সুভাষ স্মরণে ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে চাঁদের হাট, সময় থমকিয়ে ফিরল অতীতের সোনালি অধ্যায়
সুভাষ স্মরণে ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে চাঁদের হাট, সময় থমকিয়ে ফিরল অতীতের সোনালি অধ্যায়
দেশের হাজার হাজার ফুটবলপ্রেমীকে কাঁদিয়ে বিদায় নিয়েছেন সুভাষ ভৌমিক। ২২ জানুয়ারি ময়দানকে অভিভাবকহীন করে পারি দিয়েছেন পরলোকে। ভোম্বলদার প্রয়াণ এখনও মেনে নিতে পারেনি ভারতীয় ফুবলের অনুগামীরা। শুধু সমর্থক বা ক্লাবকর্তারাই নন, প্রবাদপ্রতীম এই কোচ ফুটবলারের প্রয়াণে মর্মাহত তাঁর সতীর্থ এবং ছাত্ররাও।
সুভাষ ভৌমিকের নামটির সঙ্গে একই সঙ্গে উচ্চারিত হয় ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের নাম। খেলোয়াড় জীবনে এবং কোচ হিসেবে একাধিকবার মোহনবাগানের সঙ্গে যুক্ত হলেও ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে এবং প্রশিক্ষণ হিসেবে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছিলেন সুভাষ ভৌমিক।
আশিয়ান জয়ী কোচের স্মৃতির উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার তাঁবুতে স্মরণসভার আয়োজন করেছিল ইস্টবেঙ্গল ক্লাব। প্রয়াত ফুটবল নক্ষত্রকে সম্মান জানাতে এ দিন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে উপস্থিত হয়েছিলেন সুভাষের সতীর্থ, শিষ্য থেকে শুরু করে অগুনিত ফুটবলপ্রেমী। উপস্থিত ছিলেন সঙ্গীত শিল্পী রুপঙ্কর বাগচিও। চোখের জলে এবং সুরের মূর্ছনায় সুভাষের স্মরণ সভা পালিত হল।
তাঁর সতীর্থদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সমরেশ চৌধুরি, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। বয়সের কারণে বহু সতীর্থ আসতে না পারলেও উপস্থিত ছিলেন সুভাষের কোচিং-এ খেলা তাঁর বহু ছাত্র। সুভাষের আশিয়ান জয়ী দলের ফুটবলারদের মধ্যে এ দিন ক্লাব তাঁবুতে উপস্থিত ছিলেন দেবজিৎ ঘোষ, ষষ্ঠী দুলে, অ্যালভিটো ডি কুনহা, মুথাইয়া সুরেশ, বিজেন সিং। ভিডিও বার্তায় কোচের প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করেছেন আশিয়ান জয়ী অধিনায়ক সুলে মুসা, মাইক ওকরো, বাইচুং ভুটিয়া'র মতো তারকারা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন গোলরক্ষক রজত ঘোষ দস্তিদার, আইএম বিজয়ন, মাধব দাস।
ক্রীড়া প্রশাষকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সচিব কল্যাণ মজুমদার, সভাপতি প্রণব দাসগুপ্ত, প্রাক্তন সহ সচিব শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত, সর্ব ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সিনিয়ার সহ সভাপতি সুব্রত দত্ত, প্রাক্তন ফুটবলার তথা মোহনবাগান ক্লাবের সহ সচিব সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
এ দিনের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানে প্রত্যেকেই স্মৃতির পাতা উল্টে সুভাষ ভৌমিকের সঙ্গে জড়িত নিজেদের জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তের কথা তুলে ধরেন। মনে হচ্ছিল ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে প্রকৃতির নিয়মকে ফাঁকি দিয়ে থমকে গিয়েছিল সময়। অতীতের সোনালি অধ্যায়গুলি বায়োস্কপের মতো চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে।
এই দিনের অনুষ্ঠানে লাল-হলুদ ক্লাব তাঁবুতে উপস্থিত হয়েছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম এবং সাংসদ দেবাশিস কুমরা। সুভাষ ভৌমিকেরস্মরণসভায় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় কলকাতা পুরসভা একটি উদ্যানের নামকরণ করবে সুভাষ ভৌমিকের নামে। ২০১৩ সালে প্রবাদপ্রতীম এই ফুটবল ব্যক্তিত্বকে 'ক্রীড়াগুরু' সম্মানে ভূষিত করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
এই স্মরণসভায় ইস্টবেঙ্গল ফুটবল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রয়াত ফুটবলারের স্ত্রী শুক্লা ভৌমিকের হাতে তুলে দেওয়া হয় পাঁচ লক্ষ্য টাকার চেক। এছাড়া এদিন সুভাষ স্মারক তুলে দেওয়া হয় সঙ্গীতশিল্পী রুপঙ্কর বাগচী, পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, ক্রিকেটর সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে।
ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে ফুটবলার হিসেবে কলকাতা লিগ, আইএফএ শিল্ড, রোভার্স কাপ, ডিসিএম ট্রফি জিতেছেন সুভাষ। কোচ সুভাষ ভৌমিকের হাত ধরে এসেছে আশিয়ান কাপ। ইস্টবেঙ্গল তথা ভারতীয় ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে যা অনন্য। এছাড়াও জিতেছেন জাতীয় লিগ, কলকাতা লিগ, আইএফএ শিল্ড, ডুরান্ড কাপ, সুপার কাপ এবং সান মিগুয়েল আন্তর্জাতিক কাপ।