বিশ্বকাপের আবহে জনসমুদ্রের রূপ নেওয়া কাতার দাঁড়িয়ে অন্তহীন প্রশ্নের সামনে,ভবিষ্যৎ অন্ধকার অধিকাংশ স্টেডিয়ামের
বিশ্বকাপের আবহে জনসমুদ্রের রূপ নেওয়া কাতার দাঁড়িয়ে অন্তহীন প্রশ্নের সামনে,ভবিষ্যৎ অন্ধকার অধিকাংশ স্টেডিয়ামের
২০১০ সালে বদ্ধ খাম থেকে যখন ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হিসেবে আয়োজক দেশ হিসেবে কাতারের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল তখনই অনেকেই অনিশ্চিত ছিলেন এই প্রতিযোগীতার ভবিষ্যৎ নিয়ে। এক যুগ পর ৩০০ বিলিয়ন ডলার এবং বিশ্বকাপের ইতিহাসে সব থেকে বেশি মার্কেটিং-এর পিছনে খরচ করার পর বিশ্ব ফুটবল মধ্যপ্রাচ্যের এই ছোট দেশটি সফল ভাবে আয়োজন করতে সক্ষম হয়েছে।
কাতারে আয়োজিত ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২ তার ক্লাইম্যাক্সে এসে উপস্থিত হয়েছে। গ্রুপ পর্যায়ের পর থেকে ধীরে ধীরে খালি হতে শউরু হওয়া কাতার বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে কার্যত ভাঙা হাটের রূপ নিয়েছে। এই এক মাস প্রায় ৭ লক্ষ ফুটবলপ্রেমী আরব দেশটি এবং তার রাজধানীকে মাতিয়ে রাখলেও কাতার ফিরছে তার পুরনো রূপো। সাত লক্ষের অধিকাংশই দেশ ছেড়ে, দীর্ঘ একমাসের হইহুল্লোরের পর এক ঝটকায় অনেকটাই শূন্যতা বিরাজ করছে। ফুটবলপ্রেমীদের মতোই বিপুল সংখ্যক অভিবাসী শ্রমিকও নিজেদের দেশে ফিরছে। এই অবস্থায় রিয়েল এস্টেট এজেন্টরা উদ্বিগ্ন কারণ এর ফলে অ্যাপার্টগুলি অসমাপ্ত থাকবে, এক ঝটকায় অধিকাংশ হোটেলের রূমও প্রচুর খালি পড়ে রয়েছে এবং যে স্টেডিয়ামগুলি কোটি কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা হয়েছে তার মধ্যে অনেকগুলোই আর হয়তো কখনও ব্যবহার করা হবে না।
বিশ্বকাপের আগে কাতার বারবার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিল অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে উপযুক্ত ব্যবহার না করার কারণে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বারবার খবরের শিরোনামে এসেছে কাতার। তবে, মানবাধিকারের জন্য লড়াই করা সংস্থাগুলোর তরফ থেকে প্রতিবাদের পর এবং সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সমালোচিত হওয়ার পর মানবাধিকারকে অগ্রধিকার দিয়েছে কাতার এবং অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়েও তারা কাজ করেছে উল্লেখযোগ্য ভাবে।
যদিও কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজনের সুবিধা সেই দেশ পাবে তা মনে করেন ক্রিশ্চিনা ফিলিপৌ যিনি ইংল্যান্ডের পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্য়ালয়ের স্পোর্টস ফাইনান্সের লেকচারার। বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে কাতারের লক্ষ্য ছিল টুরিসমের প্রচার ঘটানো। পার্শ্ববর্তী দুবাই বারবার পর্যটকদের নজরে এসেছে এবং হাইপ্রোফাইল পর্যটকদের পছন্দের বিদেশি ডিস্টিনেশনগুলির মধ্যে শীর্ষ স্থানে জায়গা করে নিয়েছে। দুবাইয়ের এই বাড়বাড়ন্তের মধ্যে বিশ্বের দরবারে নিজেদের পর্যটনের উপযুক্ত স্থান হিসেবে প্রমাণিত করারও তাগিদ ছিল কাতারের মধ্যে। উল্লেখ্য বিষয় হল, কাতার যেমনটা সারা বিশ্ব থেকে পর্যটক আশা করেছিল তেমনটা বিদেশি পর্যটক তারা পায়নি বিশ্বকাপের সময়ে। বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার আগেই অধিকাংশ অ্যাপার্টমেন্ট এবং ভাড়া বাড়িগুলো ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। কাতারে বিশ্বকাপের প্রথম দুই সপ্তাহে ভ্রমণ করেছিলেন ৭ লক্ষ ৬৫ হাজার সমর্থক যা কাতার প্রশাসনের অনুমান করা পর্যটকের সংখ্যার থেকে কম। কাতার আশা করেছিল ১.২ মিলিয়ন দর্শক প্রথম দুই সপ্তাবে তাদের দেশে ভ্রমণ করবে।
ব্লুমবার্গ নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী তাদের এক কাতারি আধিকারিক বলেছেন, "যারা বলেছিল কাতার সাফল্যের সঙ্গে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে পারবে না, তাদের কাছে জবাব দিয়েছি আমরা। অনেকে মেনেও নিয়েছে কাতারে আয়োজিত বিশ্বকাপ নিরাপত্তার দিক দিয়ে দুর্দান্ত, ফ্যামেলি ফ্রেন্ডলি ছিল।"
উল্লেখ্য, কাতারে ঘরোয়া ফুটবল ব্যাপক হারে খেলা হয় না। এবং এর কারণে কোটি কোটি টাকা খরচ করে তৈরি হওয়া স্টেডিয়ামগুলির মধ্যে অনেকগুলিই ভেঙে ফেলা হবে বা অন্য কিছুতে এগুলিকে পরিবর্তিত করা হবে। কাতার আন্তর্জাতিক ফোন কোড ৯৭৪ থেকে বিশ্বকাপের একটি স্টেডিয়ামের নাম হয়েছে স্টেডিয়াম ৯৭৪। কন্টেনার দিয়ে এই স্টেডিয়ামটি তৈরি হয়েছে। বিশ্বকাপের পর এই স্টেডিয়ামটিকেও ভেঙে ফেলা হবে। অন্যান্য ছয়টি স্টেডিয়ামকে শপিং মল, হোটেলৈ রূপান্তরিত করার কথা চিন্তা ভাবনা শুরু হয়েছে।