ফিরে দেখা: বিশ্বকাপ ফুটবলের সেরা ১০ নক্ষত্র, যাঁরা ফুটবলকে নিয়ে গিয়েছেন শিল্পের পর্যায়ে
ফিরে দেখা: বিশ্বকাপ ফুটবলের সেরা ১০ নক্ষত্র, যাঁরা ফুটবলকে নিয়ে গিয়েছেন শিল্পের পর্যায়ে
অপেক্ষা আর কিছু দিনের, তার পরই শুরু হয়ে যাবে বিশ্ব ক্রীড়াক্ষেত্রের অন্যতম বড় ইভেন্ট ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২। কাতারে আয়োজিত হওয়া এই বিশ্বকাপকে ঘিরে সারা বিশ্বের মানুষের মধ্যে আগ্রহের কোনও অন্ত নেই। সকলেই প্রহর গুনছে এই মেগা ইভেন্টের জন্য। কাতার বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে ফিরে দেখা বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসের সেরা দশ মহিরূহকে।
জিনেদিন জিদান:
বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসের অন্যতম সেরা নক্ষত্র জিদান। ফরাসি এই ফুটবলার যতটাই মহান ছিলেন একজন ক্রীড়াবীদ হিসেবে, তেমনই বিতর্কে জড়িয়েছেন ২০০৬ ইতালির বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ ফাইনালে তাঁর কুখ্যাত 'গুোঁতো'র কারণে। এই ঘটনার পর বিশ্বকাপ ফাইনালে তিনি যদি লাল কার্ড দেখে মাঠ না ছাড়তেন তা হলে ফাইনালের ভাগ্য অন্য রকম হতে পারত। ১৯৯৮ ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনালে দু'টি গোল করে ফ্রান্সকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন জিদান। ফ্রান্সের জার্সিতে ১০৮ ম্যাচে ৩১ গোল করেন জিদান। রিয়াল মাদ্রিের কোচ হিসেবে তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন জিদান এবং দু'টি লা লিগা জিতেছেন।
জিমি গ্রেভেস:
১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডের একমাত্র বিশ্বকাপ জয়ী দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন জিমি গ্রেভেস। ওই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সাফল্যের প্রধান কারণ তাঁর গোল স্কোরিং দক্ষতা। ইংল্যান্ডের জার্সিতে এখনও পর্যন্ত ৬টি হ্যাটট্রিক করেছে জিমি। ফ্রান্সের জোসেপ বোনেলের সঙ্গে সংঘর্ষে ১৪টি স্টিচ হয় তাঁর, সেই কারণে ফাইনাল ম্যাচে থ্রি লায়ন্সের হয়ে মাঠে নামতে পারেননি টটেনহাম হটস্প্যারের কিংবদন্তি।
ফিরেন্স পুসকাস:
হাঙ্গারির ফুটবল ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ তারকা পুসকাস। তাঁর নামেই দেওয়া হয় পুসকাস অ্যাওয়ার্ড। হাঙ্গারিক স্বর্ণ যুগের দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। হাঙ্গেরির হয়ে ৮৫ ম্যাচে ৮৪ গোল রয়েছে এই মহানক্ষত্রের। তিনি স্পেনের হয়ে চারটি ম্যাচে খেলেছিলেন। পুসকাসের নেতৃত্বে বিশ্ব ফুটবলে হাঙ্গেরির দাপট এতটাই ছিল যে ওই দশকে একমাত্র ম্যাচটি তারা হারে ১৯৫৪ বিশ্বকাপ ফুটবলে। কেরিয়ারে মোট ৭০৫টি ম্যাচের মধ্যে ৭০৪টি গোল তিনি করেন।
লোথার ম্যাথুজ:
জার্মানির জার্সিতে সর্বাধিক ম্যাচ খেলা ফুটবলার লোথাস ম্যাথুজ। ১৫০ ম্যাচে দেশের হয়ে তিনি করেন ২৩টি গোল। এক কথায় বক্স টু বক্স মিডফিল্ডার ছিলেন লোথার। জার্মানির জার্সিতে পাঁচটি বিশ্বকাপে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন। বিশ্বকাপে সর্বাধিক ম্যাচ খেলার রেকর্ডও রয়েছে তাঁর দখলে। বিশ্বকাপ ফুটবলে ম্যাথুজ ২৫টি ম্যাচ খেলেছেন। মহান দিয়েগো মারাদোনা তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, ম্যাথুজই সব থেকে কঠিন প্রতিপক্ষ যার বিরুদ্ধে তিনি খেলেছেন।
মিরোসলাভ ক্লোসে:
জার্মান ফুটবলের আর এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ক্লোজে। মাঠের মধ্যে তাঁর নম্র আচরণ এবং নিয়মানুবর্তীতা ছিল শিক্ষণীয়। ফুটবল মাঠে তাঁর মতো ভদ্র খেলোয়াড় খুব কমই এসেছে। চারটি বিশ্বকাপেইতাঁর গোল রয়েছে। শেষ পর্যন্ত ২০১৪ সালে বিশ্ব জয়ের স্বাদ পান ক্লোসে। নিজের গতির জন্য পরিচিত থাকা ক্লোসে জার্মানির জার্সিতে ১৩৭ ম্যাচে ৭১টি গোল করেন। বিশ্বকাপে তাঁর গোল সংখ্যা ১৬। তাঁরথেকে বেশি গোল বিশ্বকাপে কেউ করেনি এখনও পর্যন্ত।
