কোর কমিটির বৈঠকে নেই মনোরঞ্জন, বাঙ্গুরের আচরণে প্রাক্তনরা অবাক হলেও খুলছে ইস্টবেঙ্গলের চুক্তি জট
খুব বড় অঘটন না ঘটলে বুধবার বা চলতি সপ্তাহেই খুলে যেতে পারে লাল হলুদের চুক্তি জট। যদিও লগ্নিকারী শ্রী সিমেন্টের কর্ণধার হরিমোহন বাঙ্গুরের আচরণে কিছুটা হলেও হতবাক ইস্টবেঙ্গল কর্মসমিতির দ্বারা ১১ প্রাক্তনকে নিয়ে গঠিত কোর কমিটি।
লাল হলুদের জটিলতা
ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে লগ্নিকারী শ্রী সিমেন্টের মধ্যে চুক্তি নিয়ে সংঘাত চলছে বেশ কয়েক মাস ধরেই। অনিশ্চয়তায় ক্লাবের ভবিষ্যত। টার্মশিট ও ফাইনাল এগ্রিমেন্টের বেশ কিছু শর্তে ফারাক আছে বলে অভিযোগ ইস্টবেঙ্গলের কর্মসমিতির। সোজা কথায়, ইস্টবেঙ্গলের শাসক-গোষ্ঠীর দাবি এগ্রিমেন্টে এমন কিছু কথা উল্লেখ রয়েছে যা ক্লাব বিক্রি হওয়ারই সামিল। সে কারণেই শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবের কর্তারা চুক্তি সই করতে রাজি হচ্ছেন না। ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন সচিব তথা আইনজীবী পার্থ সেনগুপ্তকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, চুক্তি জটিলতা কাটাতে দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলতে। পার্থবাবুর দাবি, কয়েকটি ক্ষেত্রে নমনীয় হয় লগ্নিকারী। কিন্তু পরে ফের কিছু শর্ত নিয়ে আপত্তি তুলছেন লাল হলুদ কর্তারা, যেগুলি নিয়ে ফের আলোচনা করতে গেলে শ্রী সিমেন্ট আগে যেগুলির ক্ষেত্রে নমনীয় হয়েছে সেই সিদ্ধান্ত থেকেও পিছু হঠতে পারে। অবশেষে চুক্তি জট মেটানোর জন্য লাল হলুদ কর্তারা আস্থা রেখেছিলেন প্রথিতযশা প্রাক্তন ফুটবলারদের নিয়ে গঠিত কোর কমিটির উপর।
অনড় বাঙ্গুর
ইস্টবেঙ্গল সূত্রে জানা গিয়েছিল, ক্লাবের ৫ বছরের গ্যারান্টি নেওয়া-সহ দুটি শর্তেই আটকে আছে চুক্তি সই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, লাল হলুদ কর্তাদেরও কিছু ছেড়ে খেলতে! কোর কমিটি চেয়েছিল শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে কথা বলে মুখ্যমন্ত্রীর সময় নিয়ে তাঁর সঙ্গেও কথা বলতে। কারণ, ক্লাবকর্তারাও যেমন চাননি ইস্টবেঙ্গল না খেলুক, তেমনই সকলেই চান ইস্টবেঙ্গলের খেলা যেন বন্ধ না হয়। কিন্তু হরিমোহন বাঙ্গুর জানিয়ে দেন, চুক্তি সই না হওয়া অবধি তিনি প্রাক্তন ফুটবলারদের সঙ্গে দেখাই করবেন না। তাছাড়া চুক্তি সই করতে ইস্টবেঙ্গলকে জোর করা হয়নি। ৫০ কোটি টাকা ফেরত দিলে লাল হলুদকে স্পোর্টিং রাইটসও ফিরিয়ে দেওয়া হবে। চুক্তি সই যতক্ষণ না হচ্ছে ততক্ষণ প্রাক্তন ফুটবলারদের বিপরীত শিবিরের বলেও কটাক্ষ করেন বাঙ্গুর।
ভাইচুং-মনোরঞ্জনের এক সুর
এরই মধ্যে কোর কমিটির অন্যতম সদস্য মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক তথা ইস্টবেঙ্গল অধিনায়ক ভাইচুং ভুটিয়া লাল হলুদ কর্তাদের উদ্দেশে বার্তা দিয়ে বলেন, অবিলম্বে চুক্তি সই করতে হবে। ভাইচুং ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের আচরণকে অপেশাদার বলেও উল্লেখ করেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, এখন যেসব কথা বলা হচ্ছে সেগুলো আগে কেন বলা হয়নি। লগ্নিকারী চলে গেলে সেটা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও অসম্মান, কারণ তিনি ইনভেস্টর জোগাড় করে দেওয়ায় গত বছর ইস্টবেঙ্গল আইএসএল খেলতে পারে। মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, আগে চুক্তি সই হোক, খেলা হোক। তারপর শর্ত বাকি আলোচনা চালানো যাবে।
কোর কমিটির বৈঠক
মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য যেদিন এই মন্তব্য করেন তার পরের দিন অর্থাৎ আজই ছিল ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তনদের নিয়ে গঠিত কোর কমিটির বৈঠক। ক্লাব তাঁবুতে এদিনের বৈঠকে সকলেই উপস্থিত হলেও আসেননি মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। এরপরই কমিটির বাকিরা জানিয়ে দেন, আমরাও যেমন চাইছি, তেমনই ইস্টবেঙ্গল কর্তারাও চাইছেন ক্লাব খেলুক। ফলে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য যখন কোর কমিটির কাউকে কিছু না জানিয়ে নিজে গতকাল ওই কথা বলেছেন তাহলে তিনি চুক্তির শর্ত-সহ সব বিষয়েই ওয়াকিবহাল। ফলে তিনি যখন গোটাটাই নিজের কাঁধে নিয়ে এগোতে চাইছেন আমরাও তাঁর এই ইচ্ছায় বাধাদান করব না। বাকিটা ক্লাব বুঝবে। এরপর যাবতীয় কিছু মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য সামলাতে পারবেন বুঝেই নিশ্চয় তিনি অমন মন্তব্য করেছেন। তাই ভবিষ্যতে যাবতীয় আলোচনার দায়িত্ব তাঁকেই নিতে হবে।
সম্মান না অসম্মান?
ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের দাবি, এখনও কয়েকটা বিষয়ে নমনীয় হয়নি শ্রী সিমেন্ট। তাছাড়া প্রাক্তনরা হরিমোহন বাঙ্গুরের সঙ্গে আলোচনা চাইলেও তিনি যেভাবে উপেক্ষা করেছেন সেটাও মোটেই ভালো দৃষ্টান্ত নয়। ক্লাবের সকলেই চান ইস্টবেঙ্গলের খেলা যেন বন্ধ না হয়। ফলে শ্রী সিমেন্টের কাছে সেই মর্মেও চিঠিও পাঠানো হতে পারে ক্লাবের তরফে। এরপরই দ্রুত হয়ে যেতে পারে সই। তাছাড়া ৩১ অগাস্ট ফিফার ট্রান্সফার উইন্ডো বন্ধ হয়ে যাবে। চুক্তি নিয়ে গড়িমসি হলে শেষে দলই গঠন করা সম্ভব হবে না। সেটা ক্লাবের কেউ চাইছেনও না। কোর কমিটির অন্যতম সদস্য প্রাক্তন ফুটবলার কৃষ্ণেন্দু রায় বলেন, আমরা হরিমোহন বাঙ্গুরের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। চুক্তি নিয়ে কথা বলব বা চাপ দেব সেটা কেউই বলিনি। তাও তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করলেন না। জানি না, গোটা প্রক্রিয়ায় থাকা কারও থেকে কিছু আগাম জেনে তিনি বিভ্রান্ত হয়েছেন কিনা। তবে আমরা চাই ইস্টবেঙ্গল খেলুক। আর অনেকে যে আমাদের অসম্মানের কথা বলছেন সেটা ঠিক নয়। নামি প্রাক্তন ফুটবলাররা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি যে আচরণ করলেন তাতে তিনি বোধ হয় এভাবেই সম্মান প্রদর্শন করলেন। আলোচনা না হওয়ায় তাই আমরাও 'সম্মানিত'।