ডার্ক হর্স নয়, বিশ্বকাপ জেতার অন্যতম দাবিদার হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করল বেলজিয়াম
ডার্ক হর্স নয়, নিজেদের বিশ্বকাপ জেতার অন্যতম দাবিদার হিসেবে প্রমাণ করল বেলজিয়াম। ৫-২ গোলের বিশাল ব্যবধানে তিউনিশিয়াকে হারিয়ে নকআউট পর্বে যাওয়া নিশ্চিত করে ফেলল তারা। তবে চোট আঘাতে জর্জরিত তিউনিশিয়াও সীমিত সাধ্যে ভাল লড়াই করেছে।

প্রথম ম্যাচে নবাগত পানামাকে ৩-০, পরের ম্যাচে তিউনিশিয়াকে ৫-২! দুরন্ত গতিতে ছুটছে বেলজিয়ান ডার্ক হর্স। না এই ম্যাচের পর আর বোধহয় ডার্ক হর্স নয়, তাদের বিশ্বকাপ জেতার অন্যতম দাবিদারই বলে দেওয়া যায়। অনেকে হয়তো বলবেন, হারিয়েছে তো পানামা আর তিউনিশিয়াকে। তবে এই বিশ্বকাপে এইসব পচা শামুকেই তো পা কাটতে দেখা যাচ্ছে বড় দলগুলিকে।
সেখানে হ্য়াজার্ড-লুকাকুদের দেখে মনে হচ্ছে তেল দেওয়া মেশিন। আগের ম্যাচে পানামা রক্ষণ জমাট করে খেলেছিল। প্রথম অর্ধে গোলই পায়নি রেড ডেভিলস-রা। শেষ অবধি অবশ্য ৩-০ গোলে জেতে তারা। এই ম্যাচে তিউনিশিয়া কিন্তু আক্রমণাত্মক ফুটবলই খেলল। তাতে একটু জায়গা পেতেই তিউনিশিয়াকে ঝলসে দিল বেলজিয়ানরা।
আগের ম্যাচে জোড়া গোল করা লুকাকু ফের এউ ম্যাচে দুই দোল করলেন। জোড়া গোল করলেন আগের ম্যাচে বোতলবন্দী হয়ে থাকা এডেন হ্যাজার্ডও। এদিনের গোলবহুল ম্যাচে গোলের খাতা খুলেছিলেন বেলজিয়ান অধিনায়কই। তখন ম্য়াচের বয়স মাত্র ৬ মিনিট। পেনাল্টি থেকে ঠান্ডা মাথায় গোল করে যান হ্যাজার্ড। এরপর আবার ১৬ মিনিটে মার্টিন্সের থ্রু ধরে কোনাকুনি শটে বল জালে জড়ান লুকাকু।
কিন্তু ইংল্যান্ড ম্যাচের মতোই এই খেলাতেও ফিরেছিল তিউনিশিয়া। মাত্র ২ মিনিট যেতে না যেতেই বক্সের বাইরে থেকে খাজরির তোলা ফ্রিকিকে মাথা ছুঁইয়ে গোল করে যান তিউনিশিয় স্ট্রাইকার ডিলন ব্রন। কিন্তু ভাগ্য এই ম্যাচে তিউনিশিয়ার সঙ্গে ছিল না। গোলের একটু পরেই চোট পেয়ে বেরিয়ে যান ব্রন। এরপর প্রথমার্ধের শেষ দিকে চোট পান প্রধান ডিফেন্ডার বেন ইওসেফও। এরপরও মাঝে মাঝেই বেলজিয়ান বক্সে হানা দিলেও তিউনিশিয়ার সেসব আক্রমণ কার্যকর হয়নি। বরং সংযুক্ত সময়ে মুনিয়ের-এর থ্রু বল ধরে তাঁর দ্বিতীয় গোল করে যান লুকাকু।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আবার শুরু হয় বেলজিয়ান আক্রমণ। পেছন থেকে আসা একটি লহ বল বুক দিয়ে নামিয়ে নিয়ে দুই সেন্টার হাফকে কাটিয়ে গেলকিপারকেও পরাস্ত করে ফাঁকা গোলে বল ঠেলে গোল করে যান। এরপরও আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে খেলা সচল ছিল। তবে ততক্ষণে বেলজিয়ামের দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়া সুনিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। তাই লুকাকু ও হ্যাজার্ডকে তুলে নামানো হয় ফেলাইনি ও বাতশুয়াইকে। শেষের দিকে বেশ কয়েকটি সুযোগ পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন বাতশুয়াই কখনও তিউনিশিয় গোলকিপার মুস্তাফা, তিউনিশিয় ডিফেন্ডারদের কাছে, কখনওনিজের ভুলে আটকে যাচ্ছিলেন তিনি।
অবশেষে ৯০ মিনিটে শিকে ছেঁড়ে তার। তিয়েলেম্যান্স-এর অসাধারণ পাস থেকে দুরিদান্ত ফিনিশে গোল করেন তিনি। ম্য়াচের শেষ গোল আসে সংযুক্ত সময়ে। তিউনিশিয়ার হয়ে ব্যবধান কমিয়ে যান খাজরি। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। ফুটবলে গোলই সব না হলেও গোল দেখতেই দর্শকরা উন্মুখ থাকেন। এই ম্যাচে অন্তত তার কোনও অভাব ছিল না।
পানামার বিরুদ্ধে ম্যাচে বেলজিয়াম দেখিয়েছিল কিভাবে ডিপ ডিফেন্স-এর বিরুদ্ধে গোল তুলে আনতে হয়। এই ম্যাচে দেখাল আক্রমণাত্মক দলের বিরুদ্ধেও তারা কম যায় না। থ্রু বল, সেট পিস, ভলি, গ্রাউন্ড শট - সব রকম পরিস্থিতি থেকে বেলজিয়াম গোল করার ক্ষমতা দেখিয়েছে। তাই আর ডার্ক হর্স নয়, তাদের কিন্তু বিশ্বকাপ জেতার অন্যতম দাবিদার হিসেবেই দেখতে হবে।