কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোয় যেন ভূতের আড্ডা, পাক হানায় কী অবস্থা দেখুন
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের দাবি, তাদের হামলায় এঁটে উঠতে না পেরে পাকিস্তানি রেঞ্জাররা তাদের সীমান্তের ওপাড়ে গোলা নিক্ষেপ বন্ধ রাখতে অনুরোধ করেছে।
যেন একেকটা ভুতুরে গ্রাম। এভাবেই বর্ণনা করতে হচ্ছে পাক-ভারত সীমান্তবর্তী কাশ্মীরি গ্রামগুলিকে। ঘর-বাড়ি রাস্তাঘাট সব পড়ে আছে। কিন্তু দেখা নেই কোনও জনমনিষ্য়ির। বাড়িগুলির গায়ে পাক গোলার ক্ষত। গত এক সপ্তাহ ধরে এই এলাকায় প্রবল পাক গোলা বর্ষণে প্রায় ১ লক্ষ আতঙ্কিত বাসিন্দা ঘর ছেড়েছেন। আশ্রয় নিয়েছেন অন্যান্য এলাকার আত্মীয়দের বাড়িতে। যাদের সে সুযোগ নেই তাদের ঠাই হয়েছে সরকারি রিলিফ ক্যাম্পে। আবার অনেকেই মারাত্মক আহত হয়ে ভর্তি আছেন সরকারি হাসপাতালে।
কাশ্মীরের জম্মু, কাঠুয়া এবং সাম্বা এই তিন জেলা জুড়ে রয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে প্রায় ১৯৮ কিলোমিটার বিস্তৃত সীমান্ত। গত এক সপ্তাহ ধরে পাকিস্তান এই সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে, এবং এখানকার বিএসএফ-এর ঘাঁটিগুলি লক্ষ্য করে সমানে গোলা নিক্ষেপ করে যাচ্ছে। তাতে শুধু রামগড় এলাকাতেই অন্তত ৩ জন নিহত ও আরও ২৫ জনের মতো আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। সমগ্র এলাকাটা মেলালে মৃত ও আহতের সংখ্যাটা অনেক বেশি দাঁড়াবে।
এরপরই প্রাণভয়ে ভিটে-মাটি ছাড়ার পথ ধরেছেন সীমান্তবর্তী গ্রামের বাসিন্দারা। সীমান্ত থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরের গ্রাম কেসো। গ্রামের মোট জনসংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। কিন্তু ক'দিন আগেও গ্রামে যে প্রাণের ছোঁয়া ছিল তা আর নেই বাক্স প্যাটরায় যতটা নেওয়া যায় সঙ্গে করে সবাই গ্রাম ছেড়েছেন। পাক গোলার আঘাতে ধ্বস্ত গ্রামটি। এদিক ওদিক গোলার আঘাতের চিহ্ন ছড়ানো। কোন বাড়ির পাঁচিল ভেঙে পড়ে আছে। গত এক সপ্তাহে এগ্রামের অনেকেই মারাত্বক জখম হয়ে হাসপাতালে শজ্জা নিয়েছেন। বাধ্য হয়ে অনেকেই এখন কাশ্মীরি রাজনীতিবিদদের কাছে আবেদন করছেন যাতে তাঁদের কোনও নিরাপদ জায়গায় জায়গায় জমি দেওয়া হয় বাড়ি করার। তারা সেখানে চলে যেতে চান। একই অবস্থা সীমান্তের অন্যান্য গ্রামগুলিতেও।
তবে অনেকেই এর জন্য দুষছেন মোদী সরকারের পাক-নীতিকে। কূটনাতি তারা বোঝেন না। কিন্তু মোদী আসার পর পাক হামলা বেড়ে গেছে এটা তারা মোখের সামনে দেখছেন। প্রাক্তন সেনা কর্মী বর্ষীয়ান দেশ রাজ বলেন, 'দশকের পর দশক ধরে সীমান্তের ওপাড় থেকে গোলা বর্ষণ হওয়া আমরা দেখেছি। কিন্তু যেদিন থেকে কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে, সেদিন থেকে পাক আক্রমণের ঝাঁঝ বেড়ে গিয়েছে।'
রমজান মাসে কাশ্মীরে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু নজিরবিহীম হামলা চালাচ্ছে পাকিস্তান। এনিয়ে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের একাংশ চাইছেন পাকিস্তানের সঙ্গে আর যেন শান্তি আলোচনার প্রসঙ্গও না ওঠে। সীমান্তের একেবারে শেষ গ্রাম নানগার বাসিন্দা অশোক কুমার বলেন, 'রমজান মাসে ওরা (পাকিস্তান) নিরপরাধ মানুষদের প্রাণ নিচ্ছে। যারা আমাদের ওপর এই নির্মম আঘাত হানছে তাদের সঙ্গে কি করে আমরা শান্তির কথা বলতে পারি?'