দেখে বোঝার উপায় নেই আর্জেন্তিনা না বাংলা, মেসি ভক্তের কীর্তি অবাক করবে আপনাকেও
বিশ্বকাপ শুরু আগে উত্তর ২৪ পরগনার নবাবগঞ্জের বাসিন্দা এবং আর্জেন্তিনার অন্ধভক্ত শিবশঙ্কর পাত্র নিজের বাড়ি রঙ করলেন নীল-সাদা রঙে। মেসি অন্তপ্রাণ শিবশঙ্কর বাবুর কোনও নেশা করেন না।
ভারতীয় ফুটবলের রঙ্গমঞ্চে ডার্বি এলে যেমন দু'ভাগে ভাগ হয়ে যায় গোটা বাংলা এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাঙালি ফুটবলপ্রেমীরা, তেমনই বিশ্বকাপ এলেও দেখা যায় একই দৃশ্য। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের বদলে তখন লড়াইটা চলে দুই লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল এবং আর্জেন্তিনাকে ঘিরে।
কয়েক শতাংশ লোক স্পেন, জার্মানি বা উরুগুয়ে সহ বিভিন্ন দেশের সমর্থন করলেও অধিকাংশ মানুষের সমর্থন থাকে ব্রাজিল বা আর্জেন্তিনা, এই দুই দলের কোনও একটির উপর।
বিশ্বকাপ শুরু কয়েক দিন আগে সেই দৃশ্যই ধরা পড়ল উত্তর ২৪ পরগনার নবাবগঞ্জে। প্রিয় দল আর্জেন্তিনার সমর্থনে এই অঞ্চলের নিবাসী শিবশঙ্কর পাত্র যে উদ্দ্যোগ নিয়েছেন তা অনেকে কল্পনাও করতে পারে না। মেসিদের সমর্থনে বড় বড় পোস্টার টাঙানো বা দু'তলা-তিন তালা সমান পতাকা পাড়ার মোড়ে মোড়ে লাগানোর চল আছে বহু দিনের। এর জন্য যথা সম্ভব খরচ করেন সমর্থকো। কিন্তু আর্জেন্তিনা অন্তপ্রাণ শিবশঙ্কর বাবু যা করলেন তা মনে থাকবে বহু বছর ফুটবলপ্রেমীদের। বিশেষ করে যাঁরা আর্জেন্তিনার সমর্থক তাঁদের।
পেশায় চা বিক্রেতা শিবশঙ্কর পাত্রের স্বপ্ন ছিল ২০১৮ ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপে রাশিয়ায় উড়ে গিয়ে গিয়ে গ্যালারি থেকে মেসিদের খেলা দেখবেন। তার জন্য মোট ৬০ হাজার টাকাও জমান তিনি। কিন্তু এক ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তারা শিবশঙ্কর বাবুকে জানিয়ে দেন যে পরিমাণ টাকা তিনি রাশিয়ায় গিয়ে খেলা দেখার জন্য সঞ্চয় করেছেন তা রাশিয়ায় তাঁর স্বপ্নপূরণ করার জন্য যথেষ্ট নয়।
এর পরেই হতাশ শিবশঙ্কর বাবু ঠিক করেন নিজের জমানো টাকা দিয়ে সারা বাড়ি তিনি রং করবেন, এবং সেই রং হবে আর্জেন্তিনার পতাকার রং। অর্থাৎ নীল-সাদা রঙে।
তিনি বলেন, 'আমি সিগারেটে আশক্ত নই এবং মদও ছুঁয়ে দেখিনা। আমার একটাই নেশা এবং তা হল মেসি এবং আর্জেন্তিনা। আমি বেশি রোজগার করি না, কিন্তু যতটা করি তার অধিকাংশটাই আমি জমিয়ে রাখি আর্জেন্তিনার জন্য।'
শুধু শিবশঙ্কর বাবু একাই নন, আর্জেন্তিনা এবং মেসিকে নিয়ে সমান উত্তেজনা এবং উন্মাদনা রয়েছে তাঁর স্ত্রী এবং তাঁর ছেলে-মেয়েদের। শিবশঙ্কর বাবুর ছেলের বয়স দশ বছর এবং মেয়ের বয়স কুড়ি বছর। তিনি বলেন, 'আমার ছেলে-মেয়ে মেসির সম্পর্কে সব কিছু জানে। ও কী খেলে ভালবাসে, কোন গাড়ি চালায় -সবকিছুই। তাঁর স্ত্রী স্বপ্না পাত্র বলেন, 'মেসির একটা ম্যাচও ওরা ছাড়ে না। যদি পরীক্ষার সময়েও গভীর রাতে মেসির ম্যাচ থাকে, তাহলে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়বে কিন্তু রাতে নিজেদের মোবাইলে ম্যাচ লাইভ দেখবে।'