ফিফার সঙ্গে সংঘাতে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও স্প্যানিশ লিগের ক্লাবগুলি, সমস্যায় ব্রাজিল
বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের খেলার জন্য ফুটবলার ছাড়া নিয়ে ফিফার সঙ্গে সংঘাতে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলি। একই মনোভাব পোষণ করে ক্লাবগুলির পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন স্প্যানিশ লিগের কর্তারাও। ফলে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে অনেককেই তারকাদের ছাড়াই মাঠে নামার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
দেশ ও ক্লাবের সংঘাত
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে ইংল্যান্ডের রেড লিস্টে থাকা দেশগুলির ফুটবলারদের দেশের হয়ে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচ খেলার জন্য ছাড়া হবে না। নিভৃতবাস-সহ করোনা সংক্রান্ত নানা বিধিনিষেধের কারণেই জটিলতা এড়াতে এই পদক্ষেপ। একইসঙ্গে স্প্যানিশ লিগের কর্তারাও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলির হয়ে খেলার জন্য স্পেনের কোনও ক্লাব যদি ফুটবলার ছাড়তে নারাজ থাকে সেই সিদ্ধান্তকে সমর্থনই জানানো হবে। ফুটবল মহলের খবর, এক দেশ থেকে অন্য দেশে গিয়ে খেলে এসে ফের আবার নিভৃতবাসে থাকার ঝক্কি রয়েছে। এতে ক্লাবগুলির সমস্যাই বেশি। এই সমস্যা এড়ানোর জন্য ফিফাও কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না। সে কারণে ফিফা ক্লাবগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও সংঘাতের রাস্তাতেই হাঁটছে ক্লাবগুলি।
একজোট ইপিএল ক্লাবগুলি
লিভারপুল ইতিমধ্যেই মিশরকে জানিয়ে দিয়েছে মোহাম্মেদ সালাহ-কে ছাড়া হবে না। কারণ, দেশের হয়ে খেলে ফিরে এলে তাঁকে ১০ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারান্টিনে থাকতে হবে ইংল্যান্ডে। জানা গিয়েছে, লিভারপুলের এই পদক্ষেপকে সমর্থন করে বাধ্য হয়ে জোটবদ্ধ হয়েছে ১৯টি ক্লাব। ১০টি সাউথ আমেরিকান দেশ-সহ ইংল্যান্ডের রেড লিস্টে থাকা ২৬টি দেশের প্রায় ৬০ জন ফুটবলারকে দেশের হয়ে ছাড়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব-জোট।
ঘোর সমস্যায় ব্রাজিল
এই সিদ্ধান্তের ফরে সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়তে চলেছে ব্রাজিল। গোলকিপার আলিসন খেলেন লিভারপুলে। এডারসন ম্যাঞ্চেস্টার সিটিতে, অধিনায়ক থিয়াগো সিলভা চেলসিতে, মিডফিল্ডার ফ্রেড খেলেন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে, ফ্যাবিনহো লিভারপুলে, ফরওয়ার্ড রবার্তো ফিরমিনো খেলেন লিভারপুলে, গ্যাব্রিয়েল জেসুস ম্যান সিটিতে, রিচার্লিসন এভার্টনে। প্রিমিয়ার লিগের চিফ এগজিকিউটিভ রিচার্ড মাস্টার্স বলেছেন, করোনা পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হলেও ক্লাবগুলিও যে যুক্তিতে বাধ্য হয়ে ফুটবলার না ছা়ড়ার পদক্ষেপ করেছে সেটাও ভুল কিছু নয়। নিভৃতবাসে থাকলে ওই ফুটবলারের ফিটনেসে তার প্রভাব পড়ে, এতে ক্লাবগুলিকেই সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়। সবদিক বিবেচনা করেই গ্রহণযোগ্য সমাধানের রাস্তা বের করার জন্যও ফিফাকে পরামর্শ দিয়েছেন ইপিএলের চিফ এগজিকিউটিভ।
চটেছে স্প্যানিশ ক্লাবগুলিও
স্প্যানিশ লিগ কর্তৃপক্ষও ফিফার একতরফা পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। সাধারণত বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে একটি উইন্ডোতে দুটি খেলা হয়ে থাকে। কিন্তু ফিফা সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের তিনটি ম্যাচ খেলানোর পরিকল্পনা করেছে একটি উইন্ডোতে। এর ফলে, নিভৃতবাসের জেরে সমস্যার মোকাবিলার পাশাপাশি ক্লাবকে আরও বড় যে সমস্যায় পড়তে হবে তা হল, ওই ফুটবলাররা লিগ শুরুর আগে পর্যাপ্ত বিশ্রামও পাবেন না। স্প্যানিশ লিগের তরফে তাই ফিফার সমালোচনা করে বলা হয়েছে, গ্রহণযোগ্য বিকল্পের ব্যবস্থা না করে যেভাবে হঠাৎ করে আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যালেন্ডারকে বদলে দেওয়া হচ্ছে তা একেবারেই সমর্থন করছে না লা লিগা। উল্লেখ্য, লা লিগায় খেলা ১৩টি ক্লাবের জনা ২৫ ফুটবলারের বিভিন্ন দেশের হয়ে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের নামার কথা। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও ক্লাবগুলি তাঁদের না ছা়ড়লে কোনও জোর যে স্প্যানিশ লিগ কর্তারা করবেন না সেটা স্পষ্ট। উপরন্তু আইনি পথে নামার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। কারণ, হঠাৎ করে ক্রীড়াসূচি বদলের প্রভাব সরাসরিভাবে পড়বে ক্লাবগুলির উপর।
সাঁড়াশি চাপে ফিফা
আগামী বছর কাতার বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন ম্যাচগুলিকে দ্রুত সেরে ফেলার লক্ষ্যে গত এপ্রিলেই তিনটি করে ম্যাচ একসঙ্গে আয়োজনের পরিকল্পনা করে কনমেবল। তাকে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে ফিফা। যদিও এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে ইউরোপিয়ান ক্লাব অ্যাসোসিয়েশন। এর শীর্ষপদে বসে রয়েছেন পিএসজি-র প্রেসিডেন্ট নাসির আল-খেলাইফি। তিনিও বলেছেন, ফিফার এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করছি। বাণিজ্যিক স্বার্থ দেখতে গিয়ে ফিফার মতো নিয়ামক সংস্থা হঠাৎ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় রদবদল এনে ক্লাব ও ফুটবলারদের স্বার্থবিরোধী যে কাজ করছে তা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। বিশ্বের নানা প্রান্তে এই সংঘাত ফিফা কীভাবে সামাল দেয় সেদিকেই তাকিয়ে ফুটবল মহল।