বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে লগ্নি প্রস্তাবের একশো ভাগ রূপায়ণ হবে তো? সক্রিয় হোক রাজ্য
কত বিনিয়োগ হল সেটা মুখ্য নয়, মুখ্য হল, যা প্রস্তাব এসেছে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না। গত দু’বছর যে বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছিল তার মাত্র ৪০ শতাংশ বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে। বাকি ক্ষেত্রে কাজ চলছে।
সদ্য শেষ হয়েছে তৃতীয় বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এবার লগ্নি প্রস্তাব এসেছে ২ লক্ষ ৩৫ হাজার ২৯০ কোটি টাকার। এই সম্মেলনকে অত্যন্ত সফল বলে উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, রাজ্যে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। নোট বাতিল কাণ্ডে দেশজুড়ে যখন সংকট চলছে, সে সময় দাঁড়িয়ে রাজ্যে এতবড় বিনিয়োগ আসায় আমরা আনন্দিত।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কত বিনিয়োগ হল সেটা মুখ্য নয়, মুখ্য হল, যা প্রস্তাব এসেছে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না। গত দু'বছর যে বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছিল তার মাত্র ৪০ শতাংশ বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে। বাকি ক্ষেত্রে কাজ চলছে। কী কাজ, সেই কাজে কতদূর অগ্রগতি, তা অজানাই। কেন দু'বছর আগে বিনিয়োগ হওয়া লগ্নির টাকায় প্রকল্প এখনও বাস্তবায়িত হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যায়।
তবু মুখ্যমন্ত্রী যখন ফলাও করে বলেছেন, এবার ২ লক্ষ ৩৫ হাজার ২৯০ কোটি লগ্নি প্রস্তাব এসেছে, সেই টাকা কোন খাতে বিনিয়োগ হয়েছে, তা দেখে নেওয়া যাক। রাজ্যের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী উৎপাদন ও পরিকাঠামো উন্নয়নে প্রস্তাব এসেছে ৬১ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও মৎস্য শিল্পে ১০ হাজার ৬৪৯ কোটি, তথ্য প্রযুক্তি ও টেলিকমে ১৮ হাজার ৫৪০ কোটি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ৫০ হাজার ৭১০ কোটি, নগরোন্নয়নে ৪৬ হাজার ৬০০ কোটি, পরিবহনে ৩৮ হাজার ৮০১ কোটি টাকা।
বিনিয়োগ আগ্রহ দেখিয়েছে চিন। তারা চায় উৎপাদন শিল্প ও পরিকাঠামো শিল্পে কাজ করতে। নরওয়ে চায় মৎস্য ও ম্যারিটাইমে। ইতালি চায় চর্মশিল্প ও উৎপাদন ক্ষেত্রে কাজ করতে। জাপান বেছেছে মনোরেলকে। কোরিয়া কাজ করতে ইচ্ছুক গ্রিন কমিটি প্রকল্পে। পোল্যান্ড ও রোম কাজ করতে চায়।
এবারের
বিশ্ববঙ্গ
বাণিজ্য
সম্মেলনে
দেশের
শিল্পপতিদের
পাশাপাশি
বিশ্বের
২৯টা
দেশের
বাণিজ্য
প্রতিনিধিরা
যোগ
দিয়েছিলেন।
অতি
সাম্প্রতিক
ভাঙড়
কাণ্ডকে
পাশে
সরিয়ে,
রাজ্যের
জমি
