বিশ্বকাপে ফুটবলপ্রেমীদের মদের চাহিদা পূরণে অভিনব পরিকল্পনা ফিফার, স্পনসর জটিলতাও মিটবে
নভেম্বরে কাতারে বসছে ফুটবল বিশ্বকাপের আসর। ৯২ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও মুসলিম অধ্যুষিত দেশে হবে ফিফা বিশ্বকাপ। কাতারে মদ বিক্রি হয়। তবে প্রকাশ্যে মদ্যপানে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ফিফা ও বিশ্বকাপের আয়োজকদের পা ফেলতে হচ্ছে অনেক ভেবেচিন্তে। মাথায় রাখতে হচ্ছে ফুটবলপ্রেমীদের সুরাপ্রেম থেকে স্পনসরের জটিলতাও।
কাতার বিশ্বকাপে সুরাপান
কাতারে বিভিন্ন ক্রীড়াক্ষেত্রের বড় বড় ইভেন্ট হয়ে থাকে। তার মধ্যে অন্যতম ছিল ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ। তখনও বিশেষ অ্যালকোহল পলিসি তৈরি করা হয়েছিল। ওই টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিল তৎকালীন ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল, সাউথ আমেরিকান চ্যাম্পিয়ন ফ্ল্যামেঙ্গো, মেক্সিকোর ক্লাব মনটেরে। ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপের সময় সুরাপ্রেমীদের জন্য ড্রিঙ্কিং জোন তৈরি করা হয়েছিল দোহার কাছেই একটি গল্ফ ক্লাবে। সেখানে মাত্র ৬ ডলার খরচ করতেই মিলেছিল বিয়ার, যার দাম শহরের নামী হোটেলগুলির তুলনায় অনেকটাই কম ছিল। এবারও সেই একই জায়গাতেই ড্রিঙ্কিং জোন তৈরির ভাবনা রয়েছে। নভেম্বরের ২১ তারিখ থেকে শুরু হবে বিশ্বকাপ, চলবে ১৮ ডিসেম্বর অবধি। ফিফা ও আয়োজকদের আশা, ১২ লক্ষ দর্শক কাতারে যাবেন ৩২ দলেরবিশ্বকাপ দেখতে।
বিশেষ পলিসি তৈরি হচ্ছে
কাতারে যেহেতু প্রকাশ্যে মদ্যপান নিষিদ্ধ ও শাস্তির বিধান রয়েছে, ফলে যাতে প্রকাশ্যে কেউ মদ্যপান না করেন তা সুনিশ্চিত করতে হবে। গত বছরই প্রিভিয়াম বেভারেজেস-সহ হসপিটালিটি প্যাকেজের জন্য ফুটবলপ্রেমীদের চরম আগ্রহ দেখা গিয়েছিল। কিন্তু অ্যালকোহল বা বিয়ার পলিসি এখনও চূড়ান্ত করা যায়নি। ২০১০ সালে কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল কীভাবে ফুটবলপ্রেমীদের সুরাপানের চাহিদা মেটানো যাবে।
স্পনসর জটিলতার বিষয়ও ভাবাচ্ছে
কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার পরের বছরই ২০২২ পর্যন্ত ফিফা বুডউইজার সংস্থার সঙ্গে চুক্তি বাড়ানোর পথে হাঁটে। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ থেকেই মদ প্রস্তুতকারী এই সংস্থা ফিফার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। ব্রাজিলের স্টেডিয়ামে মদ বিক্রি নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে ফিফার চাপে ব্রাজিলে স্পেশ্যাল বিল পাস হয়েছিল, যাতে বিশ্বকাপে মদ বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। কাতার সরকার প্রথম থেকে অনড় অবস্থানে থাকলেও পরে ফিফাকে বলে সর্বজনগ্রাহ্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে। ফিফার সঙ্গে যে মদ প্রস্তুতকারী সংস্থার চুক্তি রয়েছে তাদেরও যাতে বিশ্বকাপের ব্র্যান্ডিংয়ে অসুবিধা না হয় সেটাও মাথায় রাখা হচ্ছে। কাতারে মদ্যপান সংক্রান্ত নিয়মকানুন যাতে ওই সংস্থাকে সমস্যায় না ফেলে বা ফিফা স্পনসর জটিলতায় না পড়ে তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
অভিনব পরিকল্পনা
গতকাল ফিফার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ওই মদ প্রস্তুতকারী সংস্থা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ফিফা বিশ্বকাপে দর্শকাসনে বসে ফুটবলপ্রেমীরা বুডউইজার জিরো ও বুডউইজার পান করতে পারবেন। এতেই মনে করা হচ্ছে, দর্শকাসনে নন-অ্যালকোহলিক পানীয় পান করতে হবে ফুটবলপ্রেমীদের। তবে স্টেডিয়ামে ঢোকার আগে বা পরে মদ কিনতে পারবেন সকলেই, কিন্তু মাঠে বসে অ্যালকোহল পান করা যাবে না। ড্রিঙ্কিং কন্টেনারের ব্র্যান্ডিং কীভাবে হবে তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা চালাচ্ছে ফিফা। টিভি সম্প্রচারের সময় সেই কন্টেনারগুলি হাতে দেখা যাবে দর্শকদের, সেইমতো নিয়মকানুন মেনেই যাবতীয় পরিকল্পনা করা হচ্ছে।