আইএসএল ২০১৮-১৯, মুম্বইয়ের মাঠ থেকে দুরন্ত জয় তুলে নিল ইস্পাত-মানবরা
ইন্ডিয়ান সুপার লিগের ২০১৮-১৯ মরসুমে তাদের প্রথম ম্যাচেই মুম্বই সিটি এফসি বিরুদ্ধে জামশেদপুর এফসি ২-০ গোলের ব্যবধানে জয় পেল।
এই মরসুমের প্রথম সাক্ষাতেও জামশেদপুরের বিরুদ্ধে জিততে পারল না মুম্বই সিটি এফসি। পর্তুগিজ কোচের অধীনেও বদলাল না ছবিটা। ম্যাচের ২৮ মিনিটে এই মরসুমে নতুন সই করা স্প্যানিশ মিডফিল্ডার মারিও আর্কেস-এর দুরন্ত হেড ও ম্যাচের একেবারে অন্তিম লগ্নে (৯০+৫ মিনিটে) মোর্গাদোর আরও এৃকটি গোলে, পঞ্চম আইএসএল-এ তাদের প্রথম ম্যাচেই, মুম্বই ফুটবল এরিনা থেকে ২-০ গোলে জয় তুলে নিল জামশেদপুর এফসি। ফলে আইএসএল-এ এখনও পর্যন্ত 'ইস্পাত-মানব'দের সঙ্গে তিন সাক্ষাতের একটিতেও জয় পেল না মুম্বই সিটি এফসি।
এদিন ঘরের মাঠে প্রথম ম্যাচে চোটের কারণে খেলতে পারেননি মুম্বইয়ের এই মরসুমের অধিনায়ক আর্নল্ড ইসোকো। তাঁর বদলে ক্যাপ্টেনের আর্মব্যান্ড ছিল অমরিন্দরের হাতে। প্রত্যাশা মতোই এদিন মুম্বই সিটি দলের হয়ে অভিষেক ঘটে ভারতের জাতীয় দলের ফুটবলার শুভাশীষ রায়চৌধুরির। তবে এদিন হর্হে দলে রাখেননি দিল্লি ডায়নামোজ থেকে আসা মাতিয়াস মিরাবাহেকে।
অন্যদিকে কার্ড সমস্যআর জন্য এদিন জামশেদপুর দলের হয়ে নামার উপায় ছিল না সুব্রত পাল ও টিম কাহিলের। সেজার ফেরান্দো এদিন স্ট্রাইার হিসেবে দলে রেখেছিলেন সাফ কাপে ভারতের অনুর্ধ২৩ দলের হয়ে খেলা সুমিত পাসিকে। এছাড়া স্কোয়াডে থাকা চার স্প্যানিশ ফুটবলারকেই এদিন খেলান অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের প্রাক্তন কোচ। এছাড়া ধনচন্দ্র সিংয়ের চোট থাকায় এদিন লেফট ব্যাক হিসেবে খেলেন বিকাশ জাইরু।
প্রথম থেকেই গতিতে ঝড় তুলে মুম্বইয়ের নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছিলেন জেরি। প্রথম কয়েক মিনিটেই বেশ কয়েকবার রাইট উইং দিয়ে আক্রমণে উঠে বক্সের মধ্যে নিখুঁত নিশানায় ক্রস ভাসাতে শুরু করেছিলেন তিনি। যার একটি থেকে বাইসাইকেল কিক নিয়েছিলেন সিদোনচা। কিন্তু তা তিন কাঠির মধ্যে রাখতে পারেননি।
প্রথম থেকে চাপ বজায় রেখেই আধ ঘন্টা যেতে না যেতেই জামশেদপুর তাদের প্রথম গোলটি তুলে নিয়েছিল। গোলটি আসে জেএফসির দুই স্প্যানিস ফুটবলারের বোঝাপড়ায়। মুম্বই সিটির বক্সের বাঁপ্রান্তে কার্লোস কালভোকে একটি আড়াআড়ি পাস দেন মারিও আর্কেস। বলটি বাড়িয়েই তিনি ছুট লাগিয়েছিলেন বক্সের মধ্যে। কালভো তা লক্ষ্য করে নিঁখুত ক্রস দিয়েছিলেন আর্কেসের মাথায়। বলটি হেড করে জালে জড়াতে ভুল করেননি ভিয়ারিয়াল অ্যাকাডেমির প্রাক্তন ছাত্র। প্রথমার্ধের খেলা শেষ হয় ১-০ ফলেই।
