কোচ রেনার্ডের সাদা জামায় কীভাবে ঘায়েল নীল-সাদা? সৌদি আরব পিছিয়ে থাকার সময় কেমন ছিল ড্রেসিংরুম? দেখুন ভিডিও
ফিফা বিশ্বকাপে এবারের সবচেয়ে বড় অঘটন সৌদি আরব ঘটাল আর্জেন্তিনাকে হারিয়ে দিয়ে। ফিফা ক্রমতালিকায় আর্জেন্তিনার অবস্থান তিনে, সৌদি আরব রয়েছে ৫১ নম্বরে। আয়োজক কাতারের ঠিক পরেই। কাতার যেখানে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে পরাস্ত হয়েছে, সেখানে সৌদি আরব স্মরণীয় জয় ছিনিয়ে নিয়েছে লিওনেল মেসির পেনাল্টি থেকে করা গোলে পিছিয়ে পড়া সত্ত্বেও। ২-১ গোলে জয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশংসিত হচ্ছে দলের ফরাসি কোচ হার্ভে রেনার্ডের স্ট্র্যাটেজি। দ্বিতীয়ার্ধে সৌদি আরবকে অন্য চেহারায় দেখা গেল রেনার্ডের পেপ টকে।
আত্মতুষ্টি নেই
৩৬ ম্যাচে অপরাজেয় আর্জেন্তিনার বিরুদ্ধে খানিকটা ঝুঁকি নিয়েই অফ সাইড ট্র্যাপের স্ট্র্যাটেজি নিয়েছিলেন রেনার্ড। বারবার অফ সাইডের ফাঁদে জড়িয়ে পড়া এবং তিনটি গোল বাতিল আর্জেন্তিনার পরিকল্পনা ওলটপালট করে দেয়। ম্যান মার্কিংয়ের প্রথাগত রণকৌশলে না গিয়ে অফ সাইড ট্র্যাপও কার্যত বোতলবন্দি করে দেয়। রেনার্ড অবশ্য স্মরণীয় জয় ছিনিয়েও সতর্ক। লুসাইল স্টেডিয়ামে ম্যাচ জেতার পর সৌদি আরবের কোচ রেনার্ড বলেন, আকাশের সব তারা আমাদের জন্য সারিবদ্ধ। কিন্তু ভুলে যাবেন না আর্জেন্তিনা অসাধারণ দল। এটাই ফুটবল। কখনও কখনও অবাক করে দেওয়ার মতো ক্রেজি কিছু ঘটে। এখনও দুটি ম্যাচ বাকি। ফলে জয়ের সামান্য সেলিব্রেশনের অনুমতি দিলেও গা ভাসাতে দিতে নারাজ।
|
কোন মন্ত্রে সাফল্য?
কোচের কথায়, বিশ্বকাপের মতো আসরে যখন কোনও দল আসে তখন নিজেদের প্রতি বিশ্বাস রাখাটা খুব জরুরি। কারণ ফুটবলে সব কিছুই ঘটতে পারে। এখনও দলের কিছু বিষয়ে উন্নতির প্রয়োজন উপলব্ধি করছেন তিনি। তাঁর কথায়, ট্যাকটিক্যালি আমরা প্রথমার্ধে ভালো খেলিনি। আমরা প্রতিপক্ষের সেন্টার ব্যাকদের এবং ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার লিওনার্দো পারেদেসের উপর সেভাবে চাপ তৈরি করতে পারিনি। আমরা যদি দ্বিতীয় গোল হজম করতাম, তাহলে খেলা ওখানেই শেষ হয়ে যেত। প্রতিপক্ষের উপর চাপ তৈরি করতে না পারায় প্রথমার্ধের শেষে আমি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। দৃঢ়চেতা মনোভাবে খামতি ছিল। বিশ্বকাপে সব সময় সেরাটা উজাড় করে দিতে হয়। প্রথমার্ধে যেমন খেলেছি তেমন আর খেলা চলবে না, দলকে সাফ বার্তা রেনার্ডের।
|
স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
আর্জেন্তিনা এই ম্যাচে সৌদি আরবকে হাল্কাভাবে নিয়েছিল কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন রেনার্ড। তিনি বলেছেন, অনেক সময় কোনও প্রতিপক্ষকে কোনও দল মোটিভেশনের নিরিখে সেরা না ভাবতেই পারে। সেটাই স্বাভাবিক। নীচে থাকা কোনও দলের বিরুদ্ধে নামার সময় আমাদের ক্ষেত্রেও সেটা হয়। এটা অনেকে বুঝতে চান না যে, ব্রাজিলের বিরুদ্ধে খেলার মতো মোটিভেশন সৌদি আরবের বিরুদ্ধে একইরকম হতে পারে না। উল্লেখ্য, মরক্কো দলের সঙ্গে তিন বছর কাটিয়ে ২০১৯ সালে সৌদি আরবের কোচ হন রেনার্ড। তাঁর দখলে রয়েছে এক অনন্য নজির। দুটি দেশের কোচ হিসেবে তাদের জিতিয়েছেন আফ্রিকান কাপ অব নেশনস। ২০১২ সালে জাম্বিয়ার পর ২০১৫ সালে আইভরি কোস্টকে। অ্যাঙ্গোলারও কোচ ছিলেন। আফ্রিকায় তাঁর কোচিংয়ের সাফল্য দেখে রেনার্ডকে কোচ করে সৌদি আরব। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের ব্যর্থতার পর। একঝাঁক তরুণ ফুটবলারকে নিয়ে তিনি স্বপ্ন দেখাচ্ছেন সৌদি আরবকে।
|
সাদা জামাতে নীল-সাদা ঘায়েল
খেলা চলাকালীন সাদা জমা পরে থাকেন রেনার্ড। এর পিছনেও রয়েছে কারণ। তিনি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, ২০১০ সালে আফ্রিকা কাপ অব নেশনসে জাম্বিয়ার খেলা চলছিল ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচে হাল্কা নীল রংয়ের শার্ট পরেছিলাম। ওই ম্যাচটি ২-৩ গোলে হেরে গিয়েছিলাম। পরের ম্যাচে আমি সাদা জামা পরি এবং ১ নম্বর দল হিসেবে ক্যামেরুনের উপরে থেকে গ্রুপ পর্ব শেষ করি। তারপর থেকেই আমি সাদা জামা পরি। অবশ্য সাদা রংয়ের জামা পরে হেরেওছি। কিন্তু জিতেছি বেশিরভাগই। সাদা জামা আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই হলে ভালো লাগে। ডিসেম্বরে যখন ইংল্যান্ডে কোচিং করাতাম তখন সাদা জামা পরা সম্ভব ছিল না। হয়তো সে কারণেই ইংল্যান্ডে কোচ হিসেবে সাফল্য পাইনি। যে নীল ছেড়ে সাদা জামা পরেছিলেন, মেসির নীল-সাদা বাহিনীর স্বপ্নে ধাক্কা দিলেন সেই সাদা জামা পরে দুরন্ত স্ট্র্যাটেজি সাজিয়েই।