ফুটবল বিশ্বকাপ জ্বরে কাঁপছে দার্জিলিং!
ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে তুমুল উন্মাদনা দার্জিলিং-এ। বিশ্বকাপের শহর হতে চান বাসিন্দারা।
দেখলে চেনা যাচ্ছে না এটা বুয়েনস বুয়েনস এয়ারস না অন্য কোন শহর, আবার একটু পাশে তাকালেই মনে হচ্ছে যেন একটুকরো রিও ডি জেনেইরো, তার পাশেই রয়েছে লন্ডন। ঠিক এরকমই অবস্থা এখন পশ্চিমবঙ্গের উৃত্তরের পাহাড়ের রাণী দার্জিলিং-এর। ফুটবল জ্বরে কাঁপছে পাহাড়।
রাশিয়ার মাঠে বল গড়ানো শুরু হবে আগামী ১৪ জুন। কিন্তু দার্জিলিং-এ বিশ্বকাপ শুরু হয়ে গেছে তার অনেক আগে থেকেই। গত শনিবারই সারাদিন ব্যপী জমজমাট ফুটবল কার্ণিভালে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে রাস্তায় নেমেছিল গোটা দার্জিলিং। প্রিয় দলের পতাকা নিয়ে, কিংবা পতাকার রঙে মুখ রাঙিয়ে, নাচে-গানে মেতে উঠেছিল গোটা শহর। বাসিন্দারা বলছেন, আগামী একটা মাস, এ শহর ফুটবলের শহর, এ শহর বিশ্বকাপ ২০১৮ - র শহর।
শনিবার, দার্জিলিং-এর প্রাণকেন্দ্র চৌরাস্তা থেকে শুরু হয় ফুটবল মিছিল। এতদিন শহর কেবল গোর্খাল্যান্ডের দাবি দাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক নিছিল দেখেছে। তার থেকে মেজাজে উৎসাহে অনেকটাই আলাদা ছিল এই মিছিল। মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন অভিজ্ঞ ফুটবলার নির্মল ছেত্রী। তাঁর সঙ্গেই ছিল পার্বত্য শহরটির বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। তাদের হাতে ছিল প্রিয় ফুটবলারদের পোস্টার, প্রিয় দলের পতাকা। শহরের দেওয়াল গুলো সেজে উঠেছে ফুটবল গ্রাফিতি ও ফুচবল স্লোগানে। মিছিল যায় নেহেরু রোড ধরে। ক্রমশ স্থানীয় ও দেশী-বিদেশী পর্যটকদের যোগদানে বহরে বেড়েছে এই মিছিল।
লাউড স্পিকারে বেজেছে ফুটবল সংক্রান্ত গান, আর তার তালে তালে কোমড় দুলিয়েছেন দার্জিলিং-এর সব স্তরের জনগন। হাত ধরে টেনে সেই নাচে তাঁরা টেনে এনেছেন পর্যটকদেরও। রঙিন ফুটবল বিলবোর্ডের প্রেক্ষাপটে গোটা শহরই উফসবের চেহারা নিয়েছে। শংকর ফাউন্ডেশনের গ্যারেজ সেল, এডিথ উইলকিন্স-এর পথশিশুদের নৃত্য অনুষ্ঠান; কার্শিয়াং থেকে সাইকেল ও স্কুটি র্যালি, মাউন্টেইন বাইক র্যালি, বিএমএক্স স্টান্ট; কসপ্লে, বি- বোয়িং, ফেস পেইন্টিং, নেইল আর্ট, হেয়ার ডু, মিউজিকাল পারফরমেন্স, বীট বক্সিং - ফুটবল উন্মাদনাকে চরমে তুলতে আয়োজনের ত্রুটি ছিল না।
দার্জিলিং থেকে কার্শিয়ং এবং তারপর আবার কার্শিয়ং থেকে দার্জিলিং বাইক র্যালি, ছিল আকর্ষণের কেন্দ্রে। স্কুটি নিয়ে বহু মহিলাকেও সেই র্যালিতে অংশ নিতে দেখা গিয়েছে। মাউন্টেন বাইকাররাও এই র্যালিতে ছিলেন। এমনকী সমতল থেকে এসেছিলেন শিলিগুড়ির সুপার বাইক ক্লাব - এসেস'এর সদস্যরাও।
ফুটবল মিছিলে ছিল হিল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী আশাও। ছোট থেকে সে শুনেছে দার্জিলিং দেশের সবচেয়ে নিরাপদ, সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ এবং কসমোপলিটন সংস্কৃতির শহর। কিন্তু তার ছোট্ট জীবনে সেই দার্জিলিংকে দেখেনি সে। সমাবেশ, শ্লোগান, শোরগোল ও বন্ধ ছিল দৈনিক ঘটনা। সেদিক থেকে শনিবারের দৃশ্যগুলো তাঁর কাছে অনেকটাই অন্যরকম ঠেকেছে। সে বলেছে, আজকের দিনটা একেবারে অন্যরকম। আশা করি এবার থেকে এই দার্জিলিংকেই আমরা দেখব। আয়োজকরা জানাচ্ছেন শুধু ফুটবল নয়, একে কেন্দ্র করে দার্জিলিং-এর আসল স্পিরিটটাকেও তুলে ধরতে চান তাঁরা। ফেরাতে চান পাহাড়ের গৌরবময় ফুটবলের দিনগুলিকেও। ফেরাতে চান বিখ্যাত গোর্খা গোল্ড কাপ টুর্ণামেন্টও।
তবে দার্জিলিং যে ইতিমধ্যেই ফুটবল বিশ্বে বিশ্বকাপ ২০১৮-র শহরের পরিচিতি পাচ্ছে তা বোঝা যায় ব্রিটিশ পর্যটক নেইলের কথায়। ভারতের এই পাহাড়ি শহরে বেড়াতে এসে ফুটবল কার্ণিভাল পাবেন তা স্বপ্নেও আশা করেননি। যটতা পেরেছেন ধরে রেখেছেন ক্যামেরায়। তিনি জানান, 'ইংল্যান্ড তো বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দেশ। কিন্তু আমাদের দেশেও এখনও ফুটবল বিশঅবকাপ নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়নি। বিশ্বে রাশিয়া ছাড়া আর কোথাও হয়েছে বলে মনে হয় না। এদিক থেকে দার্জিলিং সবাইকে হারিয়ে দিয়েছে। তবে দেখে ভালো লাগছে, এখানেও ইংল্যান্ডের এত সমর্থক আছেন।' নেইল যেটা জানেন না, এই দার্জিলিংবাসীর অনেকেই টিভিতে নিয়মিত ইপিএল দেখেন। রহিম স্টার্লিং, হ্যারি কেন রা তাঁদের ঘরের ছেলের মতোই।