রোনাল্ডো:
নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না ব্রাজিলের এই বিধ্বংসী গোল শিকারির সম্পর্কে। ব্রাজিলের জার্সিতে ৯৮ ম্যাচে ৬২টি গোল করেন রোনাল্ডো। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি ১৯৯৪ বিশ্বকাপ জেতেন সাম্বা বাহিনীর হয়ে। চার বছর পর টুর্নামেন্টের সেরা ফুটবলারের শিরোপা পান রোনাল্ডো। ব্রাজিলকে ১৯৯৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন রোনাল্ডো। ২০০২ বিশ্বকাপ জয়ী ব্রাজিল দলের অন্যতম নায়ক ছিলেন রোনাল্ডো। ওই বিশ্বকাপের ফাইনালে জোড়া গোল আসে তাঁর পা থেকে। তাঁর গতি, বলের উপর নিয়ন্ত্রণ, প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের কাটানোর দক্ষতা ছিল দুই চোখ ভরে দেখার মতো।
ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার:
বিশ্বকাপ নায়কদের আলোচনা হবে সেখানে ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের নাম আসবে না এটা হতে পারে না। বিশ্ব ফুটবলে যেই তিন নক্ষত্র খেলোয়াড় হিসেবে এবং কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছেন তাঁদের মধ্যে এক জন বেকেনবাওয়ার। বেকেনবাওয়ার ছাড়া এই নজির রয়েছে দিদিয়ের দেশঁচ্যাম্পস এবং মারিও জাগালোর। ডিফেন্ডার হিসেবে খেললেও পশ্চিম জার্মানির হয়ে ১৪টি গোল করেন ১০৩ ম্যাচে। ১৯৭৪ বিশ্বকাপ জয়ী পশ্চিম জার্মানি দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। ১৯৯০ ফিফা বিশ্বকাপ জয়ী জার্মানি দলের কোচ ছিলেন তিনি।
জোহান ক্রুয়েফ
বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সম্ভ্রম আদায়কারী নাম ক্রুয়েফ। তিনটি ব্যালেন ডি'ওর জয়ী এই ফুটবলার নেদারল্যান্ডসকে ১৯৭৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছে দিয়েছিলেন। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ওই সংস্করণে নক আউটে ২টি গোল করেন তিনি। তাঁর দাপটের সামনে পরাজিত হয়েই ওই সংস্করণ থেকে ছিটকে গিয়েছিল ব্রাজিল। ১৯৭৮ বিশ্বকাপে খেলেননি ক্রুয়েফ।
দিয়েগো মারাদোনা:
দিয়েগো মারাদোনা নামটাই যথেষ্ট। বিশ্ব ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মহান কিংবদন্তিকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার অবকাশ কখনওই রাখে না। মারাদোনা নামটাই যথেষ্ট ছিল বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে ফুটবলপ্রেমীদের মাঠমুখো করার জন্য। ফুটবল ইতিহাসের সেরা নক্ষত্র হিসেবেও তাঁকে বহু বিশেষজ্ঞ অভিহিত করে থাকেন। শতাব্দীর সেরা গোল হোক কিংবা হ্যান্ড অফ গড, মারাদোনাকে ঘিরে রয়েছে বহু স্মরণীয় ঘটনা। একার কাঁধে কী ভাবে একটা দলকে বিশ্বকাপ জেতানো যায় তা সারা বিশ্বকে দেখিয়েছিলেন দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা। মাত্র ১৬ বছর বয়সে আর্জেন্টিনার জার্সিতে প্রথম ম্যাচটি তিনি খেলেছিলেন। ৯১ ম্যাচে দেশের হয়ে ৩৪টি গোল তিনি করেছিলেন। দেশের হয়ে চারটি বিশ্বকাপে খেলেন মারাদোনা কিন্তু ১৯৯৪ সালে নিষিদ্ধ এফেড্রিন গ্রহণ করার কারণে প্রতিযোগীতা শেষ করতে পারেননি তিনি। ৬০ বছর বয়সে সারা বিশ্বকে কাঁদিয়ে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে প্রয়াত হন তিনি।
পেলে:
পেলের মতো সাফল্য ফুটবল মাঠে নেই কারোর। ১৯৫৮ সালে প্রথম বার বিশ্বকাপে গোল করেন তিনি। ১৯৫৮. ১৯৬২ এবং ১৯৭০-এই তিন বার ব্রাজিলকেবিশ্বকাপ জেতান পেলে। এখনওপর্যন্ত ব্রাজিলের সর্বাধিক গোলদাতা তিনি। ৯২ ম্যাচে ৭৭টি গোল দেন পেলে। সমগ্র বিশ্বেবরফুটবলপ্রেমীদের কাছে সম্মান এবং ভালবাসার মানুষ ছিলেন পেলে। মিশেচ প্ল্যাতিনি বলেছিলেন, "ভাগবানের মতো খেলেন পেলে।" ব্রাজিলের এই জীবন্ত কিংবদন্তি বিশ্ব ফুটবলকে শুরু সমৃদ্ধইকরেননিতিনি এই সুন্দর খেলাটাকেভালবাসতে শিখিয়েছে কোটি কোটি মানুষকে।
কাতার বিশ্বকাপের জন্য ২৩-সদস্যের দল ঘোষণা করল পর্তুগাল, বাদ হাইপ্রোফাইল স্ট্রাইকার