দ্বিতীয়ার্ধে মুম্বই খেলোয়াড়রা বাড়তি উদ্যম নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু খেলার গতির বিপরীতেই প্রথম গোলের সুযোগটা পেয়েছিল জামশেদপুরই। ৪৭ মিনিটে কর্ণার থেকে ভেসে আসা বলে তিরির নেওয়া একটি হেড অমরিন্দরকে পরাস্ত করে প্রায় গোলে ঢুকে গিয়েছিল। কিন্তু একেবারে গোললাইন থেকে কোনওরকমে পা দিয়ে সে যাত্রায় দলের পতন রোধ করেন গোইয়ান। বল তার পায়ে লেগে বার পোস্টের উপর দিয়ে চলে যায়।
এর ৫ মিনিট পরেই খেলায় সমতা ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল মুম্বই। দুর্দান্ত ডিফেন্স চেরা পাস বাড়িয়েছিলেন সঞ্জু প্রধান। সেই বল ধরে প্রায় গোল করেই ফেলেছিলেন বাস্তোস। কিন্তু গোল থেকে বেরিয়ে এসে একেবারে বক্সের মাথায় দুরদান্তভাবে বলটি ব্লক করেন শুভাশীষ রায়চৌধুরি।
আবারও সমতা ফেরানোর সুযোগ এসেছিল মুম্বইয়ের হাত রফিকের তোলা একটি ক্রস থেকে জোরালো হেড নিয়েছিলেন তাদের সেনেগালি স্ট্রাইকার সোগৌ। কিন্তু জামশেদপুরের গোলরক্ষক আঙুলের ডগা দিয়ে কোনওক্রমে বল বাইরে পাঠান।
এরপর দিনের সহজম সুযোগ পেয়েছিলেন জামশেদপুরের সুমিত পাসি। কার্লোস কালভোর মাপা ক্রসে ঠিকঠাক পা ঠেকালেই গোল পেতেন এই ভারতীয় অনুর্ধ২৩ স্ট্রাইকার। কিন্তু তার ছোঁয়াটা যথাযথ হয়নি। বল চলে যায় গোলের পাস দিয়ে।
অনেক সুযোগ তৈরি করেও জামশেদপুরের ডিফেন্ডাররা সজাগ থাকায় গোল করতে পারেনি মুম্বই। তবে একবার তারা বল কিন্তু জালে জড়িয়ে দিয়েছিল। ম্যাচের ৮৩ মিনিটে বাস্তোসকে ফাউল করায় ফ্রিকিক পেয়েছিল হোস্টরা।
পাওলো মাশাদো তাঁর জাদুর ঝলক দেখান ফ্রিকিকটিতে। কিন্তু বল বারপোস্টের নিচে লেগে ড্রপ খেয়ে মাঠে ফিরে আসে। ফিরতি বলে জাঁপিয়ে পড়ে হেড করে বল জালে জড়িয়ে দেন সোগৌ।
গোলের উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতে গিয়েছিলেন মুম্বইয়ের দর্শক-সমর্থকরা। কিন্তু তাদের মন ভেঙে দিয়ে তার আগেই অফসাইডের বাঁশি বাজিয়ে দেন রেফারি। জানানো হয় সোগৌ ফ্রিকিক নেওয়ার সময়ই অফসাইড ছিলেন। লাইন্সম্যান আগেই ফ্ল্যাগ তুলেছিলেন। এনিয়ে মাঠে সামান্য বাদানুবাদও হয়।
১-০ ফলেই খেলা শেষ হবে যখন ভাবা হচ্ছে তখন, একেবারে ইনজুরি টাইমেরও শেষ মুহূর্তে বিদ্রুত গতির প্রতি আক্রমণে আরও একটি গোল করে জেএফসি। ফাঁকায় মোর্গাদোকে উদ্দেশ্য করে বল বাড়িয়েছিলেন সের্গিও সিদোনচা। গোলোর একেবারে কোনা গিয়ে বল জালে জড়াতে ভুব করেননি মোর্গাদো।
পরের রাউন্ডে বেঙ্গালুরুতে বেঙ্গালুরু এফসির মুখোমুখি হবে জামশেদপুর এফসি। অপরদিকে মুম্বই সিটি এফসি যাবে কোচিতে কেরল ব্লাস্টার্সের মোকাবিলা করতে।