১০ ঘণ্টা দেরি ট্রেনের, নেই খাবার–জল, বিক্ষুব্ধ পরিযায়ী শ্রমিকদের বিক্ষোভ রেল লাইনে
শ্রমিক
স্পেশাল
ট্রেনে
করে
পরিযায়ী
শ্রমিকরা
বাড়ি
ফিরছিলেন
পূর্ব
উত্তরপ্রদেশ
ও
বিহারে।
কিন্তু
ট্রেনের
অস্বাভাবিক
দেরি
ও
অস্বাস্থ্যকর
পরিবেশের
অভিযোগ
তুললেন
তাঁরা।
রেল
কর্তৃপক্ষকে
যথাযথ
ব্যবস্থা
নেওয়ার
জন্য
রেললাইনে
নেমে
অবরোধ
করেন
পরিযায়ী
শ্রমিকরা।
এমনকী
পরিযায়ীদের
অভিযোগ
তাঁদের
সফরের
সময়
কোনও
খাবারও
দেওয়া
হয়নি।
এরকমই একটি ট্রেনে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম থেকে বিহার ফেরার পথে দীনদয়াল উপাধ্যায় স্টেশনের (মুঘল সরাই স্টেশন নামে পরিচিত) বাইরে সিগন্যালে ট্রেন দাঁড়ালে সেখানে নেমে মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। বিহার পৌঁছাতে ১০ ঘণ্টার সফর করতে হবে তাঁদের। ট্রেনে থাকা এক শ্রমিক ধীরেন রাই বলেন, 'গতকাল রাত ১১টা নাগাদ এখানে ট্রেনটি পৌঁছায় এবং এখনও এখানেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। দু’দিন ধরে আমরা কোনও খাবার পাইনি। এই সফরের জন্য আমাদের ১,৫০০ টাকা করে দিতে হয়েছে।’ আরও একটি ট্রেন মহারাষ্ট্রের পানভেল থেকে উত্তরপ্রদেশের জনপুরে যাচ্ছিল কিন্তু বারাণসীর কাছে ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আটকে রয়েছে। মধ্যরাতের ছহিতে দেখা গিয়েছে, রেললাইনে নেমে পড়েছে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা, অন্য ট্রেন এলেও উঠতে রাজি হননি তাঁরা। তবে রেল পুলিশের হস্তক্ষেপে সরে যান তাঁরা এবং প্রত্যেককে খাবার দেওয়া হয় ও ট্রেন ছাড়ে। ট্রেনের এক যাত্রী গোবিন্দ কুমার রাজভর বলেন, 'আমাদের মহারাষ্ট্রে খাবার দেওয়া হয় কিন্তু উত্তরপ্রদেশে কোনও খাবার পাইনি আমরা। ট্রেনটি কাশিতে ৭ ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে ছিল, তারপর এটি চলে কিন্তু আবার কিছুটা গিয়ে দু’ঘণ্টার জন্য আটকে যায়। এরপর এটা আবার চলতে শুরু করে কিন্তু ফের দাঁড়িয়ে যায়।’
শুক্রবার সন্ধ্যায় পরিযায়ী শ্রমিকরা গুজরাত থেকে 'শ্রমিক স্পেশাল’ ট্রেনে ওঠেন বিহার যাওয়ার উদ্দেশ্যে। শ্রমিকদের অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশের কানপুরে তাঁদের খাবার পরিবেশন করা হয় ঠিকই কিন্তু তা বাসি। কানপুর থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা গিয়েছে, পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে রেল সুরক্ষা বাহিনীর সংঘর্ষ শুরু হয়েছে এবং তাদের প্রশ্ন করা হচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে এ ধরনের অমানবিক আচরণ কেন করা হচ্ছে। কানপুরে সাংবাদিকদের এক পরিযায়ী শ্রমিক বলেন, 'শৌচাগারে পর্যন্ত জল নেই। আমরা কি জল পান করব। আমাদের খাবার জন্য লুচি দেওয়া হয়েছিল সেগুলি শক্ত, সেগুলি চার থেকে পাঁচদিন আগের তৈরি করা, সেই জন্যই আমরা সব খাবার বাইরে ফেলে দিয়েছি।’
আরও একটি ঘটনা ঘটে উন্নাওতে। যেখানে পরিযায়ীরা বেঙ্গালুরু থেকে বিহার ফিরছিলেন। খাবার ও জলের অভাবে ও ট্রেনের অতিরিক্ত বিলম্বের কারণে পরিযায়ীরা প্ল্যাটফর্মের জানলা ভেঙে দেন। উন্নাওয়ের জেলা শাসক রবীন্দ্র কুমার জানিয়েছেন যে তিনি এই ঘটনা জানার পরই পরিযায়ী শ্রমিকরা যাতে কোনও সমস্যার মুখোমুখি না হন সেই জন্য সব ধরনের বন্দোবস্ত করেন। তিনি বলেন, 'আমরা সব স্টেশন মাস্টারকে বলেছি যে সব প্ল্যাটফর্মে যেন পর্যাপ্ত জল থাকে। যাতে যাত্রীদের কোনও কষ্ট না হয়।’
শুক্রবার সরকারিভাবে জানানো হয়েছে যে ৯৩০টি শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে করে ১২.৩৩ লক্ষ মানুষ উত্তরপ্রদেশে ফিরেছেন। লকডাউনের সময় বিভিন্ন রাজ্য থেকে ১৮.২৪ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক উত্তরপ্রদেশ ফিরেছে বলে জানিয়েছেন আধিকারিকরা। পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরাতে ১,১৯৯ টি ট্রেন অনুমোদন করেছে সরকার, জানিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব অবনীশ অবস্থি। সরকারি তথ্যে জানা গিয়েছে, ১ মে থেকে এখনও পর্যন্ত ২,৩১৭টি শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে ৩১ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিককে ফেরানো হয়েছে, প্রাথমিক হিসেবে থাকা ২৪ লক্ষের মধ্যে প্রায় ৭ লক্ষকে ফেরানো হয়েছে।