খেলা হবে দিবসে ভারতের চেয়ে আলাদা বাংলা! মমতা সরকারের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনায় বিজেপি
খেলা হবে দিবসের তারিখ নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই আরও এক বিতর্ক! সাংবাদিক সম্মেলনে তাই বেশ কিছু বাউন্সারের মুখেও পড়তে হল রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে। প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বেশ নাজেহাল হলেন, কখনও বা সাহায্য চাইলেন আইএফএ ও এআইএফএফের। তবে ইতিহাসে প্রথমবার বাংলা বনাম ভারত ম্যাচ আয়োজনকে ঘিরে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। খেলা হবে দিবসে প্রদর্শনী ম্যাচ ঘিরে আপত্তি না থাকলেও দুই দলের নাম বদল চাইছে রাজ্য বিজেপি। ফুটবলপ্রেমী দিবসে খেলা হবে দিবসের মাধ্যমে রাজনীতির রং যে লাগছে তা স্পষ্ট অরূপ বিশ্বাসের কথায়। আবার তৃণমূলের দাবি মতো দুটি যে এক নয় সেটাও স্পষ্ট হয়েছে, যখন ক্রীড়ামন্ত্রী বলেন ফুটবলপ্রেমী দিবসে প্রতিবারের মতো এবারও রক্তদান শিবির হবে। সবমিলিয়ে বিতর্ক সঙ্গী করেই আসছে খেলা হবে দিবস।
অরূপের ঘোষণা
নব মহাকরণে আজ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন রাজ্যের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণমমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। সঙ্গে ছিলেন দফতরের প্রতিমন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি, এআইএফএফ সহ সভাপতি সুব্রত দত্ত, আইএফএ সভাপতি অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়, সচিব জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। অরূপ বিশ্বাস বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সারা রাজ্যে খেলা হবে দিবস পালনের ঘোষণা করেছেন। বাংলায় খেলা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২১৪ গোল দিয়েছেন। এবার সারা ভারতজুড়ে খেলা হবে। ১৬ অগাস্ট খেলা হবে দিবস পালিত হবে গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ত্রিপুরা, কেরল-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যেও। দেশের অন্য রাজ্য বাংলাকে দেখে শিখছে। আমরা সেদিনের লক্ষ্যে এগোচ্ছি যেদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৫০০ গোল করবেন।
খেলা হবে দিবসে
অরূপ বিশ্বাস এরপর জানান, রাজ্যের ৩৪৩টি ব্লক, ১১৭টি পুরসভা, ৬টি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন, কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ড, ২৩টি জেলা সদর, জিটিএ, আইএফএ অনুমোদিত ৩০৯টি ক্লাব-সহ ৯৪২টি ইউনিট বাংলার সর্বত্র খেলাধুলোর আয়োজন করবে। ফুটবলের পাশাপাশি কবাডি, ক্রিকেট-সহ সব ধরনের খেলাই হবে ওইদিন।
বাংলা বনাম ভারত
এরপরই আসে সেই বিতর্কিত ঘোষণা। যা নজিরবিহীনও বটে। ভারতের সঙ্গে বাংলার লড়াই! অরূপ বিশ্বাস বলেন, আমরা খুবই আনন্দিত খেলা হবে দিবসে এআইএফএফ ও আইএফএ বাংলা দলের সঙ্গে ভারতীয় দলের ফুটবল খেলা আয়োজন করছে। সল্টলেক স্টেডিয়ামে বাংলার সঙ্গে ভারতীয় ফুটবল দলের লড়াই হবে। উল্লেখ্য, ১৫ অগাস্ট থেকে কলকাতায় ভারতীয় ফুটবল দলের শিবির আয়োজন হচ্ছে। যদিও এই ম্যাচের ঘোষণা আগে করা হয়নি। এআইএফএফের তরফে এদিনও এই প্রদর্শনী সংক্রান্ত ঘোষণা করা হয়নি। অরূপ বিশ্বাস জানান, দুই দলকেই ট্রফি দেওয়া হবে। ৩০ মিনিট করে খেলা হবে, মাঝে বিরতি ১৫ মিনিটের। সুনীল ছেত্রী-সহ যাঁরা এএফসি কাপ খেলছেন তাঁরা ছাড়া ভারতীয় দলের সকলেই খেলা হবে দিবসের প্রদর্শনী ম্যাচে খেলবেন। দলের কোচ রঞ্জন ভট্টাচার্য। গোকিপার কোচ তপন কর্মকার। সারা বাংলাকে দেখে ভারত শিখছে। বাংলা পথ দেখাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যাকে সামনে রেখে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এরপর ৫০০-০ গোলে জিতবেন।
ভারতজুড়ে খেলা হবে
