নয়া রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প জমানায় কি পাল্টাতে পারে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের সমীকরণ?
আমেরিকাকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে এতদিনের ভারত-মার্কিন সুসম্পর্কের উপর কোনও রকম দুরত্ব আসতে পারে কি না তা নিয়ে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে ভারতে।
ওয়াশিংটন, ২১ জানুয়ারি : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহণ করার পরই ট্রাম্প ঘোষণা করে দিয়েছেন, সবার আগে আমেরিকা। অর্থাৎ আমেরিকাকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে এতদিনের ভারত-মার্কিন সুসম্পর্কের উপর কোনও রকম দুরত্ব আসতে পারে কি না তা নিয়ে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে ভারতে। যদিও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন চীনকে চাপে রাখতে মার্কিন রাষ্ট্রকে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই চলতে হবে। বরং এই সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার চেষ্টা চালানো উচিত নয়া রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের। [(ছবি) মার্কিন নির্বাচনে 'দেশি' হাওয়া, রেকর্ড গড়ে মার্কিন কংগ্রেসে যোগ দিতে চলেছেন ৫ ইন্দো-আমেরিকান]
এদিকে ট্রাম্প শুক্রবারের শপথ অনুষ্ঠানে বলেন, "নিজের দেশের ক্ষতি করে প্রতিবেশী দেশগুলিকে ধনী করা চলবে না।" চাকরির বাজারে আমেরিকাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। পাশাপাশি আমেরিকায় বিদেশি কর্মচারীদের এইচ বি - ওয়ান ভিসা দেওয়ার বিষয়ে তাঁর সরকার যে মোটেই নমনীয় হবে না তাও স্পষ্ট কথায় জানিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প।
মার্কিন মুলুকে আউটসোর্সিংয়ের একটা বিশাল বাজার রয়েছে। ভারতের মূল আশঙ্কার জায়গাগুলি হল মার্কিন দেশে ভারতীয় পেশাদারদের স্বার্থ সুরক্ষা, মার্কিন সংস্থাগুলির যদি এদেশ থেকে তুলে নেওয়া হয় সেক্ষেত্রেও সমস্যা হবে ভারতের। এছাড়াও এইচ বি- ওয়ান ভিসার বিষয়টা তো রয়েছেই। তবে, চিনের সঙ্গে পাল্লা দিতে ভারতকে পাশে চাইলে মার্কিন মুলুককে ভারতের উদ্বেগের কারণগুলি ভাঙতে হবে। লেনদেনের নীতিতে ট্রাম্প ভারতের স্বার্থ দেখলে তবেই ভারত ট্রাম্পের স্বার্থে পাশে দাঁড়াবে বলেই মনে করছেন কুটনীতি মহলের একটা বড় অংশ।
তবে শুধু ভারত নয়, মার্কিন কুটনীতিদের একাংশও মনে করছেন ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশ থেকে কম বেতনে যত পারদর্শী কর্মচারি পাওয়া যায়, মার্কিন নাগরিক নিয়োগে সমপরিমাণ কাজ করতে হলে খরচ বেড়ে যাবে অনেকটাই। তাছাড়া মেধা বা মানের প্রশ্নে ভারতীয়রা এই সব কাজেক ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে। ভারতীয় কূটনীতিকদের ধারণা, ফলে ট্রাম্প যদি জোর করে ভারতীয়দের মার্কিন চাকরি আটকাতে চায় তা তিনি পারেন, তবে মেধার দিক থেকে তা করা সম্ভব নয়।
পাশাপাশি, আউটসোর্সিং এর পথ বন্ধ করে দিলে, স্বল্পমেয়াদে মার্কিন সংস্থাগুলির খরচ একধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে যাবে। তার প্রভাব মার্কিন অর্থনীতিতেও পড়বে তা স্বাভাবিক। এদিকে এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় ভারতীয় বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক জিতে মার্কিন কংগ্রেসে এসেছেন। ফলে দুদেশের সম্পর্কে যাতে চিড় না ধরে সেক্ষেত্রে এই ৬ ইন্দো আমেরিকান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতেও পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে, ট্রাম্প পাকা ব্যবসাদার হলেও রাজনীতিতে তেমন অভিজ্ঞতা নেই। ফলে, ট্রাম্পের নীতি কি হতে পারে, কীভাবে ট্রাম্প প্রতিবেশি দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ফলে ভারতও তাড়াহুড়ো করতে চাইবে না এই পরিস্থিতিতে। প্রতি পদক্ষেপে ট্রাম্পের নীতি অনুযায়ী ভারতেরও উচিত ধীরে দেখেশুনে তবে পদক্ষেপ নেওয়া। ভারত-মার্কিন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে রাশিয়াও।