মারাদোনার ইচ্ছাপূরণ, GOAT মেসি-ম্যাজিকেই আর্জেন্তিনার বিশ্বকাপ, কোপায় কেঁদেছিলেন সতীর্থ নেইমার, এবার এমবাপে
দিয়েগো মারাদোনার নেতৃত্বে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্তিনা। তারপর ফের কাপ জিততে অপেক্ষা করতে হলো ৩৬ বছর। লিওনেল মেসি বিশ্বকাপের আগেই ঘোষণা করেছিলেন এটাই তাঁর বিশ্বকাপ। গত বছর কোপা আমেরিকা জেতার পর থেকেই বিশ্বকাপ জয়ের প্রত্যাশা বাড়তে শুরু করেছিল। অবশেষে মধুরেণ সমাপয়েৎ!
|
রুদ্ধশ্বাস ফাইনাল
প্রথমার্ধে লিওনেল মেসি ও আনহেল দি মারিয়ার গোলে এগিয়ে ছিল আর্জেন্তিনা। দ্বিতীয়ার্ধে এমবাপের ৯৭ সেকেন্ডের ব্যবধানে করা জোড়া গোলে ম্যাচ ২-২ করে ফ্রান্স। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধ কোনও দল আর গোল করতে পারেনি। ম্যাচের ১০৮ মিনিটে দুরন্ত গোল করে আর্জেন্তিনাকে এগিয়ে দেন মেসি। যদিও পেনাল্টি থেকে গোল করে ফের সমতা ফেরান এমবাপে। টাইব্রেকারে মেসি ও এমবাপে দুজনেই গোল করেন। যদিও শেষ হাসি হাসল আর্জেন্তিনাই।
|
মেসির স্বপ্নপূরণ
বিশ্বকাপ থেকে এমন বিদায়েরই তো অপেক্ষায় ছিলেন খোদ লিওনেল মেসি। মারাদোনার সঙ্গে তুলনা, তুলনা রোনাল্ডো-নেইমারদের সঙ্গেও। যদিও সাতবারের ব্যালন ডি'অর জয়ী লিও মেসি কয়েক যোজন এগিয়ে গেলেন রোনাল্ডো, নেইমারের চেয়ে। ক্লাব ফুটবলে এত সাফল্য, দেশের হয়ে নেই। এই কটাক্ষেরও যেন মোক্ষম জবাব মেসি দিলেন কাতার বিশ্বকাপেই। নেইমার অনেক আগেই ছিটকে গিয়েছেন। এমবাপের জোড়া গোলে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যেতে পেরেছিল ফ্রান্স। কিন্তু শেষরক্ষা হল না।
মারাদোনার আশীর্বাদ, বিশ্বাস আর্জেন্তিনার
সৌদি আরবের কাছে প্রথম ম্যাচেই পরাজয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছিল, মেসির কাছে কি এবারও অধরা থাকবে বিশ্বকাপ? যদিও এরপরই দুরন্ত কামব্যাক। আর্জেন্তিনা শিবির ওই ধাক্কাটাকে নিয়েছিল ইতিবাচকভাবেই। লিওনেল মেসি ২০০৬ সাল থেকে বিশ্বকাপ খেলেছেন। ২০১৪ সালেও দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনালে। কিন্তু সেই আর্জেন্তিনা দলের সঙ্গে এই দলের তফাত লক্ষ্য করা গিয়েছে বারবার। আগে মেসিই যেন ছিলেন সব। তাঁকে সাপোর্ট করার মতো নির্ভরযোগ্য কেউই সেভাবে ছিলেন না। তাই প্রত্যাশাপূরণে বারবার থমকে যেতে হয়েছে দিয়েগো মারাদোনার দেশকে। তবে এবারের বিশ্বকাপে যেভাবে মেসি নিজেকে মেলে ধরলেন, সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন দলকে একসূত্রে গেঁথে তাতে আজ বেঁচে থাকলে সবচেয়ে সুখী ও খুশি হতেন দিয়েগো মারাদোনাই।
|
মেসি এবং সচিন
এবার লিওনেল মেসির পরিস্থিতির সঙ্গে অনেকেই তুলনা টেনেছেন সচিন তেন্ডুলকরের। দুজনের জার্সির নম্বর ১০। ভারতের কিংবদন্তি ক্রিকেটার অধরা বিশ্বকাপ ছুঁয়ে দেখতে চেয়েছিলেন নিজের শেষ বিশ্বকাপে। সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছিলেন সতীর্থরা। বিশ্বকাপ জয়ের পর সচিনকে কাঁধে নিয়ে হয়েছিল ভিকট্রি সেলিব্রেশন। ১৯৮৩ সালের পর ২০১১ সালে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। ঠিক সেভাবেই মেসির হাতে এবারের বিশ্বকাপ তুলে দিতে মরিয়া ছিলেন তাঁর সতীর্থরা। ফাইনালের শেষে আর্জেন্তিনাকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানান সচিন।
— FIFA World Cup (@FIFAWorldCup) December 18, 2022 |
মনে থাকবে দি মারিয়া, মার্তিনেজদের
সব সময় বড় সাফল্য পেতে ভরসা করতে হয় কোর গ্রুপের উপর। আর্জেন্তিনার এই দলে তারুণ্যের সঙ্গে অভিজ্ঞতার দারুণ মিশেল লক্ষ্য করা গিয়েছে। লিওনেল মেসি, আনহেল দি মারিয়ারা ফুল ফোটালেন। পরপর তিনটি বিশ্বকাপে গোল করার নজির গড়লেন দি মারিয়া। কোপা আমেরিকায় আর্জেন্তিনাকে চ্যাম্পিয়ন করেছিল তাঁর গোল। এবার বিশ্বকাপ জয়েও অবদান রাখলেন। যিনি কিনা চোটের কারণে নক আউট পর্বে ফাইনালে ওঠা অবধি মিনিট আটেক মাঠে ছিলেন, তাও ডাচদের বিরুদ্ধে। আজ দলে ফিরতেই বদলে গেল আর্জেন্তিনার আক্রমণ। ৩৬ বছরের খরা মিটিয়ে তৃতীয়বার আর্জেন্তিনাকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করে আলভারেজদের হাতেই উত্তরাধিকারের ব্যাটন তুলে দিয়ে যাচ্ছেন মেসি, দি মারিয়ার মতো সিনিয়ররা। আর্জেন্তিনার ফুটবল ইতিহাসে নাম তুলে নিলেন টাইব্রেকারের নায়ক গোলরক্ষক মার্তিনেজও। এই নিয়ে বিশ্বকাপে ষষ্ঠবার পেনাল্টি শ্যুটআউটে জিতল আর্জেন্তিনা।