মেসির বিশ্বকাপ জয় থেকে সিআর ৭'র ব্যর্থতা,এমবাপের গোল্ডেন বুট,সালাহের স্বপ্ন ভঙ্গ,এক নজরে বিশ্ব ফুটবলের ওঠাপড়া
মেসির বিশ্বকাপ জয় থেকে সিআর ৭'র ব্যর্থতা,এমবাপের গোল্ডেন বুট,সালাহের স্বপ্ন ভঙ্গ,এক নজরে বিশ্ব ফুটবলের ওঠাপড়া
বিশ্বকাপের বছর বরাবরই অন্য রকম গুরুত্ব রাখে। ২০২২ সালটিও এর ব্যতিক্রম নয়। কাতার বিশ্বকাপকে ঘিরে যেই রকম বিতর্ক হয়েছে সেই রকমই সাফল্য এবং উৎকর্ষ মানের ফুটবল এই বিশ্বকাপ থেকে উপহার সরূপ পেয়েছে ফুটবলপ্রেমীরা।
লিওনেল মেসির বিশ্বকাপ জয়:
শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ জেতার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন লিওনেল মেসি এই বছর। দীর্ঘ দিনের প্রতীক্ষা এবং পাঁচ বারের চেষ্টায় বিশ্বকাপ জিতেছেন মেসি। এই একটা খেতাবই ছিল যা মেসির নক্ষত্রেমোড়া কেরিয়ারকে অপূর্ণ করে রেখেছিল এত দিন। অবশেষে ছোট থেকে যেই স্বপ্নকে বুকে নিয়ে খেলা শুরু করেছিলেন মেসি সেই স্বপ্নকে বাস্তবের রূপ পেতে দেখেন কাতারে। আর্জেন্টিনার এই সাফল্যের নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন মেসি। পুরো টুর্নামেন্টে আর্জেন্টিনা ১৩টি গোল করে যার মধ্যে মেসির পা থেকে আসে ৭টি এবং ৩টি গোলের পাস বাড়ান তিনি। ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২-এ গ্রুপ পর্যায়ে. প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে, কোয়ার্টার ফাইনালে, সেমিফাইনালে এবং ফাইনালে প্রথম গোলটি করেছিলেন মেসি। মেসি নাকি রোনাল্ডো কে সেরা এই তর্ক বিশ্বকাপ জয়ের সঙ্গেই মিটে গিয়েছে। এখন প্রশ্ন হল মেসিকে কি দিয়েগো মারাদোনা এবং পেলের আগে রাখা যায়? যদিও তা নিয়ে মেসির কোনও মাথা ব্যথা নেই। তিনি এক জন পরিপূর্ণ ফুটবলার।
ব্যর্থ ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো:
খুব কমই দেখা গিয়েছে বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার এতটা ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। রোনাল্ডোর কাছে তেমনই এই বছরটা। ক্লাব ফুটবলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে সমস্যা এবং পরে জাতীয় দলে কোচের সঙ্গে বিবাদ রোনাল্ডোর কেরিয়ারের শেষ লগ্নে বারবার ব্যহত ঘটিয়েছে। ইউনাইটেডের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর তিনি পর্তুগালের প্রথম একাদশে স্থান পাননি প্রি কোয়ার্টার ফাইনাল এবং কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে। পর্তুগাল বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যায় কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে মরক্কোর বিরুদ্ধে হেরে এবং একই সঙ্গে বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন ভঙ্গ হয় রোনাল্ডোর। বছরের শেষ দিন তিনি সই করেছেন সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসেরে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো শাসন করেছেন সমগ্র ইউরোপের ফুটবলকে, তাঁর মতো ফুটবলারকে ক্লাব খুঁজে পেতে যে ভাবে বেগ পেতে হয়েছে তা ছিল অবিশ্বাস্য। আল নাসের তাঁকে সই করানোর আগ্রহ না দেখালে কোন ক্লাবে রোনাল্ডো খেলতেন তা একটা বড় প্রশ্ন তৈরি হতে পারত।
ব্যর্থ মহম্মদ সালাহ:
লিওনেল মেসি বা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর স্তরের ঠিক নীচে স্তরে যেই ফুটবলাররা খেলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম মহম্মদ সালাহ। মিশরের এই ফুটবলার শুধু ক্লাব ফুটবলেই সাফল্যের দেখা পাননি এমনটা নয়, তিনি নিজের দেশকে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করাতেও ব্যর্থ হন। আফ্রিকা কাপ অব নেশনস এবং কাতার বিশ্বকাপ ২০২২-এর প্লে-অফে টাইব্রেকারে স্বপ্ন ভঙ্গ হয় মিশরের। মিশরের এই উইঙ্গার ভবিষ্যতে বিশ্বকাপে খেলতে পারবেন কি না, সেটা দেখার। এই বছর ব্যালন ডি'ওর-এর লড়াইয়ে ছিলেন সালাহ কিন্তু সেখানেও ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।
রিয়াল মাদ্রিদে দাপট:
বিশ্ব ফুটবলে রিয়াল মাদ্রিদের দাপট সম্পর্কে নতুন করে বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তবে, এই বছরটা বিশেষ করে স্মরণীয় হয়ে থাকবে রিয়ালের সমর্থকদের জন্য। ২০২১-২২ লা লিগা চ্য়াম্পিয়ন হয় রিয়াল। এ ছাড়া কার্লো আনসেলোত্তির ছেলেরা চ্যাম্পিয়ন হয় সুপার কোপা এসপানা। এই বছর রিয়াল মাদ্রিদ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। আনসেলোত্তি এই নিয়ে চতুর্থ বার কোচ হিসেবে জেতেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। এ ছাড়া উয়েফা সুপার লিগের খেতাব সান্তিয়াগো বার্নাবিউতে এসেছে এই বছর।
বিশ্বকাপ না জিতেও সফল কিলিয়াম এমবাপে:
কিলিয়ান এমবাপের বছরটা বেশ ভাল কেটেছে। বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছিয়েও তা জিততে না পারার ব্যর্থতা তরুণ এই স্ট্রাইকারকে নাড়া দিয়ে গেলেও ভাল ভাবে দেখলে এই বছরটা সফল কিলিয়ানের জন্য। বিশ্বকাপ ফাইনালে হ্যাটট্রিক করে ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২-এ গোল্ডেন বুট নিশ্চিত করেন তিনি। ২০২২ সালে ফ্রান্সের হয়ে ১৩টি ম্যাচে ১২টি গোল করেছেন এমবাপে। ক্লাব ফুটবলে পিএসজির হয়ে ৪২ ম্যাচে করেছেন ৪৩টি গোল।
পুরো বছরটাই আড়ালে থাকলেন রোমেলু লুকাকু:
আরও একবার ফুটবল ইতিহাসের সব থেকে বড় ব্যর্থ স্ট্রাইকার হিসেবে বছর শেষ করলেন রোমেলু লুকাকু। ১১৭ মিলিয়ান ডলার খরচ করে ইন্টার মিলান থেকে চেলসি তাঁকে সই করিয়েছিল কিন্তু চেলসি থেকে পুরো ক্লাবে লোনে আসেন লুকাকু। ২০২২ বিশ্বকাপে আসার আগে চোট এবং ব্যক্তিগত কারণে মাত্র ৫টি ম্যাচেই মাঠে নামতে পেরেছিলেন তিনি। বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের প্রথম ম্যাচে চোটের কারণে খেলতে পারেননি লুকাকু। এই বারের বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ড থেকেই ছিটকে যায় বেলজিয়াম এবং কাতার ছাড়তে হয় রোমেলু লুকাকুকে।