দেশকে উচ্ছন্নে পাঠিয়ে অবসরের ঘোষণা জিম্বাবোয়ের ৯২ বছরের রাষ্ট্রপতি মুগাবের
যদিও তাঁর দল জানু-পিএফ জানিয়েছে মুগাবে ২০১৮ সালের নির্বাচনেও লড়বেন এবং ক্ষমতায় থাকবেন ৯৯ বছর বয়স পর্যন্ত!
অবশেষে অবসর নিলেন জিম্বাবোয়ের স্বৈরাচারী শাসক রবার্ট মুগাবে। ১৯৮৭ সাল থেকে একটানা ক্ষমতায় থাকা জিম্বাবোয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন পেট্রিয়টিক ফ্রন্ট বা সংক্ষেপে জানু-পিএফ-এর এই নেতার এই আকস্মিক ঘোষণায় আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্তের এই দেশটিতে আলোড়ন পড়ে যায়।
বিরানব্বই বছরের মুগাবে বরাবরই বলে এসেছেন যে তিনি আমৃত্যু ক্ষমতায় থাকবেন। কিনতু গত সপ্তাহে তাঁকে বলতে শোনা যায় যে জিম্বাবোয়ের আর্থিক অবস্থা বেশ খারাপ এবং তাঁর এখন অবসর নেওয়াই উচিত। সম্প্রতি মুগাবের একসময়কার একনিষ্ঠ সমর্থক সেদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা তাঁর উপরে প্রচন্ড চটেছেন আর্থিক এবং অন্যান্য কারণে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভের মুখে পড়েই মুগাবের এই ঘোষণা।
তবে স্বৈরাচারীরা মুখে অনেক কথা বললেও কাজে তা কতটা করে দেখান তা নিয়ে সন্দেহ থাকে। তাঁর জানু-পিএফ-এর তরফ থেকে বলা হয়েছে যে ২০১৮ সালে জিম্বাবোয়ের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও মুগাবে দাঁড়াবেন এবং জিতলে আরও পাঁচ বছর তিনি ক্ষমতা ভোগ করবেন। অর্থাৎ, ২০২৩ সালে জিম্বাবোয়ের শ্বেতাঙ্গ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামী মুগাবে যখন প্রকৃত অবসর নেবেন, তখন তাঁর বয়স হবে ৯৯! গত সেপ্টেম্বরে ইজরায়েলের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সিমোন পেরেজের মৃত্যুর পরে মুগাবেই এখন পৃথিবীর বয়স্কতম রাষ্ট্রপ্রধান।
মুগাবে তাঁর প্রাক্তন সমর্থক -- জিম্বাবোয়ের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বলেন তিনি ব্রিটিশ এবং আমেরিকানদের হারাতে সফল হয়েছেন। পাশাপাশি, তিনি এও স্বীকার করে নেন যে আর্থিকভাবে জিম্বাবোয়ের এখন খারাপ অবস্থা চলছে।
জিম্বাবোয়ের এই প্রবীণ নেতা প্রায়ই বলে থাকেন যে তাঁর দেশের আর্থিক গুরুত্বের এখনও সম্পূর্ণ মূল্যায়ন হয়নি। কিনতু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন কথাটি আদৌ সত্য নয়।
জিম্বাবোয়ের প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার ইএনসিএ সংবাদমাধ্যমকে হারারের এক অর্থনৈতিক বিশ্লেষক জানিয়েছেন যে জিম্বাবোয়ের একটি আঞ্চলিক গুরুত্ব কয়েক বছর আগে পর্যন্তও ছিল কিনতু এখন আর দেশটির ভবিষ্যৎ নিয়ে ন্যূনতম আশাও দেখে না।
"বিদেশি লগ্নি দূরের কথা, জিম্বাবোয়ে যে বিপুল ঋণে ডুবে রয়েছে, তা কীভাবে ফেরত দেওয়া যাবে তাই কেউ জানে না। নতুন কোনও নেতৃত্ব এলেও না," ইএনসিএ-কে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিশেষজ্ঞ। তিনি এও বলেন যে জল এবং বিদ্যুতের মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবারও বিপুল ঘাটতি জিম্বাবোয়েতে। "যার অন্য উপায় আছে, সে এখানে কেন থাকতে যাবে বলুন তো?" প্রশ্ন ওই বিশ্লেষকের।
অন্যদিকে, মুগাবে তাঁর ভাষণে বলেন যে তাঁর দলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু হলেও নির্বাচনের আগে দলের ঐক্য আবার আগের মতোই শক্ত হবে। শাসকদলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ফল কি অন্যরকম হতে পারে? বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞই মনে করেন না।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে জিম্বাবোয়ে স্বাধীন হয় ১৯৮০ সালের এপ্রিল মাসে। তখন থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকার পর রাষ্ট্রপতি হন মুগাবে। আর সেই থেকে তিনিই আছেন দেশের সর্বেসর্বা হয়ে।