এবারেও জিতলে কি নরেন্দ্র মোদী রাষ্ট্রনায়কদের শপথগ্রহণে ডাকবেন?
দু'হাজার চোদ্দ সালের ২৬ মে যখন নরেন্দ্র মোদী প্রথমবারের জন্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন, তখন নয়াদিল্লিতে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়ক বা রাষ্ট্রনায়কদের প্রতিনিধিদের সমাগম ঘটেছিল।
দু'হাজার চোদ্দ সালের ২৬ মে যখন নরেন্দ্র মোদী প্রথমবারের জন্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন, তখন নয়াদিল্লিতে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়ক বা রাষ্ট্রনায়কদের প্রতিনিধিদের সমাগম ঘটেছিল। এমনকী, পড়শী দেশ পাকিস্তানের তখনকার প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফও এসেছিলেন নিমন্ত্রণ রক্ষায়। যদিও ইসলামাবাদের সেনা কর্তারা এই নিমন্ত্রণ ভালো চোখে দেখেননি, কিন্তু মোদীর সেই আহ্বান ফিরিয়ে দিলে তা আখেরে পাকিস্তানেরই সম্মানহানি করত। তাই তৎকালীন সেনাপ্রধান রাহিল শরিফের সঙ্গে নওয়াজের ভাই শাহবাজ দেখা করে তাঁকে বোঝান এই মোলাকাত-এর গুরুত্ব এবং নওয়াজ ভারতের মাটিতে পা রাখেন। সেবারে দক্ষিণ এশিয়ার অন্তর্ভুক্ত সার্ক গোষ্ঠীর বিভিন্ন দেশকেই মোদী ডাকেন তাঁর শপথগ্রহন অনুষ্ঠানে; লক্ষ্য ছিল বিদেশনীতির আঙিনায় এক বড়সড় ইঙ্গিত দেওয়া যে ভারত অবশেষে জাগছে।
সেই ঘটনার পরে যমুনা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হয়ে আরেকটি লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বেরোনোর মুখে। এই নির্বাচনের এক্সিট পোল জানাচ্ছে বিপুল জনাদেশ নিয়ে তখতে ফিরবেন মোদীই। আর তার পরেই জল্পনা শুরু হয়েছে তবে কি বিজেপি নেতা ফের ডাকতে চলেছেন বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়কদের, তাঁর দ্বিতীয় শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে?
এই প্রশ্নটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বিদেশি নেতাদের আমন্ত্রণ করার মধ্যে একটি আস্সাতিভা বার্তা দেওয়া যায় বিদেশনীতির ক্ষেত্রে আর মোদী সেটাই করে দেখাতে চাইছিলেন গতবার।
মনে রাখা দরকার যে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে প্রজাতন্ত্র দিবসেও মোদী আমন্ত্রণ জানান মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামাকে। চিন ও পাকিস্তানকে বিশেষ বার্তা দেওয়ার জন্যেই যে সেই পদক্ষেপ, তা বুঝতেও অসুবিধে হয় না।
কিন্তু এবারে কি মোদী সেরকম কিছু করবেন ফের?
পাকিস্তানকে ফের ডাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে
করলেও পাকিস্তানের নেতৃত্বকে ডাকার সম্ভাবনা কম। যদি প্রথম কার্যকালের আগে বা শুরুতে মোদী পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্কের উপর জোর দিয়ে থাকেন, দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এলে তাঁর অবস্থান আশা করা যায় একেবারেই উল্টোটি হবে কারণ কয়েকমাস আগেই পুলওয়ামা নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে প্রবল বাদানুবাদের পরেই মোদী নির্বাচনে যান। বালাকোটে বিমান হানার নেতৃত্বেও ছিলেন তিনিই। অতএব, পাকিস্তানের নেতৃত্বের দিকে ফের হাত বাড়িয়ে দেবেন মোদী আবার ক্ষমতায় আসলে, অন্তত শপথগ্রহণের সময়ে, এমন আশা খুব বেশি লোক করবে না।
তার চেয়ে বরং যে দু'টি দেশের নেতৃত্বের দিকে মোদীর হাত বাড়িয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা এবারে বেশি তারা হল চিন এবং ইসরায়েল।
চিনের নেতৃত্বকে ডাকলে অবাক হব না
চিনের সঙ্গে মোদী সরকারের বছর দুয়েক আগেও ডাকলাম রেষারেষি চললেও এই মুহূর্তের কথা বললে এই দুই প্রতিবেশী দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব অন্তত সমস্যা বাড়াতে চায় না। ভারত হয়তো চিনের বেল্ট এন্ড রোড প্রকল্পে এখনও ঢুকতে রাজি নয় সার্বভৌমত্ব খর্বের প্রশ্নে, কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অন্তত এই দু'টি দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বা পশ্চিমের আধিপত্যের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিকল্প তৈরী করার তাগিদে নিজেদের মধ্যে কলহ করতে চাইবে না। সম্প্রতি রাষ্ট্রসংঘে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন জয়েশ-ই-মহম্মদ-এর নেতা আজহার মাসুদের উপর থেকে চিন নিজের সমর্থন সরিয়ে নিয়েছে এবং তার জের নয়াদিল্লি ও বেইজিং-এর সম্পর্কে কিছুটা হলেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তাই সব মিলিয়ে এবারে যদি মোদী জেতেন এবং তাঁর শপথগ্রহণে দেখা যায় চিনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংকে, তবে তাতে আশ্চর্য হওয়ার বিশেষ কিছু থাকবে না।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীও পেতে পারেন আমন্ত্রণ
অন্যদিকে, ইসরায়েল-এর সঙ্গেও ভারতের এখন সম্পর্ক ভালো। ব্যক্তিগত, আদর্শগত কৌশলগত বা সামরিক সাহায্যের কারণে, ইসরায়েল-এর রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে মোদীর সম্পর্ক বেশ ভালো। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও ক্ষমতায় ফিরেছেন মাসখানেক হল এবং মোদীও ফের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করলে তিনি যে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে ফের উদ্যোগী হবেন, তাতে সন্দেহ নেই। মোদীর ভারত ইসরায়েলের সাম্প্রদায়িক গণতন্ত্রের গুণমুগ্ধ এবং দুই দেশের দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক নেতৃত্ব যে একে অপরকে পছন্দ করবে তা নিয়ে দ্বিমত নেই। ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা চায় এদেশের মাটিতেও ইসরায়েলের ধাঁচে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে উঠুক যেখানে শক্তের শাসন চলবে। অন্যদিকে, কৌশলগত দিক থেকেও ভারতের আজকে ইসরায়েলকে প্রয়োজন কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খামখেয়ালি নেতৃত্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা কঠিন তাই সন্ত্রাসবাদ ইত্যাদির প্রশ্নে ঘরের অনেক কাছে স্থিত ইসরায়েলের সহযোগিতা অনেক বেশি কাম্য।
যদি নেতানিয়াহুকেও যদি মোদীর শপথগ্রহণে (অবশ্য তিনি যদি জেতেন) দেখা যায়, তাহলেও অবাক হওয়ার বিশেষ কারণ থাকবে না।