ট্রান্সফার ব্যান থেকে চুক্তি জটে জেরবার ইস্টবেঙ্গল, নবগঠিত কমিটিও তাকিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতার দিকেই
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্বাস দিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল (এসসি ইস্টবেঙ্গল) আইএসএল খেলবে। লাল হলুদ কর্তাদের কিছুটা ছেড়ে খেলার পরামর্শও দিয়েছেন। কিন্তু দুটি শর্তেই আটকে চুক্তি জট। আইএসএল দূর অস্ত, এখনও দল গঠন না হওয়ায় চলতি মাসে শুরু হতে চলা কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে খেলাই অনিশ্চয়তায় ভরা। না নামলে আবার কলকাতা লিগেও অবনমনের খাঁড়া। সমর্থকদের রোষে পড়া লাল হলুদের কর্মসমিতি এবার যাবতীয় জট কাটাতে মাঠে নামাল ১১ প্রাক্তনকে। কিন্তু সেই কমিটিরও ধারণা যে জায়গায় গোটা বিষয় আটকে তাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ ছাড়া কিছু হওয়াই সম্ভব নয়।
চুক্তি বিতর্ক
গত বছরও শেষ মুহূর্তে মাঠে নেমে ইস্টবেঙ্গলের আইএসএল খেলা নিশ্চিত করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জোগাড় করে দিয়েছিলেন স্পনসর। কিন্তু মরশুম শেষের আগে থেকেই সেই ইনভেস্টরের সঙ্গে সংঘাত চলছে লাল হলুদ কর্তাদের। লগ্নিকারীর পাঠানো চুক্তিপত্রে ইস্টবেঙ্গল এখনও সই না করায় অনিশ্চিত ক্লাবের ফুটবল ভবিষ্যত। উদ্বিগ্ন সমর্থকদের সিংহভাগ অংশ দেবব্রত (নীতু) সরকার-সহ কর্মসমিতির কিছু সদস্যের অপসারণের দাবি তুলেছেন। প্রাক্তন ক্লাবকর্তা তথা আইনজীবী পার্থ সেনগুপ্তকে জটিলতা কাটাতে শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকে উজ্জ্বল হচ্ছিল চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা। জানা যায়, শ্রী সিমেন্টও কয়েকটি ক্ষেত্রে নমনীয়। মুখ্যমন্ত্রী সে কথা বলেনও। এরপরই তিনি বলেছিলেন, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্তাদের একটু ছেড়ে খেলতে। পাঁচ বছরের গ্যারান্টি-সহ দুটি বিশেষ ক্ষেত্র নিয়েই এখন ফের জটিলতা। পার্থবাবু বলেছিলেন, প্রথম দিকে তাঁকে যে শর্তগুলি নিয়ে সমস্যা মেটানোর কথা বলা হয়েছিল পরে ক্লাব তাতে নতুন শর্ত যোগ করে। এতে আগের ক্ষেত্রে শ্রী সিমেন্ট যে নমনীয়তা দেখিয়েছে তাতেও জটিলতার আশঙ্কা রয়েছে।
ভরসা মুখ্যমন্ত্রী
এরই মধ্যে আজ কর্মসমিতির তরফে ১১ জন প্রাক্তন ফুটবলারকে রেখে একটি কমিটি গড়া হয়েছে। যদিও চুক্তি সংক্রান্ত বিষয়ে এই কমিটির অনেকেই সবটা জানেন না বলে সূত্রের খবর। কেউ কেউ বলছেন, এই উদ্যোগ ক্লাবের কর্তারা আগে নিলে জটিলতা হয়তো এড়ানো যেত, আমরাও সবটা বুঝেশুনে নামতে পারতাম। সবচেয়ে বড় কথা, ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ এবং সরব হওয়া মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যকেও এই কমিটিতে রাখা হয়েছে। বাকি সদস্যরা হলেন বিকাশ পাঁজি, কৃষ্ণেন্দু