ভারতের সঙ্গে বাংলা কেন, কোনও রাজ্যের খেলাও হয়নি। তাই ভারত বনাম বাংলার লড়াই ফুটবল মাঠে প্রদর্শনী ম্যাচে হলেও অরূপ বিশ্বাসের কথাতেই রাজনীতির গন্ধ রয়েছে। ১৬ অগাস্ট প্রতি বছর পালিত হয় ফুটবলপ্রেমী দিবস। ফুটবলপ্রেমী দিবসে তবে কি মিশছে রাজনীতির রং? এই প্রশ্নের উত্তরে অরূপ বিশ্বাস বলেন, রাজনীতির ঊর্ধ্বে কেউই নন। খেলা হবে সারা ভারতজুড়ে। নেতৃত্ব দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোভিড পরিস্থিতিতে প্রদর্শনী ম্যাচ হবে দর্শকশূন্য যুবভারতীতে। তাহলে কীভাবে রাজ্যজুড়ে করোনা বিধিনিষেধের মধ্যে খেলা হবে? ক্রীড়ামন্ত্রীর সাফাই, এভাবেই জীবনের গতি এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সবটাই কোভিড বিধি মেনে হবে। অরূপ বিশ্বাস এমন দাবি করলেও খেলার মাঠে বাস্তবে তা কতটা সম্ভব তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।
করোনা-বিধি নিয়ে প্রশ্ন
ভারতীয় দলের ফুটবলারদের সঙ্গে করোনা আবহে বাংলার ফুটবলাররাই বা কীভাবে হঠাৎ করে খেলবেন সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বিশেষ করে বাংলার ফুটবলাররা যেখানে জৈব সুরক্ষা বলয়ে নেই। অথচ ভারতীয় দলের শিবির হওয়ার কথা জৈব সুরক্ষা বলয়ে। এই অবস্থায় এমন ম্যাচ আয়োজন কীভাবে সম্ভব তার সদুত্তর ছিল না অরূপ বিশ্বাসের কাছে। তাঁর ঢাল হয়ে উত্তর দিতে এগিয়ে আসেন সুব্রত দত্ত ও জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। তাঁদের কথায়, আমরা ভারতীয় দলের কাছে জানতে চেয়েছিলাম প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের ব্যাপারে। দলের তরফে জানানো হয়েছে সকলের দুটি করে ভ্যাকসিনের ডোজ থাকলেই হবে। এ ছাড়া ম্যাচের আগে নিয়মিত সকলের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে।
বিজেপির সমালোচনা
বিজেপি খেলা হবে দিবসের দিন পরিবর্তনের দাবি জানালেও তাতে কর্ণপাত করছে না রাজ্য সরকার। অরূপ বিশ্বাস এদিন বলেন, ইলেকশনের আগে তো অনেক কথা যাঁরা বলেছিলেন, তাঁদের তো দেখাই যাচ্ছে না। টিভিতে না বসে রাস্তায় নামুন। যদিও বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার খেলা হবে দিবসে বাংলা বনাম ভারতের লড়াই প্রসঙ্গে বলেন, ফুটবল প্রীতি ম্যাচ হতেই পারে। তবে দলের নামকরণ মুখ্যমন্ত্রী একাদশ রাখলে সমস্যা ছিল না। বাংলার সঙ্গে ভারতের কনটেস্ট রাজনীতির ক্ষেত্রে দেখতে হচ্ছে। এবার তা খেলার মধ্যে নিয়ে আসলে সাধারণ মানুষ অশনি সঙ্কেত দেখবেন।
নামকরণ নিয়ে প্রশ্ন
কলকাতার দুই প্রধান, মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের পাশাপাশি ভারতীয় দলের প্রাক্তন গোলকিপার তথা বিজেপি নেতা কল্যাণ চৌবে বলেন, বাংলার সঙ্গে ভারতের খেলা এমনটা আগে কখনও শুনিনি। অন্য কোনও রাজ্যের হয়েও এমনটা হয়েছে বলে জানি না। একটা রাজ্য কি দেশের বিরুদ্ধে খেলতে পারে? সেটা কি অসম নয়? রাজ্যের সঙ্গে রাজ্যের খেলা হতে পারে। আসলে আমরা বারবার দেখছি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাকে বারবার ভারতের চেয়ে আলাদা করে তুলে ধরতে চান। কেন্দ্রীয় আইন বাংলায় না মানা, দেশের প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হেলিকপ্টার আসার অনুমতি না দেওয়ার মধ্যে দিয়ে। বাংলায় যেন আলাদা সংবিধান, আলাদা আইন, আলাদা রাষ্ট্র। বিজেপি বারবার বলে আসছে রাজ্যের নাম থেকে পশ্চিম শব্দটি হঠিয়ে বাংলা করার জন্য সরকারের উদ্দেশ্য হল ইতিহাসটাকে ভুলিয়ে দেওয়ারই চেষ্টা। কেন পশ্চিমবঙ্গ নাম হয়েছিল সেটা ভুলিয়ে দিতে নতুন নাম করতে আগ্রহী রাজ্য সরকার। খেলার মাঠেও যুদ্ধ হয় সমানে-সমানে। ভারত বনাম বাংলা না করে দুই দলের নাম প্রধানমন্ত্রী একাদশ ও মুখ্যমন্ত্রী একাদশ রাখা যেত। কিংবা নিদেনপক্ষে এআইএফএফ একাদশ ও আইএফএ একাদশ। ভারতের সঙ্গে বাংলার লড়াই কখনও হয় নাকি?