লোকভাবনায় লক্ষ্মী, শ্যামপুরের গ্রামের পাঠাগারে অভিনব লোক-প্রদর্শনীশালা
লোকভাবনায় লক্ষ্মী, শ্যামপুরের গ্রামের পাঠাগারে অভিনব লোক-প্রদর্শনীশালা
মা লক্ষ্মী বাংলার ঘরের মেয়ে। বঙ্গ সংস্কৃতির সাথে ওতোপ্রোতোভবে জড়িয়ে রয়েছে লক্ষ্মীর নাম। বাংলার লোকাচারের সাথে লক্ষ্মীর নিবিড় সংযোগ। বাংলার বুক থেকে হারিয়ে যেতে বসা লোকশিল্প, লোকাচারকে ভিন্ন আঙ্গিনায় তুলে ধরতে অভিনব উদ্যোগ নিল শ্যামপুরের মরাল বাহিনী পাঠাগার।
মরাল বাহিনী পাঠাগারের তরফে শুরু হয়েছে লোক সংস্কৃতির বিশেষ প্রদর্শনী, যার নাম দেওয়া হয়েছে 'লোকভাবনায় লক্ষ্মী'। লোক সংস্কৃতির এই প্রদর্শনীতে লোক ভাবনার আঙিনায় লক্ষ্মীকে বিভিন্নভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। লক্ষ্মীকে নিয়ে বাংলায় প্রচলিত রয়েছে নানা লোকাচার।
সেই লোকাচারের সূত্র ধরেই কুমোরপাড়ার মৃৎশিল্পীরা তাদের ভাবনায় লক্ষ্মীমূর্তি গড়েছেন। আবার পটুয়ারা তাদের নিজ ভাবনায় পটে লক্ষ্মীকে চিত্রায়িত করেছেন। পাশাপাশি পোড়ামাটি সহ বিভিন্নভাবে এই ভাবনাকে তুলে ধরা হয়েছে। মরাল বাহিনী পাঠাগারে পাঁচদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত এই প্রদর্শনীতে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের লক্ষ্মী-গণেশ ঘট, পট, বাহন, প্রতীক, চিহ্ন, আচার-সংস্কার সহ বিভিন্ন বিষয় মডেলের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।
জানা গেছে, ১৭৪ টি লোক সামগ্রী নিয়ে আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে বাংলার ৫২ টি অঞ্চলের লক্ষ্মী ও গণেশ ঘট স্থান পেয়েছে। গ্রন্থাগারটির কার্যকরী সমিতির সভাপতি শিক্ষক আশিস চক্রবর্তী জানান, গ্রন্থাগারের সাথে বাংলার লোক-সংস্কৃতির নিবিড় যোগ। সেই আঙিনাতেই এই প্রদর্শনীর উদ্যোগ। প্রদর্শনীটির সূচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গুজারপুর গার্লস হাই স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা কৃপারাণী কর্মকার, প্রাক্তন শিক্ষক মধুসূদন প্রামাণিক, রাজীবপুর অগ্রণী পাঠাগারের গ্রন্থাগারিক শাশ্বত পাড়ুই সহ অন্যান্যরা।
হাওড়ার পুতুল শিল্প অত্যন্ত বিখ্যাত। অন্যতম রানী পুতুল। পোড়ামাটির এই বিশেষ পুতুলটিকে গোলাপি রঙ করে তাতে অভ্র মেশানো হয়। মাথাজুড়ে কোঁকড়ানো চুল। তবে থাকে না কোনও পা। কোমর থেকে দেহের বাকি অংশ ঘাঘরা ঢাকা। কখনও কখনও দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে মুকুটও পরানো হয়। গুটিকয়েক মানুষের হাত ধরে বেঁচে আছে হাওড়া জেলার এই লোকশিল্প। নাম , রানী পুতুল। গ্রামীণ হাওড়ার জগৎবল্লভপুর,পাতিহাল,নরেন্দ্রপুর সহ বিভিন্ন গ্রামে এককালে প্রচুর তৈরি হতো এই বিশেষ পুতুল। ম্লান হয়েছে শিল্প। তবুও শিল্পকে ভালোবেসে,পুতুল সংস্কৃতিকে ভালোবেসে দিবাকর পালের মতো শিল্পীরা বানিয়ে চলেছেন হাওড়া জেলার নিজস্ব 'রানি পুতুল'।
ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যাচ্ছে, শিল্পী থেকে পুতুল-গবেষক প্রায় সকলেই একবাক্যে স্বীকার করেন যে,মূলত কোনো রক্তমাংসের রানীই এই পুতুলের আদর্শ। আর সেই পথ ধরেই ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে এই পুতুলের নামকরণ বা প্রচলন সম্পর্কিত বিশেষ তথ্য উঠে আসে। ইংল্যান্ডের রানী ভিক্টোরিয়ার ভারতপ্রীতি তৎকালীন সমাজের বহু মানুষকেই মুগ্ধ করেছিল। রদ করেছিলেন 'ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি'র শাসন। রানির এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছিলেন ভারতবর্ষের বহু মানুষ। যার প্রভাব ভারতের শিল্প-সংস্কৃতি-সাহিত্যেও।লোকসংস্কৃতি গবেষকদের মতে,দক্ষিণ পাতিহাল ও জগৎবল্লভপুরের নরেন্দ্রপুর গ্রামের পুতুল শিল্পীরা যে পুতুল বানালেন তার মধ্যে নিয়ে এলেন রানী ভিক্টোরিয়ার দেহ-চুলের গঠন।আর এভাবেই হাওড়া জেলার সংস্কৃতিতে স্থান করে নিলেন কয়েক হাজার মাইল দূরে থাকা রানী ভিক্টোরিয়া।
বঙ্গ সমাজ,সভ্যতা ও সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান পুতুল।বহু প্রাচীনকাল থেকেই পুতুলের প্রচলন। বাংলার বিভিন্ন স্থানে খনন কার্য চালিয়ে পোড়া মাটির পুতুল পাওয়া গিয়েছে। তার মাধ্যমেই প্রমাণিত হয় বাংলার জনসমাজকে পুতুলের মাধ্যমে চিত্রিত করার এক প্রবণতা সুপ্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে। বাংলার বুকে বিভিন্ন রকমের পুতুলের প্রচলন আছে। যদিও কালের নিয়মে আজ বেশিরভাগেরই ঠাঁই হয়েছে ইতিহাসের পাতায়, মিউজিয়ামের টেবিলে। ফেসবুক,হোয়াটসঅ্যাপের যুগে গ্রাম বাংলার বুক থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে পুতুলখেলা শৈশবও। অন্যতম রানী পুতুল। শিল্পপাগল মানুষের হাতে ধরে হাওড়া জেলার শিল্প,সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারাকে যা বহন করে নিয়ে চলেছে।
প্রাথমিক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে ফের মামলা! আইনি জটিলতায় ফের প্রক্রিয়া?