Exclusive Jose Ramirez Barreto: সুভাষ ভৌমিকের স্মৃতিচারণায় ‘সবুজ তোতা’ ব্যারেটো
সুভাষ ভৌমিকের স্মৃতিচারণায় ‘সবুজ তোতা’ ব্যারেটো
সুভাষ ভৌমিকের প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমেছে ময়দানে। খেলোয়াড় জীবনে সুভাষের সতীর্থরা থেকে শুরু করে তাঁর কোচিং-এ খেলা প্রাক্তন ফুটবলাররাও অদৃষ্টের এই লিখন মেনে নিতে পারছেন না। তেমনই সুভাষ ভৌমিকের চলে যাওয়া মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না মোহনবাগান কিংবদন্তি হোসে রামিরেজ ব্যারেটো।
বিদেশি হলেও প্রায় পাকা ভারতীয় হয়ে উঠেছে ব্যারেটো। এই দেশের সঙ্গে তঁর সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। ভারতীয় ফুটবলের নক্ষত্র পতনে শোকাহত তিনিও। রবিবার ওয়ান ইন্ডিয়া (বাংলা)-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ব্যারেটো বলেন, "দু-তিন মরসুম মোহনবাগানে সুভাষ ভৌমিকের অধীনে আমি খেলেছি। প্রতিটা প্লেয়ারের খুব কাছের মানুষ ছিলেন তিনি। কোচ হলেও কখনও কড়া শাসনে রাখতেন না।সব সময়ে স্বাধীন দিতেন ফুটবলারদের। প্রচন্ড খোলা মনের মানুষ ছিলেন উনি। কোচ হলেও নিজে থেকেই দলের সিনিয়র প্লেয়ারদের সঙ্গে দলের ফর্মেশন, হালহকিকত নিয়ে এবং প্রতিপক্ষকে নিয়ে আলোচনা করতেন ভৌমিক দা। কেরিয়ারে অনেক সাফল্য পেলেও শেখার খিদে ছিল দেখার মতো। সব সময়েই শিখতে চাইতেন। ফুটবলারদের কথা শুনতেন মন দিয়ে।"
নিজের শেখার ইচ্ছার পাশাপাশি ফুটবলারদের জন্য তাঁর দার অবিরত ছিল। ব্যারেটোর কথায়, "আমার এখনও মনে হয় অনেক কিছু শেখার ছিল মানুষটার থেকে। তাঁকে সামনে থেকে দেখে মনে হত এনার থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। প্লেয়ারদের সঙ্গে সব সময়ে যোগাযোগ রাখতেন। ওনার দরজা সব সময়ে খোলা থাকত। যে কোনও সময়ে, যে বিষয়ে আলোচনা করার জন্য ওনার কাছে যেত পারত ফুটবলাররা। আমার মনে পড়ে না আমি কখনও ওনাকে রেগে যেতে দেখেছি, কারোর সঙ্গে মারপিট করতে দেখেছি। দলের প্রত্যেকের কাছে বাবার মতো ছিলেন তিনি। ওনার থেকে সব সময়েই আমার ভাল সম্পর্ক ছিল এবং অনেক কিছু শিখেছি। এখন আমিও একজন কোচ। ওনার থেকে শেখা অনেক কিছুই কাজে লাগাতে চেষ্টা করি।"
অনেক বড় মাপের কোচও তারকাখচিত ড্রেসিং রুমের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন না। সাফল হলেও প্লেয়ারদের কাছের মানুষ হয়ে উঠতে পারেন না অনেকেই। তবে, সুভাষ ভৌমিকের ক্ষেত্রে বিষয়টা ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। যেমন সাফল্য পেয়েছেন, তেমনই ফুটবলারদের কাছের মানুষ হয়ে বরাবর ড্রেসিং রুমের নিয়ন্ত্রণ রেখেছেন নিজের হাতে। বাগানের সবুজ তোতার কথায়, "ড্রেসিং রুমের উপর অনেক ভাল নিয়ন্ত্রণ ছিল সুভাষ ভৌমিকের। এটা তাঁর অন্যতম সুবিধাও ছিল। ফুটবলার, অফিসিয়াল, সমর্থক, মিডিয়া প্রত্যেকের সঙ্গেই মধুর সম্পর্ক ছিল তাঁর। এক জন কোচের হাতে ড্রেসিং রুমের নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি, যেমন জরুরি মাঠের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ থাকা। দু'টোই ছিল সুভাষ ভৌমিকের। প্রত্যেকের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষমতা ছিল। এক কথায় একজন ভাল ম্যানেজার ছিলেন তিনি।"
ব্যারেটো জানান, পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়, অমল দত্ত, সুব্রত ভট্টাচার্যের মতোই বাংলা তথা ভারতীয় ফুটবলের প্রতি সুভাষ ভৌমিকের অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর কথায়, "ইস্টবেঙ্গলকে শীর্ষস্থানে নিয়ে গিয়েছেন উনি। আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইস্টবেঙ্গলকে এশিয়ান কাপ চ্যাম্পিয়ন করিয়েছিলেন। দেশের ফুটবলে তাঁর কোচিং-এ বাংলার দলগুলো একাধিক সাফল্য পেয়েছে। ভারতীয় ফুটবলে ওনার অবদান অনস্বীকার্য।"