ফিফা বিশ্বকাপে অঘটনের শিকার মেসিরা, আর্জেন্তিনার সমর্থকরা কেন এবার ১৯৯০-এর অপেক্ষায়?
কাতারে ফিফা বিশ্বকাপ প্রথম অঘটনটির সাক্ষী থাকল মঙ্গলবার। লুসাইল স্টেডিয়াম, যেখানে লিওনেল মেসির হাতে ১৮ ডিসেম্বর বিশ্বকাপ দেখার প্রত্যাশা করছেন ভক্তরা, বিশ্বকাপ অভিযান শুরুর দিন সেখানেই বড় ধাক্কা খেল আর্জেন্তিনা। লিওনেল মেসির পেনাল্টিতে বিরতিতে এগিয়ে ছিল দিয়েগো মারাদোনার দেশ। কিন্তু এরপর তিনটি গোল বাতিল আর জোড়া গোল হজমের খেসারত দিয়ে হেরেই গেল আর্জেন্তিনা।
|
প্রথম ম্যাচেই হার আর্জেন্তিনার
বিশ্বকাপ অভিযানে প্রথম ম্যাচেই আর্জেন্তিনা ধরাশায়ী হলো এই নিয়ে ষষ্ঠবার। ১৯৯০ সালের পর এবারই প্রথম। ১৯৩৪ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্তিনা প্রথম ম্যাচেই সুইডেনের কাছে পরাস্ত হয়েছিল, তবে সেটি ছিল রাউন্ড অব সিক্সটিনের ম্যাচ। ১৯৫৮ সালে পশ্চিম জার্মানির কাছে প্রথম ম্যাচে পরাস্ত হয়েছিল আর্জেন্তিনা (১-৩ গোলে)। ১৯৭৪ সালে পোল্যান্ডের কাছে গ্রুপ পর্বে প্রথম ম্যাচে পরাজয়ের সম্মুখীন হয় আর্জেন্তিনা (২-৩ গোলে)। ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের কাছে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচেই আর্জেন্তিনা হেরে গিয়েছিল ০-১ গোলে। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে গ্রিসকে ৪-০ গোলে, ১৯৯৮ সালে জাপানকে ১-০ গোলে, ২০০২ সালে নাইজেরিয়াকে ১-০ গোলে, ২০০৬ সালে আইভরি কোস্টকে ২-১ গোলে, ২০১০ সালে নাইজেরিয়াকে ১-০ গোলে এবং ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনাকে ২-১ গোলে হারায় আর্জেন্তিনা। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে আইসল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে। রাশিয়া বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার কাছে ০-৩ গোলে হারার পর শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল আর্জেন্তিনা। রাউন্ড অব সিক্সটিনে অবশ্য ফ্রান্সের কাছে ৩-৪ গোলে পরাস্ত হয়েছিলেন মেসিরা। ফ্রান্স চ্যাম্পিয়নও হয়।
|
মেসিদের হারিয়ে চমক সৌদির
আর্জেন্তিনা আজ সৌদি আরবের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল টানা ৩৬ ম্যাচে অপরাজেয় থেকে। এগিয়েও গিয়েছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। আর্জেন্তিনার এদিনের পরাজয় এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় অঘটন বলে চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে লুই ফিগোর মতো প্রাক্তনরা কিন্তু মনে করছেন, লিওনেল মেসি যে পেনাল্টি থেকে গোলটি করেছিলেন, সেটি আদৌ পেনাল্টি ছিল না। অনেকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন সৌদি আরবকে। যোগ্য দল হিসেবেই সৌদি আরব এদিন জিতেছে বলে মনে করছেন অনেক ফুটবল বিশেষজ্ঞ। ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন কোচ ফিলিপ ডি রাইডার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন সৌদি আরবের কোচ হার্ভে রেনার্ডের। আর্জেন্তিনার মতো দলকে এভাবে দাপট দেখিয়ে হারানো নেহাত কম কথা নয়। ফুটবলপ্রেমীরা মুগ্ধ সৌদি আরবের গোলকিপার মহম্মদ আল ওয়াইসের দুর্ভেদ্য হয়ে ওঠা দেখে। তিনি বেশ কয়েকটি অনবদ্য সেভ করেছেন। যার জেরে ইতালির টানা ৩৭ ম্যাচে অপরাজেয় থাকার রেকর্ড স্পর্শ করতে পারল না আর্জেন্তিনা। গ্যালারিতে সৌদি আরবের সমর্থকরা আর্জেন্তিনাকে হারানোর স্বপ্নপূরণ করতে পেরে উচ্ছ্বসিত। তাঁরা বলেন, মেসিকে তো খুঁজেই পাওয়া গেল না, আমরা তাঁকে হারিয়ে দিলাম। নিঃসন্দেহে এশিয়ার দল হিসেবে সৌদি আরবের জয় কৃতিত্বের।
নব্বইয়ের পুনরাবৃত্তির অপেক্ষা
১৯৯০ সালের বিশ্বকাপের পর এই প্রথম কোনও বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই পরাস্ত হলো আর্জেন্তিনা। তবে ১৯৯০ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারলে অবশ্য লিওনেল মেসিদের নিয়ে আশাবাদী হওয়াই যায়। কেন না, সেবার ক্যামেরুনের কাছে আর্জেন্তিনা গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচেই হেরে গিয়েছিল। কিন্তু সেই ধাক্কা সামলে ১৯৯০ বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠে আর্জেন্তিনা। যদিও কাপ জিততে পারেনি। গ্রুপ পর্বে প্রথম ম্যাচে হারের ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল আর্জেন্তিনা। সোভিয়েত ইউনিয়নকে ২-০ ব্যবধানে হারানোর পর রোমানিয়ার সঙ্গে ড্র করেছিল ১-১ গোলে। সেবার গ্রুপে তৃতীয় স্থানে থাকলেও অন্য গ্রুপগুলিতে তিন নম্বরে থাকা দলগুলির তুলনায় পয়েন্টে এগিয়ে থাকার সুবাদে নক আউট পর্বে যায় আর্জেন্তিনা। প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলকে হারিয়েছিল ১-০ গোলে। কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে যুগোস্লাভিয়াকে হারায়। সেমিফাইনালে ইতালির বিরুদ্ধে ম্যাচের ফল ১-১ থাকার পর টাইব্রেকারে জয়লাভ করে আর্জেন্তিনা। ফাইনালে পশ্চিম জার্মানি ১-০ গোলে হারিয়েছিল আর্জেন্তিনাকে।
আর্জেন্তিনার পরবর্তী ম্যাচগুলি
অঙ্কের নিয়মে রাউন্ড অব সিক্সটিনে যাওয়ার আশা নিশ্চিতভাবেই রয়েছে আর্জেন্তিনার। তবে লড়াইটা কঠিন হয়ে গেল। দুটি ম্যাচ জিতলেও স্বস্তি ফিরে পাবেন মেসিরা। যদি একটিতে ড্র করে বসে আর্জেন্তিনা, তখন তাকিয়ে থাকতে হবে অন্য ম্যাচের ফলাফলগুলির দিকে। গ্রুপ সি-তে আর্জেন্তিনার পরবর্তী ম্যাচ শনিবার মেক্সিকোর বিরুদ্ধে। এটিও উপভোগ্য লড়াই হবে। শেষ বিশ্বকাপে কাপ জয়ের স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে এই ম্যাচটিকে নিজেদের উজাড় করে দেবেন মেসিরা। আর্জেন্তিনা গ্রুপের শেষ ম্য়াচটি খেলবে ৩০ নভেম্বর পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে।