পা-ই প্রতিবাদের হাতিয়ার, ছবি এঁকে অভিনব প্রতিবাদ শিল্পীর
পা-ই প্রতিবাদের হাতিয়ার, ছবি এঁকে অভিনব প্রতিবাদ শিল্পীর
তিনি সব কাজ করেন পা দিয়েই। দুই হাত কাজ করে না। তাই পা জোড়াকেই সঙ্গী করে জীবনের হাল ধরেছেন তিনি। তিনি রঞ্জন কুর্মী। পা দিয়ে ছবি আঁকলেন আনিস।খানের। এভাবেই শিল্পী করলেন ছাত্র নেতা মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদ।
হাওড়া ময়দানে থাকেন রঞ্জন কুর্মী। রঞ্জনের হাত বলে কিছু নেই। তা সে ছোট থেকেই নেই। তা বলে জীবনের সংগ্রাম থেকে পিছিয়ে আসেনি সে। পা কেই জীবন সংগ্রামের হাতিয়ার করেছে সে। পা দিয়েই খাওয়া থেকে পড়া, নাওয়া সব কিছু। সেই পা দিয়েই আনিস খানের ছবি আঁকলেন আনিশ খানের , করলেন অভিনব প্রতিবাদ। তিনি জানিয়েছেন, 'আমার প্রতিবাদের মাধ্যম এই শিল্প মানে ছবি আঁকা। আমার প্রতিবাদের হাত হল দুই পা। তার মাধ্যমেই আমি এই ঘটনার প্রতিবাদ জানালাম। এই ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। যারাই করুক তাদের শাস্তি চাই। এই কাজটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের থেকে আশা করব। উনি পুলিশ মন্ত্রী, আর আজ তাদের দিকেই উঠছে আঙুল। এটা লজ্জাজনক। তাছাড়া পুলিশ তো সমাজের রক্ষক তাদের দিকে সমাজ ভক্ষণের আঙুল ওঠার সুযোগ তাঁরা দেবেন কেন? এটাই তো আমাকে অবাক করেছে'।
প্রসঙ্গত, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের ফল বেরনোর পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পোর্ট্রেট এঁকেছিলেন জল রঙে। জল রংয়েই রঞ্জনের বিশেষ দক্ষতা। নিখুঁত পায়ে জলরঙের কাজে ফুটিয়ে তুলেছেন আনিশের ছবি। বাঁ-পায়ের বুড়ো আঙুল আর তার পরের আঙুল দিয়ে তুলি ধরেন রঞ্জন। অন্য পা, অর্থাৎ ডান পা দিয়ে সহায়তা। নিপুণ ছবি আঁকেন বিশেষভাবে সক্ষম রঞ্জন। মূলত ল্যান্ডস্কেপ। গ্রামে-গ্রামে গিয়ে প্রকৃতির ছবি আঁকেন তিনি। পাশাপাশি এমন নানা ছবিও আঁকেন তিনি। সমাজ ও সময়ভিত্তিক।
হাওড়া ময়দানের একচিলতে ঘরে থাকেন রঞ্জন, আঁকা শেখান। তাতেই চলে সংসার। আর সেই একচিলতে ঘর থেকেই উঠে এল অভিনব প্রতিবাদ।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার গভীর রাতে আনিস খানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর থেকে বাবা-সহ পরিবার খুনের অভিযোগ তুলেছেন এক পুলিশকর্মী এবং তিন সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে। প্রথমের দিকে পুলিশের তরফে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন বহিরাগতদের কাজ হতে পারে। কিন্তু সময় যত যাচ্ছে, প্রশাসন কোথাও যেন ধাক্কা খাচ্ছে। প্রশাসনের শীর্ষমহল সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে, শুক্রবার গভীর রাতে সম্ভবত পুলিশই দিয়েছিল আনিসের বাড়িতে। এবার আমতা থানার চার সিভিক পুলিশ শনিবার থেকে কাজে আসছেন না বলেই জানা গিয়েছে।
এদিকে আনিসের পরিবার বারে বারেই অভিযোগ করেছিল শুক্রবার বারে বারে পুলিশকে ফোন করা হলেও, রাতে আসার কোনও আগ্রহ দেখায়নি পুলিশ পরে শনিবার সকাল নটার পরে পুলিশ আসে। সেই সময় আনিসের দেহ তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবারের লোকেদের আমতা থানায় যেতে বলে। কিন্তু তারই মধ্যে উলুবেড়িয়ায় ময়নাতদন্ত করে ফেলা হয়। যা নিয়ে প্রথম থেকেই আপত্তি ছিল আনিসের পরিবারের। আনিসের বাবা এবং দাদা আগেই জানিয়েছিলেন ফোন তারা সিটের হাতে তুলে দেবেন না। এ দিন সিটের তরফ থেকে পরিবারের কাছে ফের ময়নাতদন্তের জন্য দেহ তুলে দিতে আবেদন জানানো হলে, পরিবারের তরফে না বলে দেওয়া হয়। জানানো হয়, আদালত নির্দেশ দিলে কিংবা সিবিআই তদন্ত হলেই তারা ফের ময়নাতদন্তের অনুমতি দেবেন।