Exclusive: ডাউন মেমরি লেনে সুভাষ স্মরণে হাঁটলেন মজিদ-মুসা-ডগলাস
ডাউন মেমরি লেনে সুভাষ স্মরণে হাঁটলেন মজিদ-মুসা-ডগলাস
ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র সুভাষ ভৌমিকের প্রয়াণে ভারাক্রান্ত দেশের ফুটবলমহল। সুভাষের সতীর্থ থেকে প্রাক্তন ছাত্র কেউই মেনে নিতে পারছেন না যে সুভাষ পাড়ি দিয়েছেন না ফেরার দেশে, ময়দান মুখরিত হবে না ধরা কন্ঠের বলিষ্ঠ আওয়াজে।
অতীত দিনের এই দিকপাল ফুটবলারের প্রয়াণে শুধু ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীরাই নন, দেশের সীমানা ছাড়িয়ে তাঁর মৃত্যু বিহ্বল মজিদ বিসকরা, ডগলাস, সুলে মুসার মতো ভারতীয় ফুটবলের প্রাক্তন নক্ষত্ররা। এই দেশের মাটিতে খেলে যাওয়া সর্বকালের সেরা বিদেশি বলা হয় মজিদকে। এই ইরানিয় ফুটবলার কখনও সুভাষের সঙ্গে বা তাঁর বিরুদ্ধে না খেললেও নিজের ফুটবল জীবনে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল মজিদের। সুভাষের মৃত্যুর খবর প্রথম এই প্রতিবেদকের কাছ থেকেই পান তিনি। ইরান থেকে শোকজ্ঞাপন করেছেন বাদশা।
অপর দিকে, ডগলাস এবং সুলে মুসা ছিলেন সুভাষ ভৌমিকের কোচিং-এ ইস্টবেঙ্গলের সোনার অধ্যায়ের অন্যতম দুই কাণ্ডারী। আশিয়ান কাপ জয়ী লাল-হলুদের ডিফেন্সের স্তম্ভ ছিলেন ডগলাস এবং সুলে মুসা ছিলেন আশিয়ান কাপ জয়ী সেই দলের অধিনায়ক। ওয়ান ইন্ডিয়া (বাংলা)-র সঙ্গে নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়ে শোকজ্ঞাপন করেছেন এঁরাও।
মজিদ বিসকার: মনোরঞ্জন, হাবিবের সঙ্গে খেললেও কখনও সুভাষ ভৌমিকের সঙ্গে খেলিনি। আমি যখন ইস্টবেঙ্গলে আসি তখন একজন ওনার সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। আমার সঙ্গে হাত মিলিয়ে ছিলেন। নিজের সময়ে ইস্টবেঙ্গলের সেরা স্ট্রাইকার ছিলেন। ওনার খেলার কথা আমি শুনেছি সেই সময়ে। কখনও না খেললেও ওনার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।
সুলে মুসা: অ্যালভিটোর থেকে প্রথম এই খবর পাই। আমি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি। আপাত ভদ্রলোক ছিলেন সুভাষ ভৌমিক। খুব বড় মনের মানুষ ছিলেন এবং একই সঙ্গে যে কোনও পরিস্থিতিতে দলের ফুটবলারদের সাহায্যে এগিয়ে আসতেন। আমরা যখন খেলতাম তখন খুব ভাল ভাবে বুঝিয়ে দিতেন আমাদের থেকে কী চান উনি। কোনও ফুটবলার যদি তাঁর ফর্মেশন বুঝতে না পারত, তাঁকে ধরে ধরে বোঝাতেন বস। উনি সবটা বুঝিয়ে বলতেন। মাঠের মধ্যে এবং মাঠের বাইরে খুব ভাল মানুষ ছিলেন। আমার স্পষ্ট মন আছে ফাইনাল ম্যাচের আগে আমাদের বলেছিলেন, প্রতিপক্ষ কে তা ভেবে কোনও লাভ নেই। আমি জানি তোমরা ওদের হারাবে কারণ তোমরা ওদের থেকে অনেক অনেক ভাল ফুটবলার। তুমি আশিয়ান ফাইনাল খেলছো ভাবার কোনও প্রয়োজন নেই। শুধু যাও আর খেলো, কাউকে ভয় পাবে না, এখানে তোমরাই সেরা দল। ওনার এই কথাগুলো আমাদের অনেক আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল। ৩-৫-২ ফর্মেশনে উনি খেলিয়েছিলেন। এই ফর্মেশন আমাদের বিরাট সাহায্য করেছিল। ওই সময়ে ইস্টবেঙ্গলের সাফল্যে এই ফর্মেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। এমনই মানুষ ছিলেন সুভাষ ভৌমিক। ওনার আত্মার শান্তি কামনা করি, উনি যেখানে থাকুন ভাল থাকুন।
ডগলাস: ভৌমিক স্যার আমার কাছে বাবার মতো ছিলেন। ফুটবল সম্পর্কে ওনার অগাত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা আমায় ভাল মতো মোটিভেট করেছিল। তিনি জানতেন বিদেশি ফুটবলারদের কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, বিশেষ করে আমি নিজের কথা বলব। ম্যাচের আগে, অনুশীলনের আগে আমার সঙ্গে প্রতিদিন কথা বলতেন। অসাধারণ মানুষ ছিলেন সুভাষ ভৌমিক। মাঠের মধ্যে, মাঠের বাইরে প্রত্যেকের খেয়াল রাখতেন, সবার খবর রাখতেন। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত নিজেকে প্রামণ করার তাগিদ ছিল ওনার মধ্যে, তখনও শিখতে চাইতেন। আমি বহুবার বলেছি, তোমাকে কাউকে কিছু প্রমাণ করতে হবে না বস, তোমার জন্য তোমার সাফল্য কথা বলবে। তোমাকে এর থেকে বেশি কিছু করতে হবে না। ফুটবলার, কোচ হিসেবে অনেক ট্রফি দিয়েছ তুমি ক্লাবকে, দেশকে। আমি জীবনে বহু সেরা কোচের অধীনে খেলেছি কিন্তু ভারতে আমি সাফল্য পেয়েছি একমাত্র সুভাষ ভৌমিকের জন্য। ওনার জন্যই আমি ইস্টবেঙ্গলে এক মরসুমের বেশি খেলতে পেরেছি। আমি জানি উনি যেখানে আছেন আমাদের থেকে অনেক ভাল আছেন। এখন ওনার পরিবারের পাশে আমাদের থাকতে হবে। সব সময়ে আমার হৃদয়ে থাকবেন সুভাষ ভৌমিক।