অন্যপুজো, হাঁটার ক্ষমতা হারানো সতেরোর সুরজিতকে হুইলচেয়ার উপহার দিলেন ওঁরা
প্রতিবছর আকাশে শারদ মেঘের আনাগোনা শুরু হয় সময়মতোই। কাশফুল ফোটে, পুজোর গন্ধে মাতোয়ারা হয় বাংলা। কয়েক বছর আগেও সেই আনন্দের উৎসবে অন্যদের সাথে সামিল হত গ্রামীণ হাওড়ার বাগনান-১ ব্লকের ভূঁয়েড়া গ্রামের সুরজিৎ আদক। কিন্তু হঠাৎই ঘনিয়ে এলো অন্ধকার! আচমকাই দু'টো কিডনি খারাপ হওয়ায় বছর সতেরোর সুরজিতের জীবনটাই বদলে গেল। কিডনি খারাপ হওয়ার জেরে চলাচলের ক্ষমতা হারিয়ে এখন বাবা-মা'য়ের কোলই তার ভরসা।
বন্ধ হয়েছে স্কুলে যাওয়া। সুরজিতের বাবা মনেশ আদক ভ্যান চালিয়ে যা উপায় করেন তার বেশিরভাগটাই ছেলের চিকিৎসার খরচে চলে যায়। তবু তিনি ছেলের চিকিৎসার জন্য ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সপ্তাহে দু'দিন করে ছেলেকে কোলে চাপিয়ে উলুবেড়িয়া হাসপাতালে ডায়ালিসিসে নিয়ে যান। মাঝেমধ্যেই চিকিৎসার জন্য সুরজিতকে পিজিতেও নিয়ে যেতে হয়। মনেশ বাবুর কোলই এখন সুরজিতের ভরসা। মনেশ আদক জানান, ছেলের ছোটো থেকে মূত্রের সমস্যা ছিল। কিন্তু স্বাভাবিক জীবনযাপন করত। বছর চারেক আগে হঠাৎই জানা যায় ছেলের দুটো কিডনি খারাপ। তারপর ভেলোর সহ বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেছি। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যেটুকু আয় করি প্রায় সবই চিকিৎসার খরচে চলে যায়।
বছর খানেক হল ও আর চলতে পারেনা। এমতাবস্থায় সুরজিতের পাশে এগিয়ে এলো আমতার অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'স্বপ্ন দেখার উজান গাঙ'। সুরজিতের সাথে শারদোৎসবের আনন্দকে ভাগ করে নিলে সংগঠনের সদস্যরা। শারদ শুভেচ্ছা হিসাবে 'স্বপ্ন দেখার উজান গাঙ'-এর পক্ষ থেকে সুরজিতকে উপহার হিসাবে তুলে দেওয়া হল একটি হুইলচেয়ার। হুইলচেয়ার পেয়ে ভীষণ খুশি সুরজিৎ ও তার পরিবার। সুরজিতের বাবা মনেশ আদক জানান, ছেলের জন্য হুইলচেয়ার ভীষণ প্রয়োজন ছিল।
কোলে করে চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেতে খুব সমস্যা হয়। এবার হুইলচেয়ারেই ছেলেকে নিয়ে যাব। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির কর্তা পৃথ্বীশরাজ কুন্তী জানান, প্রত্যেক বছর পুজোর আনন্দকে আমরা সমাজের প্রান্তিক ও অসহায় মানুষের সাথে ভাগ করে নিই। এবারও গ্রামীণ হাওড়া ও জঙ্গলমহলে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সুরজিতকে শারদ শুভেচ্ছা স্বরূপ হুইলচেয়ার প্রদান তারই অন্যতম। পুজোয় নতুন হুইলচেয়ারে বসে পাড়ায় পুজো দেখতে যাবে বলে জানায় সুরজিৎ।