রায়, প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, মিহির বোস, সুমিত মুখোপাধ্যায়, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়, অলোক মুখোপাধ্যায়, অতনু ভট্টাচার্য, মেহতাব হোসেন ও রহিম নবি। কমিটির সদস্যরা চাইছেন আগে শ্রী সিমেন্টের কর্ণধার হরিমোহন বাঙ্গুর বা তাঁর কোনও প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলতে। তারপর তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করবেন। জানা গিয়েছে, কমিটির সদস্যরাও মনে করছেন যে দুটি শর্তের জন্য চুক্তি জট আটকে তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ ছাড়া কারও পক্ষে মেটানো সম্ভব নয়।
প্রতিষ্ঠাতার পরিবারের আর্জি
এরই মধ্যে সামগ্রিক বিষয়টি অন্য মাত্রা পেয়েছে ইস্টবেঙ্গলের প্রতিষ্ঠাতা রাজা সুরেশ চৌধুরীর নাতির একটি আবেদনপত্রে। যাতে তিনি লিখেছেন, চুক্তিপত্র দেখে তাঁর মনে হয়েছে এটা সেল অব ডিড। প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য হিসেবে অমরেশ চৌধুরী বিবৃতিতে জানিয়েছেন, যে চুক্তিপত্র রয়েছে তাতে কলকাতা ময়দানের তিন শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবের পক্ষেই সই করা সম্ভব নয়। লগ্নিকারী সংস্থা ক্লাবকে পুরো কব্জা করতে চাইছে বলেও অভিযোগ। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁর আবেদন, নিঃস্বার্থভাবে ক্লাবের প্রতিষ্ঠা যাঁরা করেছিলেন তাঁদের মর্যাদায় আঘাত লাগে এমন কোনও পদক্ষেপ থেকে তিনি যেন বিরত থাকেন। সভ্য-সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি লেখেন, এই পরিস্থিতিতে আমরা আহত ও রক্তাক্ত হচ্ছি। চলুন ১০০ বছর আগের ইস্টবেঙ্গলে ফিরে গিয়ে মানুষের আশীর্বাদ নিয়ে নতুনভাবে পথ চলা শুরু হোক।
ট্রান্সফার ব্যান
চুক্তি নিয়ে জটিলতার মধ্যেই আরও একবার এআইএফএফের ট্রান্সফার ব্যানের কবলে পড়েছে লাল হলুদ। ২০১৯-২০ মরশুমে ইস্টবেঙ্গলের তিন ফুটবলার রক্ষিত ডাগার, আভাস থাপা ও পিন্টু মাহাতা ক্লাবের সঙ্গে চুক্তিমতো টাকা পাননি। যার সম্মিলিত পরিমাণ প্রায় ৯ লক্ষ টাকা। পিন্টুর বকেয়াই সবচেয়ে বেশি। ব্যান থেকে বাঁচতে হলে ৪৫ দিনের মধ্যে এই টাকা মেটাতে হবে ইস্টবেঙ্গলকে। শ্রী সিমেন্ট ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগে যেহেতু এই বকেয়ার সমস্যা, তাই লাল হলুদ কর্তাদেরই ব্যবস্থা করতে হবে প্রয়োজনীয় অর্থের। তবে জানা গিয়েছে শুধু তিনজনই নয়। কোলাডো, কার্লোসের মতো বিদেশি-সহ জনা বারো ফুটবলার ও সাপোর্ট স্টাফ এখনও তাঁদের বকেয়া পাননি ইস্টবেঙ্গলের কাছ থেকে। জুনে জনি অ্যাকোস্টার বেতন না মেটানোয় ট্রান্সফার ব্যানের কবলে পড়েছিল লাল হলুদ। সে যাত্রায় অর্থ মিটিয়ে ব্যান থেকে রেহাই পেয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। সবমিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া ইস্টবেঙ্গলের যে পরিত্রাণের পথ নেই ফের তা পরিষ্কার হল।