Pele No More: বাবার কাছে খেলা শেখা শুরু, ব্ল্যাক পার্লের বর্ণময় ফুটবল কেরিয়ার মনে গেঁথে সকলের
পেলে আর নেই। ফুটবল সম্রাটের শোকে মুহ্যমান ক্রীড়াবিশ্ব। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ে শেষ অবধি হার মানলেন ব্রাজিলের কিংবদন্তি। পুরো নাম এডসন আরান্তেস ডো নাসিমেন্টো (Edson Arantes do Nascimento)। জন্ম ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর, মিনাজ গ্যারিসে (Minas Gerais)-এর ছোট শহর ত্রেস কোরাকোস (Três Corações)-এ। বর্ণময় জীবন থেমে গেল সাও পাওলোর হাসপাতালে।
পেলের প্রয়াণ
বিশ্বকাপ যখন চলছে তখন থেকে ক্রমেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল পেলের। ভর্তি করতে হয়েছিল হাসপাতালে। সেখান বেডে শুয়েই বিশ্বকাপ দেখছিলেন। উৎসাহিত করেছেন ব্রাজিল দলকে। ব্রাজিল-সহ বিভিন্ন দল ও ফিফা তরফেও পেলের আরোগ্য কামনা করা হচ্ছিল। বড়দিনের আগে থেকেই হাসপাতালে পেলের পরিবার থাকতে শুরু করেছিল। বেডে শুয়েই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ক্রিসমাস কাটে পেলের। তবে বছর শেষের আগেই জীবনাবসান।
অনন্য বিশ্বকাপ-রেকর্ড
পেলে ছাড়া আর কোনও ফুটবলার তিনবার বিশ্বকাপ জিততে পারেননি। ১৩৬৬টি ম্যাচে ১২৮১টি গোল করেছেন। তার বেশ কয়েকটি এসেছিল সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকাকালীন খেলা ফ্রেন্ডলিতে। অফিসিয়াল টুর্নামেন্টে তিনি ৮১২টি ম্যাচে ৭৫৭ গোল করেছেন। অসাধারণ স্কিল, মুখে হাসি লেগে থাকতো। ফুটবলকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করার পিছনে তাঁর অবদান অপরিসীম। পোপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, হলিউডের তারকা থেকে বিভিন্ন জগতের তারকারাও পেলের অনুরাগী হয়ে উঠেছেন। খেলার জগতের এক দূতের প্রয়াণ তাই গভীর শূন্যতা তৈরি করল।
বাবার কাছে খেলা শেখা
পেলের বাবা ছিলেন সেমি-প্রফেশনাল ফুটবলার। হাঁটুর চোটের কারণে ফুটবল কেরিয়ার এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। কিন্তু দারিদ্র্যের মধ্যেও সন্তানকে ফুটবলের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ তিনিই শুরু করেছিলেন। সেখান থেকেই পেলের ধাপে ধাপে নানা প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে ফুটবল সম্রাট হয়ে ওঠা। একটা সময় গোলকিপার হিসেবেও খেলেছেন। তাঁকে স্থানীয় জনপ্রিয় ফুটবলার বিলের সঙ্গেও তুলনা করা হতো। গোলকিপার পেলের অবশ্য অ্যাটিং ফরওয়ার্ড হয়ে উঠতে খুব বেশি সময় লাগেনি। দারুণ পেস, স্ট্যামিনা। দুই পায়েই সমান সাবলীল। পায়ের সেই কাজে মুগ্ধ হয়েছে ফুটবলবিশ্ব। পরিচিতি লাভ করেছিলেন ব্ল্যাক পার্ল হিসেবে।
সান্টোস থেকে ব্রাজিল দলে
১৫ বছর বয়সে পেলে ব্রাজিলের অন্যতম সেরা ক্লাব সান্টোসে যোগ দেন। সেই ক্লাবের হয়ে ১৮ বছর খেলার ফাঁকে পেলে দুবার কোপা লিবার্তাদোরেস ও দুবার ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ জেতেন। ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপের আগে ব্রাজিলের জাতীয় দলে খেলার ডাক পান। ১৭ বছরের পেলে অপরিণত বলে তাঁকে না খেলানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন দলের মনোবিদ। যদিও তা ভুল প্রমাণ করেন পেলে। সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক, ফাইনালে সুইডেনের বিরুদ্ধে জোড়া গোল। ব্রাজিল সেবারই প্রথম বিশ্বকাপ জেতে।
পায়ের জাদু
১৯৬২ সালের বিশ্বকাপে পেলে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে গোল করান, গোল করেনও। পরের ম্যাচে চেকোস্লোভাকিয়ার বিরুদ্ধে তিনি চোট পেয়ে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যান। তবে সেবারও বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন পেলে। ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে ব্রাজিল ছিটকে যায় প্রথম রাউন্ড থেকে। ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ পেলে জেতেন ২৯ বছর বয়সে। কেরিয়ারের তৃতীয় বিশ্বকাপ।
খেলেছেন মার্কিন মুলুকেও
পেলে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেন ১৯৭৪ সালে। এরপর তিনি নর্থ আমেরিকান সকার লিগে প্রতি বছর ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে খেলার প্রস্তাব পান। নিজেকে অ্যালকোহল ও ড্রাগের থেকে সরিয়ে রেখেছিলেন। শরীর নিয়ে সচেতন ছিলেন। শিশুদের কাছে রোল মডেল। পেলের জীবনে দুবার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে। বেশ কয়েকজনের সঙ্গে অ্যাফেয়ারের কথা জানা যায়। পেলের ছয় সন্তানের কথা জানা যায়। একজন, যিনি ২০০৬ সালে ক্যানসারে মারা গিয়েছেন, তিনি নিজেকে পেলের সন্তান বলে দাবি করলেও তাকে মান্যতা দেননি ফুটবল সম্রাট। ১৯৭৭ সালে নিউ ইয়র্ক কসমস লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এই দলের হয়ে তিনি কলকাতাতেও খেলে গিয়েছেন।