বিতর্ককে
পাশ
কাটিয়ে
মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়ের
প্রয়োজন
ছিল
দেশ
বিদেশের
শিল্পপতিদের
সামনে
রাজ্যকে
তুলে
ধরা।
রাজ্য
বিনিয়োগ
চায়
এবং
লগ্নিকারীদের
সবরকম
সহযোগিতা
দিতে
প্রস্তুত-
এটা
স্পষ্ট
করে
দেওয়া।
তাতে
সফল
মুখ্যমন্ত্রী।
নানা
দেশের
২৯
জন
শিল্পপতির
উপস্থিতি
এবং
সাগ্রহে
বিনিয়োগ
প্রস্তাব
মুখ্যমন্ত্রীকে
অনেকটাই
উজ্জীবিত
করেছে।
সেই
তৃপ্তি
ধরা
পড়েছে
তার
বক্তব্যে।
মুখ্যমন্ত্রী
এই
বাণিজ্য
সম্মেলনকে
বলেছেন,
সুপার
সাকসেসফুল।
মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়ও
দেশি-বিদেশি
প্রতিনিধিদের
সামনে
তুলে
ধরলেন
রাজ্যের
শিল্পমুখী
নীতি,
একাধিক
জনকল্যাণমূলক
প্রকল্প
ও
শিল্পপতিদের
জন্য
আন্তরিকতার
বার্তা।
দু'দিনের
সম্মেলনে
মোট
১৪টি
সেশন
৪২৫টি
ব্যবসায়ী
বৈঠক
হয়েছে।
দেশি-বিদেশি
বিনিয়োগ
প্রস্তাবের
পাশাপাশি
বেশ
কয়েকটা
মউ
চুক্তি
হয়েছে।
তার
মধ্যে
পোল্যান্ড
সরকার,
ইটালির
স্যাঁপিয়েজা
বিশ্ববিদ্যালয়,কোরিয়ার
হ্যানডং
বিশ্ববিদ্যালয়,
দেশের
অ্যাডামাস,
টেকনো
গ্রুপ
রয়েছে।
আগামীদিনে
বিনিয়োগ
করতে
ইচ্ছুক
গোয়েঙ্কারা,
ফিউচার
গ্রুপ,
অ্যাপারেল,
হিরোমটোর,
এইচসিএল,
গেইল
প্রমুখ।
বিরোধীরা
অবশ্য
মুখ্যমন্ত্রীর
ঘোষণার
ঘোর
সমালোচনা
করেছেন।
তাঁদের
বক্তব্য,
বাস্তবের
সঙ্গে
মুখ্যমন্ত্রীর
হিসাবে
কোনও
মিল
নেই।
কিছু
প্রস্তাব
এসেছে
ঠিকই,
তবে
প্রস্তাবের
সঙ্গে
বাস্তব
রূপায়ণের
দূরত্ব
অনেকটাই।
ইচ্ছাপ্রকাশ
মানেই
বিনিয়োগ
নয়।
রাজ্যে
দলতন্ত্র
হঠিয়ে,
সুনির্দিষ্ট
জমি
নীতির
মাধ্যমে
সত্যি
সত্যি
বিনিয়োগ
এনে
হাজির
করতে
হবে।
তাঁদের বক্তব্য, গত দু'বছরে এমন প্রতিশ্রুতি আমরা শুনেছি। তা বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ, বছরের হিসাবে ধরলে ২০ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ টাকা বিনিয়োগ প্রস্তাব এলেও শেষ পর্যন্ত আসছে মাত্র ২০ টাকা। ৮০ টাকা আসছে না। অথচ এমনভাবে প্রচার করা হচ্ছে যেন ১০০ টাকাই চলে এসেছে। বিরোধীদের মুখবন্ধ করতে রাজ্যের উচিত শিল্পবান্ধব পরিবেশ গড়া।
ভাঙড় কাণ্ড কিন্তু জানান দিল রাজ্যে শিল্পবান্ধব পরিবেশ নেই। তাই রাজ্যকে উদ্যোগী হতে হবে। প্রথমে দালালরাজ, সিন্ডিকেট রাজ ও প্রোমোটাররাজ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পুলিশ প্রশাসনকে দলতন্ত্রমুক্ত করতে হবে। সর্বসম্মতভাবে জমিনীতি বানাতে হবে। শাসকদলের শ্রমিক ইউনিয়নের দাদাগিরি রুখতে হবে। একই সঙ্গে দরকার গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করা। রাজ্যে অস্থিরতা থাকলে তা বিনিয়োগে বাধা হয়। এসব চ্যালেঞ্জ নিতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে। না হলে বাণিজ্য সম্মেলন বৃথা যাবে।