ডার্বি-যুদ্ধে মায়ের একটা ফোনই আশীর্বাদ হয়ে ঝরে পড়ছিল, তবু কেন খেদ ডিকার
সব তুচ্ছ তাঁর কাছে। ডার্বির নায়ক ডিপান্ডা ডিকা পরিতৃপ্ত মায়ের কথা রাখতে পেরেই। একটু খেদ যদিও রয়ে গিয়েছে। মা বলেছিলেন- ‘জবাব দিতে হবে হ্যাটট্রিক করে।’
মুখে অদ্ভুত এক তৃপ্তি। তাঁর জোড়া গোলেই ডার্বি জয় হাসিল হয়েছে। পালতোলা নৌকার নাবিক হয়ে প্রায় ডুবন্ত অবস্থা থেকে দলকে তুলে ধরেছেন। তারপর কেরিয়ারের সেরা গোলও এসেছে এই ডার্বিতেই। তবু এসব তুচ্ছ তাঁর কাছে। ডার্বির নায়ক ডিপান্ডা ডিকা পরিতৃপ্ত মায়ের কথা রাখতে পেরেই। একটু খেদ যদিও রয়ে গিয়েছে। মা বলেছিলেন- 'জবাব দিতে হবে হ্যাটট্রিক করে।' কিন্তু সুযোগ পেয়েও তিনি হাতছাড়া করেছেন। সেই খেদ নিয়েই তিনি জানালেন- 'মায়ের আশীর্বাদেই এই অসম্ভব সম্ভব হয়েছে।'
সত্যিই বাগানের অতি বড় সমর্থকও বিশ্বাস করেননি যে, এভাবেও ফিরে আসা যায়। ফিরে আসা যায় ডার্বি-যুদ্ধে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে পর্যুদস্ত করে। শুধু কি ফিরে আসা মোহনবাগানের, ফিরে আসা যে প্রায় বাতিল এক তারকার। আর সেই ফিরে আসার পিছনে অদৃশ্য হাত এক মায়ের। মায়ের আশীর্বাদেই আবার তারকার মর্যাদা ফিরে পাওয়া ডিকার।
কত দ্রুত বদলে যেতে পারে জীবন! একটা দিন আগেও তাঁকে বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছিল বাগান জনতা। সনি নর্ডির না থাকা নিয়ে যত কালী খরচ হয়েছিল, তার সিকিভাগও লেখা হয়নি গত আই লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতাকে নিয়ে। তিনি যে প্রচারের আড়ালে থেকে নিজে শক্তি সঞ্চয় করেছেন, তা কি কেউ জানতে পেরেছিল? পারেনি।
এখন তিনি নিজেই জানালেন- এভাবে ফিরে আসার পিছনে কোন জাদু কাজ করেছে। কোন জাদুকাঠির স্পর্শে নিমেষে বদলে গিয়েছে সবকিছু। মায়ের আশীর্বাদের যে কত শক্তি, তা দেখিয়ে দিয়েছেন ডিকা। তিনি খুব খুশি মায়ের কথা রাখতে পেরে। মা বলেছিলেন- 'ডার্বিতে তোর কাছ থেকে হ্যাটট্রিক চাই। মায়ের এই কথাই তাঁকে ডার্বির আগে মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছিল। তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন, তিনি গোল করবেনই। আর গোল করে স্মরণীয় করে রাখবেন এই ডার্বি-যুদ্ধকে।'
তিনি মায়ের বিশ্বাসকে মর্যাদা দিয়ে নিজের দলকে আবার আই লিগের লড়াইয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন। সতীর্থ ক্রোমার পর ছাঁটাইয়ের তালিকায় তাঁর নাম ছিল সর্বাগ্রে। খাঁড়া ঝুলছিল- এই ম্যাচ ব্যর্থ হলেই, চলে যেতে হবে বাতিলের তালিকায়। কিন্তু সেই ম্যাচই তাঁকে কলকাতা ময়দানে পুনঃপ্রতিষ্ঠা দিয়ে গেল।
ডিকা বলেন, 'মায়ের ওই কথার পরই ঠিক করে ফেলেছিলাম, এই ডার্বিকেই জীবনের সেরা ম্যাচ হিসেবে খেলব। নিজেকে প্রমাণ করব। মায়ের কথাতেই গোল করার জন্য ক্ষুধার্থ ছিলাম।' তাই হয়তো অতিমানবীয় ওই ভলি বেরিয়ে এসেছিল তাঁর পা থেকে, যা ডার্বিতে বিশ্বমানের গোলের মর্যাদা পাচ্ছে। ইব্রাহোমিভিচের গোলের সঙ্গে তাঁর গোলের তুলনা হচ্ছে!
ডিকার কথায়, 'প্রথম মিনিটেই মায়ের আশীর্বাদ গোল হয়ে ঝরে পড়তেই, আমার আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ি গিয়েছিল। মরিয়া হয়েচিলাম আরও গোল করার জন্য। ভগবান সেই সুযোগ দিয়েছে। আর হ্যাটট্রিকের সুযোগও এনে দিয়েছিল। কিন্তু নিজের দোষেই তা হাতছাড়া করেছি। হ্যাটট্রিক করতে পারলে সবথেকে খুশি হতেন আমার মা। মাকে সেই খুশি দিতে পারলাম না, তাই সেই খেদ রয়ে গেল। মা যে বলেছিল- ডাউটা, ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করতে হবে।' ডিকাকে তাঁর মা ডাউটা বলে ডাকেন। রবিবার সকালে মায়ের ফোন এসেছিল ডিকার কাছে। তাই রবিবাসরীয় ডার্বি জয়ের পর প্রথমে মাকে ফোন করে খবরটা দিয়েছিলেন তাঁর ডাউটা।
মায়ের পরই এই জয়ের জন্য এবং তাঁর ভালো খেলার জন্য ধন্যবাদ দেন তাঁরই সতীর্থ সনি নর্ডিকে। ডিকায় কথায়, 'সনি মাঠে ছিল না ঠিকই। কিন্তু প্রতিটি ফুটবলারকে ও একাই চার্জড করে দিয়েছিল। যার ফল পাওয়া গিয়েছে রবিবাসরীয় ডার্বিতে। সনি মাঠে না থেকেও ছিলেন। ইস্টবেঙ্গলকে খেলতে হয়েছে মোহনবাগানের ১২ জনের বিরুদ্ধে। আর ওই দ্বাদশ খেলোয়াড় হলেন সনি নর্ডি। নর্ডি বাড়তি শক্তি জুগিয়ে গিয়েছে তাঁদের সবাইকে, পোষ্য স্নুকির মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলছিলেন ডার্বির নায়ক।