধী
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন মহাত্মা। সারা পৃথিবীর ইতিহাসেই তাঁর মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব খুব কম রয়েছেন। তাঁর অহিংসার দর্শন পৃথিবাকে নাড়িয়ে দিয়য়েছিল। যে সময় বিশ্বমানব বিশ্বাস করত যুদ্ধই সব সমস্যার একমাত্র সমাধান, সেসময়ই দাঁড়িয়ে তিনি আউড়েছিলেন অহিংসার বানি। স্বাদীনতা লাভের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর সামনে প্রমাণ করেছিলেন মানবতা, ভালবাসা, অহিংসা দিয়েও জয় করা যায়। তিনি বলতেন, 'পৃথিবীকে বদলানোর আগে নিজেকে বদলাতে হয়'। তা তিনি নিজের জীবনে করেও দেখিয়েছিলেন। তাঁর গোটা জীবনই আমাদের প্রেরণা জোগায়।
সর্দার বল্লবভাই প্যাটেল
তাঁকে বলা হয় ভারতের লৌহমানব। অতি দরীদ্র চাষীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। কষ্ট করে লেখাপড়া করে ইচ্ছের জোরে আইনজীবী হন। পরবর্তীকালে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসকে নেতৃত্বও দিয়েছেন। প্রায় ৫০০টি দেশীয় রাজ্যকে তিনি ভারতের সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন। তাঁর উদ্যোগেই হায়দরাবাদ ভারতের অংশ হয়েছিল।
রানী লক্ষ্মীবাঈ
১৮৪০-৫০ -এর সময়ে তিনি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছিলেন। এক বিশাল নারী সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। শোনা যায় শিশু সন্তানকে কাপড় দিয়ে পিঠের সঙ্গে বেঁধেই তিনি যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
মঙ্গল পাণ্ডে
১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের সবচেয়ে পরিচিত মুখ হলেন মঙ্গল পাণ্ডে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সেনাবাহিনীর কাজ নিয়েছিলেন তিনি। ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন এক নিষ্ঠাবান হিন্দু। তিনি জানতে পেরেছিলেন, ব্রিটিশ সেনাবাহিনী যে বন্দুক ব্যবহার করে তার গ্রীস করা হত গরু ও শুয়োরের চর্বি দিয়ে। ধর্মভ্রষ্ট হওয়ার আশঙ্কাতেই তিনি প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে। পরবর্তীকালে ভারতের প্রথম দিককার স্বাধীনতা আন্দোলনের বিশিষ্ট নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।
ভগত সিং
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্য়তম প্রভাবশালী বিপ্লবী ছিলেন ভগৎ সিং। তিনিই প্রথম ভারতে 'ইনকিলাব জিন্দাবাদ' স্লোগান তুলেছিলেন। যা পরবর্তীকালের বিপ্লবীদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল। শুধু তাই নয় তিনিই প্রথম পূর্ণ স্বরাজের দাবি তোলেন। মাত্র ২৩ বছর বয়সেই তাঁর ফাঁসি হয়েছিল। কিন্তু তাঁর কাহিনি বহু ভারতীয় যুবককে সেইসময় চাগিয়ে দিয়েছিল, স্বাধীনতার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছিল।
সুভাষ চন্দ্র বসু
যুগের থেকে অনেক এগিয়ে ছিলেন সুভাষ চন্দ্র বসু। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য তাঁর বৈপ্লবিক সব চিন্তাধারা, স্ট্র্যাটেজি সেই সময়ের কংগ্রেসের অনেক নেতাই মানতে পারেননি। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের জন্য তাঁর যে তীব্র আকাঙ্খা, তা সেই সময়ের অসংখ্যা ভারতীয়ের মন ছুঁয়ে গিয়েছিল। ব্রিটিশ শাসকদের ভারত ছাড়া করতে প্রায় একার উদ্যোগে তিনি গঠন করেছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজ। সেই ফৌজ কাঁপিয়ে দিয়েছিল ব্রিটিশ শাসনের ভিতকে। সেই কাহিনি আজও আমাদের উদ্বুদ্ধ করে।
অ্যানি বেসান্ত
আদ্যন্ত ব্রিটিশ ছিলেন অ্যানি বেসান্ত। কিন্তু ভারতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য নিজের দেশের বিরোধিতা করতেও পিছপা হননি তিনি। ভারতের স্বাধীনতাই শুধু নয়, তিনি আন্দোলন করেছেন নারী স্বাধীনতার জন্য়ও। মানবতার যে কোনও দেশ, ধর্ম বা জাত হয় না, তা নিজের জীবন দিয়ে বুঝিয়েছিলেন এই ব্রিটিশ মহিলা।
ডা. বি আর আম্বেদকার
ভারতের গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় তাঁকে। প্রথম জীবনে তাঁকে সহ্য করতে হয়েছিল জাতপাতের অত্য়াচার। নিজ দক্ষতায় তিনি উচ্চসিক্ষা লাভ করেন। সারা জীবন তিনি জাতিবৈষম্যের বিরুদ্ধে আরোষহীন লড়াই চালিয়েছেন। অচ্ছুত প্রথার অবসান ঘটে তাঁর হাত ধরে। ভারতের সংবিধানের রচয়িতাও তিনিই।
সরজিনী নাইডু
তিনি ছিলেন জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম মহিলা সভাপতি, ভারতের প্রথম মহিলা রাজ্য়পালও বটে। নিজের লেখা অসংখ্য কবিতার মাধ্যমে পরাধীন ভারতে তিনি স্বাদীনতার বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেইসঙ্গে নারীশিক্ষা, হিন্দু মুসলিম সমানাধিকার-এর মতো বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনা জড়িত ছিলেন। অংশ নিয়েছিলেন সত্যাগ্রহ আন্দোলন খিলাফত আন্দোলনের মতো স্বাধীনতার যুদ্ধেও।
জওহরলাল নেহরু
স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জওহরলাল। বিত্তবান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডে গিয়ে আইন নিয়ে পড়াশোনা করে আইন ব্যবসাই শুরু করেছিলেন। শোনা যায় এক ট্রেন সফরই তাঁর জীবন বদলে দিয়েছিল। সেই ট্রেন সফরে তিনি এক ব্রিটিশ সেনার জেনারেলকে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্য়াকাণ্ড নিয়ে গর্ব করতে শুনেছিলেন তিনি। আর সেই মুহূর্তেই ঠিক করেন ব্রিটিশদের ভারত থেকে উৎখাত করাই হবে তাঁর জীবনের ব্রত।