থ্যালাসেমিয়া মুক্ত সমাজ গড়ার ডাক দিয়ে বিশেষ প্রচারে নামলেন মহিলারা
থ্যালাসেমিয়া মুক্ত সমাজ গড়ার ডাক দিয়ে বিশেষ প্রচারে নামলেন মহিলারা
সামাজিক সচেতনতাই পারে থ্যালাসেমিয়ামুক্ত সমাজ গড়তে। বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা আবশ্যিক প্রয়োজন। এই বার্তা নিয়েই সচেতনতার প্রচারে নামলেন মহিলারা। শ্যামপুরের মণিরামপুর গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঘুরে এই সচেতনতার বার্তা দিলেন রক্তকরবী একটি সংগঠনের সদস্যারা।
কলেজ পড়ুয়া থেকে গৃহবধূ সকলেই সামিল হয়েছিলেন এই কর্মসূচিতে। গ্রামের মা-বোনেদের বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয়তার কথা সবিস্তারে বুঝিয়ে বাসন্তী বেরারা। রক্তকরবীর সম্পাদক শাশ্বত পাড়ুই জানান, সামাজিক সচেতনতাই পারে থ্যালাসেমিয়া মুক্ত সমাজ গড়তে। সেই লক্ষ্যেই আমাদের এই লড়াই। আগামী দিনে গ্রামীণ হাওড়ার বিভিন্ন গ্রামে এই প্রচারাভিযানকে ছড়িয়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে জানান।
তিনি আরও জানান, কেভিডকালে আমরা মুমূর্ষু রোগীদের পাশে দাঁড়াতে ও রক্তদান আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ব্লাড ডোনার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। সেই গ্রুপই রক্তকরবী নামক সংগঠন হিসাবে সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করেছে। এবার তাদের উদ্যোগেই থ্যালাসেমিয়া মুক্ত সমাজ গড়ার বার্তা নিয়ে গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে গেলেন মহিলারা।
থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তস্বল্পতা জনিত রোগ। পিতা মাতার কাছ থেকে সন্তানেরা এই রোগ পেয়ে থাকে। বাবা-মা উভয়ই যদি থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক হন তাহলে সন্তান এই রোগ নিয়ে জন্মাবে। এই রোগ কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। জিনগত ত্রুটির কারণে এই রোগ হয়ে থাকে।
থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর দেহে রক্ত কণা উৎপন্ন হয়না। যার ফলে তাকে নিয়মিত রক্ত গ্রহন করে বেঁচে থাকতে হয়। থ্যালাসেমিয়ার বাহক যে কেউ হতে পারে।
তাই সবার উচিৎ বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরিক্ষাটি করে নেওয়া। থ্যালাসেমিয়া বাহকেরা রোগী নন, সম্পূর্ণ সুস্থ ব্যক্তিও নন। বাহকেরা সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন, তবে তারা থ্যালাসেমিয়ার ত্রুটিপূর্ণ জীন শরীরে বহন করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাহকের কোনও লক্ষণও প্রকাশ পায় না। তাদের রক্ত গ্রহণ করতে হয় না। কিন্তু স্বামী স্ত্রী ২ জনই বাহক হলে তাদের সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগী হয়ে জন্ম নিতে পারে। একারণে বিয়ের আগে রক্তের হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফরেসিস পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরী। কেবলমাত্র এই পরীক্ষাতেই জানা যায় যে কেউ থ্যালাসেমিয়া বাহক কিনা।
দুই জন থ্যালাসেমিয়ার বাহক যদি বিয়ে করে তাহলে প্রত্যেক প্রেগ্ন্যান্সিতে তাদের অনাগত সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগী হওয়ার সম্ভাবনা ২৫%, বাহক হওয়ার সম্ভাবনা ৫০% এবং সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষ হওয়ার সম্ভাবনা ২৫%। অর্থাৎ তাদের যেকোনো বাচ্চাই থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত পারে, যেকোনো বাচ্চাই বাহক হতে পারে আবার যেকোনো বাচ্চাই সুস্থও হতে পারে। একারণে যেভাবেই হোক বাহকের সাথে বাহকের বিয়ে বন্ধ করতে হবে (বা বিয়ে হয়ে গেলেও প্রেগ্ন্যাসির সময়ে গর্ভস্থ ভ্রূণ পরীক্ষা করতে হবে)। অন্তত বিয়ের আগে হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফরেসিস পরীক্ষার মাধ্যমে বাহক চিহ্নিত করতে হবে।
একজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক এবং একজন সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষ (যে বাহক নয়) যদি বিয়ে করে তাহলে প্রত্যেক প্রেগ্ন্যান্সিতে তাদের অনাগত সন্তান ৫০% সম্ভাবনা থাকে বাহক হওয়ার এবং ৫০% সম্ভাবনা থাকে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার। তাদের সন্তান কখনও থ্যালাসেমিয়া রোগী হবে না কিন্তু যেকোনো বাচ্চাই বাহক হতে পারে আবার সুস্থও হতে পারে। সন্তানকে বিয়ে দেওয়ার পূর্বে পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে।
একজন বাহক এবং একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর বিয়ে হলে প্রত্যেক প্রেগ্ন্যান্সিতে তাদের অনাগত সন্তানের রোগী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৫০% এবং বাহক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৫০%। সুস্থ বাচ্চা হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নাই। তাই থ্যালাসেমিয়া রোগীর বিয়ের পূর্বে পার্টনারের হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফরেসিস পরীক্ষা করিয়ে দেখতে হবে সে বাহক কিনা।
সামাজিক সচেতনতাই পারে থ্যালাসেমিয়ামুক্ত সমাজ গড়তে। বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা আবশ্যিক প্রয়োজন। এই বার্তা নিয়েই সচেতনতার প্রচারে নামলেন মহিলারা। শ্যামপুরের মণিরামপুর গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঘুরে এই সচেতনতার বার্তা দিলেন রক্তকরবী একটি সংগঠনের সদস্যারা। কলেজ পড়ুয়া থেকে গৃহবধূ সকলেই সামিল হয়েছিলেন এই কর্মসূচিতে।
বন্যপ্রাণ সচেতনতায় অভিনব উদ্যোগ, মিনি জু'তে পশুপাখিদের দত্তক নেওয়ার সুযোগ