জয় দিয়ে অভিযান শুরু না করেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নজির ফিফা বিশ্বকাপে! মেসি হাল ছাড়তে নারাজ
লিওনেল মেসির এটাই শেষ বিশ্বকাপ। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোরও। আরও অনেক তারকাই কাতারে কেরিয়ারের শেষ ফিফা বিশ্বকাপ খেলছেন। আর্জেন্তিনা কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাজিলকে হারিয়ে। এরপরই জোরালো হয় লিওনেল মেসিদের বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম দাবিদার হয়ে ওঠার বিষয়টি। মেসি নিজেও বিশ্বকাপ জিততে মরিয়া। কিন্তু সব পরিকল্পনা ওলটপালট সৌদি আরবের কাছে অপ্রত্যাশিত পরাজয়ে।
পথ কঠিন
আর্জেন্তিনার গ্রুপে রয়েছে মেক্সিকো, রয়েছে লেওয়ানডস্কির পোল্যান্ডও। ফলে আর্জেন্তিনার নক আউট পর্বে যাওয়ার আশা শেষ না হলেও পথটা কঠিন। ইতিমধ্যেই আর্জেন্তিনার ভক্তরা বলতে শুরু করেছেন, লিওনেল মেসির পক্ষে দিয়েগো মারাদোনা হয়ে ওঠা সম্ভবই নয়। এদিন সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ম্যাচে মেসির বডি ল্যাঙ্গুয়েজে হতাশার ছবি ধরা পড়েছে। অথচ তেমনটা হওয়ার ছিল না। পেনাল্টি থেকে গোল করে আর্জেন্তিনাকে এগিয়ে দিয়েছিলেন লিও। কিন্তু ৫ মিনিটে জোড়া গোল হজম করায় সব প্ল্যান গেল ভেস্তে!
অবাক নয় আর্জেন্তিনা
একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেসি বলেছেন, ৫ মিনিটের ভুলেই আমরা ১-২ ব্যবধানে পিছিয়ে গেলাম। এরপর আমাদের কাজটা কঠিন হয়ে যায়। এই দুটি গোল হজম করা যে দলের সঙ্ঘবদ্ধভাবকে নষ্ট করে দেয় এবং এলোমেলো পাস বাড়ানোর সংখ্যা বেড়ে যায় সেটাই বোঝাতে চেয়েছেন মেসি। সৌদি আরবের রণকৌশল বল পেতেও নাজেহাল হতে হয় এই ম্যাচ খেলতে নামার আগে ৩৬টি ম্যাচে অপরাজেয় থাকা আর্জেন্তিনাকে। চলতি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলির ফিফা ক্রমতালিকা অনুযায়ী নীচের থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সৌদি আরব। তাদের কাছে হারের পর মেসি জানান, সৌদি আরব যে এমন খেলতে পারে সে ব্যাপারটি তাঁদের জানা ছিল। ফলে ম্যাচের ফলাফল অবাক করেনি আর্জেন্তিনাকে।
মেসি প্রত্যয়ী
মেক্সিকো ও পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে আর্জেন্তিনার ম্যাচ বাকি রয়েছে। মেসি বলেন, অবশ্যই আমাদের জিততে হবে। কোথায় ভুল হয়েছে তা চিহ্নিত করে দ্রুত শুধরে নিতে হবে। জোর দিতে হবে প্রাথমিক বিষয়গুলিতে। এই হার আমাদের আহত করেছে ঠিকই, তিক্ত হলেও তা মেনে নিচ্ছি। একটা কথা নিশ্চিতভাবেই বলতে চাই, সমর্থকরা ভরসা রাখতে পারেন এই দল আপনাদের হতাশ করবে না। আমরা পরবর্তী দুটি ম্যাচেই জিতব। এমন পরিস্থিতিতে ম্যাচ আগেও খেলেছি, ভালো পারফর্ম করবে আমাদের দল। আর্জেন্তিনা কতটা শক্তিশালী তা দলগত সংহতি আরও জোরদার করে দেখিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর এলএম টেন।
তিন নজির মোটিভেশন
আর্জেন্তিনা এদিন হেরে গেলেও বিশ্বকাপের স্মৃতিতে ডুব দিয়ে অনেকেই এখনও মেসিদের ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী। এমনকী কাপ জয়ের স্বপ্নও চুরমার হলো, এটা মানতে নারাজ। বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ না জিতেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নজির রয়েছে তিনবার। ১৯৬৬ সালে স্যর ববি চার্লটনের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ জিতেছিল পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে। বিশ্বের তৃতীয় দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের বছরে প্রথম ম্যাচে উরুগুয়ের সঙ্গে ড্র করেছিল ইংল্যান্ড। ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপে ইতালি প্রথম ম্যাচে গোলশূন্য ড্র করেছিল পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে। গ্রুপপর্বে একটিও ম্যাচে না জিতে ক্যামেরুনের চেয়ে বেশি গোল করার সুবাদে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে ইতালি। সমালোচিতও হয়েছিল আজুরিদের পারফরম্যান্স। সেই ইতালিই সেবার ৩-১ গোলে পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ২০১০ সালের বিশ্বকাপে স্পেন প্রথম ম্যাচে ০-১ গোলে পরাস্ত হয়েছিল সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে। যদিও নেদারল্যান্ডসকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় স্প্যানিশ আর্মাডা। প্রথম ম্যাচে হেরে একমাত্র দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ জেতার নজির স্পেনের রয়েছে। মেসিরা কি সেই নজির স্পর্শ করতে পারবেন?