শিয়রে বিশ্বকাপ, তাই আপাতত ক্রিকেট নয় ফুটবলই কলকাতায় শেষকথা
কলকাতার অনেকেই রবিবার ভোরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল দেখলেও সন্ধ্যায় আর আইপিএল ফাইনাল দেখেননি। ফুটবল বিশ্বকাপের আঁচ পড়ছে শহরে।
ফুটবল জ্বর ঢুকে পড়েছে শহরে। রবিবার দিনই তা পরিষ্কার হয়ে গেছে। একদিনে দুটি ফাইনাল ছিল। আগের ভোররাত অবধি চলেছে চ্যম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল। আবার সন্ধ্যাবেলা ছিল আইপিএল ফাইনাল। এমনিতে ভারতবর্ষ ক্রিকেটের দেশ হলেও, কলকাতা শহরের ফুটবল উন্মাদনাই আলাদা। কলকাতাবাসীর অনেকেই কিন্তু ভোর অবধি জেগে রিয়ালের জয় দেখার পর সন্ধ্যায় আর টিভিমুখো হননি। গ্যারেথ বেলের অসাধারণ গোলের পর আইপিএল ফাইনাল তাদের কাছে ম্যাড়মেড়ে মনে হয়েছে। আসলে একেবারে ঘাড়ের ওপর বিশ্বকাপ, এখনই তো ফুটবল আঁচেই নিজেকে সেঁকে নেওয়ার সময়।
ভারতবর্ষে ক্রিকেটকে বলা হয় একটি ধর্ম। তবে কলকাতাবাসী বলা যেতে পারে খেলা পাগল। ক্রিকেট হলে ইডেন গার্ডেন্সেও যেমন রেকর্ড ভিড় হয়, বড় ম্যাচ দেখতে যুবভারতীতেও তাই। গত একমাস ধরে কলকাতা উপভোগ করেছে আইপিএল। রাস্তায় রাস্তায় কেকেআর কিংবা অন্য প্রিয় দলের জার্সি পড়ে লোকজনকে দেখা গিয়েছে। পাড়ার চায়ের দোকানের চর্চাতেও আগের রাতের আইপিএল ম্যাচ নিয়ে আলোচনা চলেছে। সন্ধ্যা থেকেই ক্লাবগুলোতে টিভিতে হইহই করে আইপিএল-এর ম্যাচ চলেছে।
কিন্তু গত এই একমাসের ছবিগুলো দ্রুতই পাল্টে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই কেকেআর-এর বেগুনী জার্সিধারীদের পরণের জার্সিগুলোর রঙ বদলে হচ্ছে হলুদ-সবুজ বা আকাশী-সাদা। পাড়ার দেওয়ালে পড়ছে মেসি-নেইমারদের পোস্টার। আর যে অপেক্ষার বেশি বাকি নেই। আগামী ১৪ জুন থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্পোর্টিং ইভেন্ট ফুটবল ওয়ার্ল্ড কাপ। অনুভূতিটা অনেকটাই দূর্গাপূজোর আগে মহালয়ার সময়ের মতো। শিহরিত বাঙালী।
খেলাপ্রিয় বাঙালীর কাছে বিশ্বকাপ মানেই যে অনেক নস্টালজিয়া, অনেক আবেগভরা স্মৃতি। ৯০-তে বিশ্বকাপের মাঠ থেকে মারাদোনা শেষবার বেরিয়ে আসার সময় তাঁর সঙ্গে আপামর বাঙালীও চোখের দল ফেলেছিল। আসলে বিশ্বকাপের এই কটাদিন বিশ্বফুটবলের তারকারা সব যে বাঙালীর ঘরের ছেলে হয়ে যান। তবে এবার বিশ্বকাপ দেখতে রাতের ঘুম নষ্ট করতে হবে না। পূর্ব ইউরোপের দেশ রাশিয়ায় এবার বসছে আসর। তাই সব খেলাই বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে রাত সাড়ে ১২ টার মধ্যে শুরু হয়ে যাবে।
তবে এরমধ্যে ক্রিকেট একেবারে বন্ধ থাকছে না। ছুটবল বিশ্বকাপের প্রথম বল গড়ানোর দিনই শুরু হবে ভারত-আফগানিস্তানের টেস্ট। এই প্রথম আফগানরা টেস্ট ম্যাচ খেলবেন। তারপর আছে আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে দুটি টি টুয়েন্টি ম্যাচ। ফুটবল বিশ্বকাপের উত্তেজনা চরমে পৌঁছবে ৬ জুন, নকআউট শুরু হবে। সেসময় ভারতের ক্রিকেট দল থাকবে ইংল্যান্ড সফরে। সেখানে খো অবশ্য আগস্টের আগে শুরু হবে না।
তবে এই ক'টাদিন বাঙালী যে ক্রিকেটমুখো হবে না তা বলাই বাহুল্য। তবে শুধু কলকাতা কেন গোটা ভারতেই ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। গত বিশ্বকাপের সময় সোশাল মিডিয়ায় ফুটবল চর্চায় ভারত ছিল দুনম্বরে। আগে ছিলেন একমাত্র আয়োজক ব্রাজিলিয়রা। ফাইনাল সহ বেশ কয়েকটি ম্যাচে টিভি দর্শক সংখ্যা পৌঁছে গেছিল সাড়ে সাত থেকে আট কোটিতে।